আমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

আমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল রচনা

শরৎকাল বা শরতের হেমন্তে বাংলাদেশ

ভূমিকা ঃ 'বিশ্বকবির সোনার বাংলা নজরুলের বাংলাদেশ

জীবনানন্দের রূপসী বাংলা রূপের যে তার নেইকো শেষ।'

এ সেই আমাদের বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতুর আগমন ও বিদায় মানুষকে নতুন প্রাণশক্তিতে ভরপুর করে দেয়, তারা নতুন উদ্যমে কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঋতু-বৈচিত্র্যে বাংলাদেশে প্রকৃতির রূপের পরিবর্তন ঘটে। প্রকৃতির এ লীলাভূমিতে সোনার ফসল দিয়ে বাংলা মায়ের আঁচল ভরিয়ে দেওয়ার জন্য শরৎ ও হেমন্তের গুরুত্ব অপরিসীম।

ঋতু পরিক্রমায় শরৎ ও হেমন্ত ঃ বাংলার পল্লি প্রকৃতিকে হাসিয়ে-কাঁদিয়ে বর্ষা বিদায় গ্রহণ করলে প্রকৃতির রূপের পরিবর্তন ঘটে। আসে শরৎ। বর্ষা ধৌত, মেঘমুক্ত আকাশের সুনীল রূপকান্তি দেখেই বোঝা যায় শরৎ এসছে তার মনোহারিণী অনুভবতাড়িত এবং দৃশ্য সংবলিত অস্তিত্ব নিয়ে। শরতের এ আগমনে দেখা যায় বর্ষণ ক্ষান্ত লঘুভার মেঘ অলস-মন্থর ছন্দে নিরুদ্দেশে ভেসে চলছে। শরতের এ লঘুচালের ভ্রমণ কার্যক্রমের সমাপ্তি পর্বের রেশ নিয়ে প্রকৃতিতে আসে হেমন্ত। হেমন্ত শরতের মতো ভ্রমণ তৃষ্ণায় কাতর নয় বরং একটি স্থির, উদাস চরিত্র নিয়ে সে প্রকৃতিতে বৈরাগ্যের আবেশ ছড়িয়ে দেয়। শরতের মতো তার এ মমতার পরিচয় পাওয়া যায় ফসলভরা মাঠের দিকে তাকালে।

আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় ঋতু শীতকাল রচনা

শরৎ ও হেমন্তের রূপ ঃ শরতের প্রকৃতি যেন এক মনোহর দৃশ্যসংবলিত চিত্রপট। সেসময় চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। ঘন সবুজের স্নিগ্ধরূপে মন তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে উঠতে চায়। আর এ সবুজের শোভায় সোনালি রোদের দোল দোল খেলা প্রকৃতিকে এক বিস্ময়কর সৌন্দর্যে সাজিয়ে দেয়, এক অভিভূত অনুভূতির অভিজ্ঞতায় মন ভরে ওঠে। মেঘমুক্ত আকাশের সুনীল রূপকান্তি, আলোছায়ার লুকোচুরি, শিউলি ফুলের মন উদাস করা গন্ধ, নদীতীরে কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ শরতের প্রকৃতিকে করে তোলে সুষমামণ্ডিত। রুপালি জ্যোৎস্নার অপরূপ রথে চড়ে যেন শারদলক্ষ্মীর ঘটে মর্ত্যাবতরণ। 

সাথে সাথে চারদিকে যেন সৌন্দর্যের দরজা খুলে যায়, প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এসময় আকাশ নির্মেঘ থাকে। সোনা রং ধরে শরতের রোদ্দুরে। শরতের ভোরে ঘাসের ডগায় গাছের পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দুতে সূর্যের আলো পড়লে শিশির বিন্দুগুলোকে মুক্তোর দানার মতো চিক চিক করতে দেখা যায়। বর্ষায় যে ফসলের বীজ রোপণ করা হয়, হেমন্তে যে ফসল ঘরে তোলা হয় শরতে সে ফসলের পূর্ণতা আসতে থাকে। কৃষক তাই শরতের মাঠে তার স্বপ্নের বিস্তার দেখে পুলকিত হয়। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাথে তাল মিলিয়ে বলা যায়---

আরো পড়ুন ঃ বাদলা দিনে রচনা

শরৎ, তোমার শিশির ধোওয়া কুন্তলে

বনের পথে লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে

আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।

প্রকৃতিতে শরতের স্থায়িত্ব খুবই কম সময়ের জন্য। শরতের বিদায়ের বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে হেমন্ত এলে প্রকৃতিও হেমন্তের বৈশিষ্ট্যের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে হেমন্ত যেন ধবল কুয়াশায় মুখ ঢেকে এক নিঃসঙ্গ সাধনায় মগ্ন থাকে। সেই সাধনা তার ফসল ফলাবার সাধনা। মাঠে মাঠে ধান পাকে। শরতে মাঠে যে অপক্ব ধানের বিস্তৃতি ছিল হেমন্তে সে ধান পরিপক্বতা লাভ করে। ক্ষেতে-খামারে হেমন্তের রাশি রাশি ভারা

ভারা সোনার ধান দুলতে থাকে। হেমন্তের ভূষণ নেই, তার ফুলের বাহার নেই, রূপসজ্জায়ও নেই অফুরন্ত প্রাচুর্য। হেমন্ত মূলত শীতের আগমনী বার্তা বহন করে প্রকৃতিতে আসে। যে কারণে শীতের আমেজ হেমন্তে উপলব্ধ হয়। প্রকৃতিতে শীতের আগমনী সংকেতে এসময় পাতাঝরা শুরু হয় ।

ফসল কাটা ও উৎসবাদী ঃ হেমন্তে ফসল কাটার জোয়ার আসে চাষিদের মাঝে। সোনালি ধানের স্তূপ চাষিদের উঠোনকে ভরিয়ে তোলে। পাকা ধানের গন্ধে চাষিদের মন ভরে ওঠে আনন্দে। গাঁয়ের বধূরা তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে। উঠোনে উঠোনো তাদেরকে দেখা যায় ধান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে। ধানের এ সমারোহ হেমন্তের মমতাময়ী দান। হেমন্তে চাষিদের ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব শুরু হয়। 

আরো পড়ুন ঃ বাংলা রচনা চা

নতুন ধানের চালের পিঠাপুলি তৈরির ধুম পড়ে যায় ঘরে ঘরে। আত্মীয়-পরিবার-পরিজন বেষ্টিত হয়ে চাষিরা এসময় আনন্দে মেতে ওঠে। প্রকৃতিতে পিঠা- পুলির সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই এ উৎসবে সমান উৎসাহে মেতে ওঠে বলে হেমন্তে কৃষকদের কাছে পরম কাঙ্ক্ষিত ঋতু।

শীতের শুভাগমনে হেমন্ত ঃ হেমন্তের প্রৌঢ়ত্বের পর আসে জড়তাগ্রস্ত শীতের নির্মম বার্ধক্য। শুষ্ক কাঠিন্য ও রিক্ততার সন্ন্যাসী প্রতিমূ তিরূপে শীতের আবির্ভাব ঘটে। তার শীতল রূপমূর্তির মধ্যে প্রচ্ছন্ন রয়েছে তপস্যার কঠোর আত্মপীড়ন এবং বৈরাগ্যের ধূসর মহিমা। হেমন্তের রেখে যাওয়া ফসল কাটার দায়িত্ব শীতের ওপর অর্পিত হয়। তাই শীতের মাঝেও হেমন্তের আঁচলে প্রকৃতি ঘেরা বাংলাদেশের মানুষকে মাঝে মধ্যে আশ্রয় নিতে হয়।

উপসংহার ঃ রূপসী বাংলায় এ রকম বৈচিত্র্যময় ঋতুচক্র নানা বর্ণ-গন্ধ গানের সমারোহ নিয়ে নিত্য আবর্তিত হচ্ছে। এক ঋতু যায়, আর এক ঋতু আসে। বাংলাদেশের সুন্দর প্রকৃতির রূপসাগরে লাগে ঢেউ। এ ঢেউয়ে শরৎ-হেমন্ত তার রূপবৈচিত্র্যের বৈশিষ্ট্য নিয়ে কবি-শিল্পী- সাহিত্যকের মনে দোল খেয়ে তাঁদের মননরাজ্যে সৃষ্টি করে প্রতিভা বিকাশের আকর্ষণীয় মধুময় মাহেন্দ্রক্ষণ। এ দুই ঋতুর বৈচিত্র্যের সমন্বিত রূপ বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে।

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url