মহরম রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

মহরম রচনা

মহরম রচনা

ভূমিকা ঃ মহরম মুসলমানদের এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা করুণ আবহমণ্ডিত। ‘মহরম' আরবি শব্দ। এটি একটি চান্দ্রমাসের নাম। আজ থেকে তেরো শ বছর আগে এই মাসের দশ তারিখে হযরত মুহম্মদ (স)-এর দৌহিত্র হোসেনকে আরবের কারবালার প্রান্তরে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল । সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণে মহরম পালিত হয়। মহরম ধর্মপ্রিয় মানুষের হৃদয়কে কান্নায় আকুল করে তোলে। আরবের মরুভূমি পার হয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে এই অশ্রুপ্লাবী মহরম অনুষ্ঠান ।

মহরমের পটভূমি ও তাৎপর্য ঃ আরবের চতুর্থ খলিফা হযরত আলির দুই ছেলে হাসান এবং হোসেন। হযরত আলির মৃত্যুর পর চক্রান্ত করে আবু-সুফিয়ানের মুয়াবিয়া আলির বড় ছেলে হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। এরপর মুয়াবিয়া অবৈধভাবে খলিফা হন। দেশবাসী স্থির করেন, মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর হাসানের ছোট ভাই হোসেনকে খলিফা পদে বরণ করা হবে। কিন্তু মুয়াবিয়া তার চরিত্রহীন পুত্র এজিদকে খলিফা মনোনীত করে যান। এরই সূত্র ধরে শুরু হয় এজিদের সঙ্গে হোসেনর সংঘাত। 

আরো পড়ুন ঃ

হোসেন দামাস্কাস ছেড়ে মক্কা চলে যেতে বাধ্য হন। তখন রাজধানী ছিল কুফাতে । কুফার অধিবাসীরা তাদের মুক্তির জন্য হোসেনকে আমন্ত্রণ জানালেন। হোসেন সপরিবারে মক্কা থেকে কুফার পথে যাত্রা করলেন। এজিদের নির্দেশে চার হাজার সৈনিকের এক অশ্বারোহী বাহিনী কুফা থেকে পঁচিশ মাইল দূরে কারবালার প্রান্তরে মহরম মাসের প্রথম তারিখে হোসেনের গতিরোধ করল।

হোসেন এবং তাঁর পরিবারের কেউ যাতে জল না পান করতে পারে তার জন্য জল সরবরাহের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হলো। মরুভূমিতে পানিহীন অবস্থায় নয়টি দিন অতিক্রান্ত হলো। শত অনুনয়েও এজিদের সৈনিকরা এক বিন্দু পানি দিতে রাজি হলো না। ১০ মহরম সকালবেলা নিরুপায় হোসেন তাঁর পরিবারের সবাইকে নিয়ে জলের সন্ধানে বের হলেন। তিনিও তাঁর

বিশ্বস্ত বাহিনী নিয়ে প্রত্যাঘাত করলেন। সেই অসম যুদ্ধে হোসেনের ভাইপো এবং জামাতা নিহত হলেন এবং তাঁর শিশুপুত্র বাণবিদ্ধ হয়ে মারা গেল। অসম সাহসী হোসেন শত্রুব্যূহ ভেদ করে ফোরাতের কূলে এসে উপস্থিত হলেন। পানি পান করতে গিয়ে তিনি অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন। মনে পড়ল তাঁর তৃষ্ণার্ত নিহত শিশুপুত্রের কথা, মনে পড়ল পরিবারের অন্য পরিজনদের কথা। এই সুযোগ শত্রুরা তাঁকে তীরবিদ্ধ করল। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। রক্তাক্ত হোসেন মৃত্যুবরণ করলেন। এই শোকের কাহিনিকে স্মরণ করে হয় মহরম অনুষ্ঠান। মহরমের কাহিনি শুনে শুধু মুসলমান নয়, যেকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের চোখই জলসিক্ত হয়ে ওঠে।

উৎসবের তাৎপর্য ঃ মহরমের অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়। প্রথমে তৈরি করা হয় একটি ঘর। এটিকে বলা হয় ইমামবাড়া। তৈরি করা হয় তাজিয়া। এই তাজিয়াকে হোসেনের সমাধির উপরে স্মৃতির প্রতীক বলে মনে করা হয়। সাত দিন ধরে ইমামবাড়ার সামনে তাজিয়াকে রেখে দেওয়া হয়। সপ্তম দিনের সন্ধ্যেবেলায় শুরু হয় শোকমিছিল। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা শোকের আবেগ প্রকাশ করতে থাকেন। বুকের উপর করাঘাত তরে তাঁরা আর্তনাদ করতে থাকেন। হাসান ও হোসেনের জন্য তাঁরা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে “হায়’“ ধ্বনি দিতে থাকেন।

আরো পড়ুন ঃ

কারবালার যুদ্ধের অনুকরণে কৃত্রিম যুদ্ধের অভিনয় করা হয়। বল্লম, লাঠি, তীর, ধনুক নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা বুক চাপড়াতে থাকেন। দশম দিনে তাজিয়াকে বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ । মহরম এবং তার আগের দিন ধার্মিক মুসলমান কিছু আগর করেন না। রাত্রে তাঁরা কোরান শরিফ পাঠ করেন। মুসলমানদের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায় অতিরিক্ত জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান সমর্থন করেন না। তাঁরা মনে করেন, শহিদদের আত্মার কল্যাণের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, নীরবতা, উপবাস ও দান-ধ্যানের মধ্যে অনুষ্ঠানকে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত ।

উপসংহার ঃ মহরম মুসলমানদের এক পবিত্র অনুষ্ঠান। হোসেন ধর্ম ও সত্য রক্ষার জন্য আকণ্ঠ তৃষ্ণা নিয়ে যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। অন্যায়, অসত্য ও অশুভের কাছে তিনি মাথা নত করেননি। এই দুর্লভ আত্মবিসর্জন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে এক অবিস্মরণীয় আদর্শ। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তিকে বিনষ্ট করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার শপথ নেওয়া হয় ।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url