আমার প্রিয় শখ বাগান করা রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
আমার প্রিয় শখ বাগান করা রচনা
ভূমিকা ঃ প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো প্রিয় শখ থাকে। এমন অনেক শখ থাকে যা মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত পরিত্যাগ করতে পারে না। শখের কাজ মানুষের প্রধান কাজ নয়। এর উপর মানুষের জীবিকা নির্ভর করে না। কর্মময় জীবনের ফাঁকে ফাঁকে আনন্দ বা তৃপ্তি পাওয়ার জন্য আমরা শখের কাজ করে থাকি।
বিভিন্ন শখের কাজ ঃ রুচি, সৌন্দর্যবোধ ও অভ্যাসের দিক থেকে পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে বেশ অমিল লক্ষ করা যায়। তাই ব্যক্তিভেদে শখের কাজ নানারকম হতে পারে। কেউ শখ করে ডাকটিকেট সংগ্রহ করে, কেউ ছবি আঁকে, কেউ বাগান করে, কেউ ঘুড়ি ওড়ায়, কেউ ছবি তোলে, কেউ মাছ ধরে, কেউ বই পড়ে এবং কেউবা আবার পত্রমিতালি করে। তবে এসব শখের কাজ অবসর সময়েই হয়। প্রধান কাজকে অবহেলা করে শখের কাজ নিয়ে পড়ে থাকলে তা জীবনের জন্য ক্ষতি ডেকে আনে।
আরো পড়ুন ঃ বই পড়ার আনন্দ প্রবন্ধ রচনা
শঙ্খের গুরুত্ব ঃ বিরামহীন কর্মমুখর জীবনে প্রতিটি মানুষেরই প্রয়োজন অবসর ও নির্মল হাসি-আনন্দ। সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাওয়া যায় শখের কাজ করার মধ্য দিয়ে। শখের কাজ নির্ধারিত কাজের বাইরে মানুষকে আলাদা আনন্দ ও উৎসাহ দেয়। কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝে আনন্দ- উৎসাহের প্রয়োজনেই মানুষ এক বা একাধিক শখের কাজ করতে পছন্দ করে। এমন অনেক শখ আছে যা মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে, তবুও মানুষ তার সেই শখ পরিত্যাগ করতে পারে না। আবার শখ করতে গিয়ে কেউ বিরাট কিছু আবিষ্কার করেছে, কেউবা অমর হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়।
আমার শখ ঃ আমি ষষ্ঠ শ্রেণির একজন ছাত্র। সেজন্য স্কুলের প্রতিদিনের পড়া তৈরি করা এবং স্কুল থেকে ফিরে এসে বিকালে কিছু সময় আমার হাতে থাকে। তাই বাগান করাকেই আমার শখের কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছি। বাগানের যত্ন নেওয়া, নতুন নতুন চারা লাগানো আমার প্রিয় শখ ।
শখের বর্ণনা ঃ ফলের বাগান ও সবজি বাগান মিলিয়ে আমার বাগানের সংখ্যা দুটি। আমার পড়ার ঘরের সামনে একটুখানি খালি জায়গায় আমি ফুলের বাগান করেছি। বাগানটি বেশ মনোরম। আমি নিজের হাতে খুব যত্ন সহকারে বাগানটি করেছি। নার্সারি থেকে রকমারি ফুলের চারা এনে লাগিয়েছি। বাগানের চারপাশে বাঁশ দিয়ে শক্ত করে বেড়া দিয়েছি। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাগানে কাজ করি। বাগানে পানি দেই, গাছের গোড়া আলগা করে দেই। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে ফের বাগানের কাজ তদারকি করি। আমরা বাগানের প্রধান আকর্ষণ গোলাপ।
টুকটুকে লাল, ফিকে লাল, সাদা, হলুদ প্রভৃতি নানা রঙের গোলাপ ফুল আছে আমার বাগানে। আমার বাগানের অন্যান্য স্থায়ী ফুলের মধ্যে গন্ধরাজ, শেফালি, বেলি, টগর, রক্তকরবী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া নানা জাতের মৌসুমি ফুল যেমন : গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, রজনীগন্ধা ইত্যাদি। প্রতি বছরই নতুন নতুন ফুলের চারা লাগাই। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের সঙ্গে গল্প করে আমি খুব আনন্দ পাই। ফুলের প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণ দেখে পাড়া-প্রতিবেশীরা আমার বেশ প্রশংসা করে। এতে আমি গৌরববোধ করি।
আমার বন্ধুরা সবাই আমার এ শখটিকে প্রশংসার চোখে দেখে। কেউ কেউ আমার সঙ্গে বাগানে কাজ করে আনন্দ পায়। আমি কাউকে ফুল ছিড়তে দিই না। তবে বিশেষ উদ্দেশ্যে যদি কেউ ফুল চায় তাহলে নিষেধ করি না। প্রতিবেশী হিন্দু বাড়ির লোকেরা পূজার জন্য মাঝে মাঝে ফুল নিতে আসে । আমি তাদেরকে সানন্দে ফুল নিতে দিই। একুশে ফেব্রুয়ারি এলে অনেকেই আমার বাগান থেকে ফুল নিয়ে যায়।
আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য রচনা
উপসংহার ঃ বাগান করার মতো শখ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। প্রতিটি গাছে যখন ফুল ফোটে এবং মৃদু বাতাসে যখন ফুলগাছগুলো আনন্দে মাথা দোলায়, তখন এক স্বর্গীয় আনন্দে মন ভরে যায়। বাগানের সজীব ফুলের সৌরভে আমার মনটিও সর্বদা সজীব থাকে। তবে বাগান করার পাশাপাশি আমার আরও দু-একটি শখ আছে। যেমন : ডাকটিকেট সংগ্রহ করা, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করা, মাছ ধরা ইত্যাদি। তবে বাগান করার মধ্যে আমি যতটা নির্মল আনন্দ পাই, অন্য কোনো কাজে ততটা আনন্দ পাই না ।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url