আমার পড়া একটি বইয়ের গল্প রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
আমার পড়া একটি বইয়ের গল্প বা আমার প্রিয় বই
সূচনা ঃ কোনো একটি বই পড়ে ভালো লেগেছে, এই কথাটি বলা কঠিন। আর তার চেয়েও কঠিন বইটি কেন ভালো লেগেছে তার কারণ নির্দেশ করা। ভালোলাগা ব্যাপারটি ব্যক্তিগত রুচির দ্বারা অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবু এ সত্যটিও অনস্বীকার্য যে, ভালো বইয়ের মধ্যে এমন একটি গুণ রয়েছে যা পাঠক মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করবেই। আমি অবসরের সঙ্গী হিসেবে বই পড়ি। বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে বই রাখার কারণে ছোটবেলা থেকেই বই পড়াটা আমার ভেতরে এক বিপুল আনন্দের সঞ্চার করেছে। ছোটবেলাতেই আমি অনেক বই পড়ে ফেলেছি যা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে।
আমার প্রিয় বই ঃ মানুষ নানা ধরনের বইপত্র থেকে আনন্দ লাভ করতে পারে। তবে আমার কাছে সেই বই-ই ভালো লাগে যা আনন্দদামের পাশাপাশি কিছু শিক্ষণীয় ব্যাপারও আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারে। আমার প্রিয় বইটির নাম 'পথের পাঁচালী'।
আরো পড়ুন ঃ আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
বই ও লেখকের পরিচিত ঃ 'পথের পাঁচালী' বাংলাসাহিত্যের আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত। বিভূতিভূষণ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। নীলাঙ্গুরীয়, উত্তরায়ণ ইত্যাদি তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। তবে তাঁর পথের পাঁচালী আমার প্রিয় বই। বাংলাদেশের পল্লির প্রকৃতির সাথে পল্লির মানুষের একসাথে গাঁথা জীবনের কৃত্রিমতাহীন দিকটি লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন এই বইয়ে। এর ভাষাশৈলী ও প্রকাশভঙ্গি নিঃসন্দেহে চিত্ত আকর্ষণ করার মতো।
বাংলা সাহিত্যে বইটির স্থান ঃ আধুনিক বাংলা সাহিত্য বহু গুণে গুণান্বিত। বাংলাসাহিত্যের বইগুলোতে রয়েছে একটি বিশেষ স্বাদ ও সৌন্দর্য। তবে 'পথের পাঁচালী'র সাহিত্য স্বাদ ও সৌন্দর্য সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এই বইয়ের সাহিত্যিক সৌন্দর্য লক্ষ করার মতো। আর তাই তো সাহিত্যে বইটির স্থান অনেক বইয়ের ওপরে। এর সাহিত্যগুণ সকলের কাছেই সমাদৃত ।
'পথের পাঁচালী'র ঘটনা বিন্যাস ঃ নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের হরিহর রায়ের কন্যা দুর্গাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে পথের পাঁচালী উপন্যাসটি। ছয় বৎসরের দুর্গা ওড়কলমী ফুলের নোলক পরতে ভালোবাসে, বনজঙ্গল ঘুরে কুল, জাম, আমড়া সংগ্রহ করতে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ গ্রামবাংলার সহজ, সরল নিষ্পাপ এক মেয়ে দুর্গা। দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে যার বেঁচে থাকা। দুর্গা গ্রামবাংলার সরলতার প্রতীক। সেই দুর্গা জ্বরের প্রকোপে মৃত্যুবরণ করে। মা সর্বজায়া ও ভাই অপুর হাহাকারকে তুচ্ছ করে ঝড়ের রাতে সে চলে যায় পরপারে। তারপর অপুকে ঘিরে আবর্তিত হয় বইটির ঘটনাবলি।
প্রিয় হওয়ার কারণ ঃ ‘পথের পাঁচালী'র মতো এত সুন্দর মানবীয় রসের বই বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি নেই। বইটিতে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তা গ্রামবাংলার চিরপরিচিত বাস্তব সংসারের রূপ। কোমলে-কঠোরে লেখক অপূর্ব করেছেন দুর্গার চরিত্র। চরিত্রটি আমার মন এতটাই ছুঁয়েছিল যে দুর্গার মৃত্যুতে আমি কান্নাকে ধরে রাখতে পারিনি। পল্লিজীবনের রহস্যময় নিষ্ঠুর সংগ্রামে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই লেখক এই বইতে অবলীলায় তুলে ধরেছেন।
আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় মানুষ আমার মা রচনা
বইটি পড়লে একদিকে যেমন পল্লির অবধারিত সৌন্দর্য আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে, তেমনি নীরব যুদ্ধে দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের সাথে মানুষের বেঁচে থাকার প্রতিটি দিক আমাদের কাছে পরিচিত হয়। সাহিত্যগুণ বিচারে বইটি সত্যিই অসাধারণ ও বিশ্বনন্দিত হওয়ার যোগ্য ।
উপসংহার ঃ ‘পথের পাঁচালী' বইটির ভাষা ও কাহিনি বিন্যাস অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত ও প্রকাশভঙ্গিতে সরল। আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি বইটি পড়লে যেকোনো মানুষের ভালো লাগবে। বইটির সকলের মন ছুঁয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আছে। আর তাই তো সময় পেলেই আমি বারবার বইটি পড়ি।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url