একটি ছুটির দিন রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

একটি ছুটির দিন রচনা

ছুটির একটি দিনে

আজকে দিনের শুরুটাই হলো অন্যরকম। সকালে ঘুম ভাঙল বাবা-মার হাসির আওয়াজে। ব্যস্ত এই শহরে প্রতিদিন সকালে স্কুল আর অফিসে যাওয়ার তাড়নায় আর হুড়োহুড়িতে সকালবেলা হাসার কথা কারো মনেই আসে না। ঘুম ভাঙতেই তাই একটা খটকা লাগল। তারপরই হঠাৎ মনে পড়ল আজ ছুটির দিন - মে দিবসের ছুটি । লাফিয়ে নামলাম বিছানা থেকে। নাশতার টেবিলে আমাকে ছাড়া বাবা-মা আসর বসাবেন তা হবে না। দ্রুত মুখ ধুয়ে টেবিলে গেলাম। বাবা-মা আমাকে দেখে একটু অবাকই হলেন। তারা ভেবেছিলেন, আমাকে আজ যত ইচ্ছা ঘুমোতে দেবেন, কিন্তু আমার আজ ঘুমিয়ে নষ্ট করার মতো সময় একেবারেই নেই। আজকের এই ছুটি কড়ায়-গণ্ডায় উপভোগ হবে।
-
গতকালই ঠিক হয়েছিল আজ ক্রিকেট খেলা হবে। নাশতা শেষ হতে না হতেই বাইরে বন্ধুদের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। ক্রিকেট খেলার জন্য ওরা আমার নাম ধরে ডাকছে। মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি হেসে অনুমতি দিলেন ‘আসছি রে। একটু দাঁড়া।' চিৎকার করে কথাটা বলে আমি দ্রুত তৈরি হয়ে বাইরে বের হলাম। আজ হলো, ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানার দিন । আজ যত ইচ্ছা খেলব। যা-ইচ্ছে করব। কোনো পড়া নেই, কোনো মানা নেই। কোনো বাধা নেই।'

আরো পড়ুন ঃ হরতালের একটি দিন রচনা

কড়া রোদে খেলা শেষ করে দুপুরে যখন ঘরে ফিরলাম তখন ময়লা আর ঘামে যেন গোসল হয়ে গিয়েছিল এবং তার চেয়েও বড় ঘটনা হলো খেলায় আমরা হেরেছি। তাতে অবশ্য আমার মনে কোনো দুঃখ নেই। খেলতে পারার আনন্দটাই আমাকে অভিভূত করে রেখেছে। প্রতিদিন বিকেলে খেলার জন্য যে ঘণ্টাখানেক সময় পাই তাতে কখনোই সাধ মেটে না। আর সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে শিক্ষকরা এত পড়া চাপিয়ে দেন যে, পড়ার চাপে অনেক সময় খেলাই হয় না। বাসার টিচার, কোচিং ক্লাস, বাড়ির কাজ করতে করতে হাতে আর সময়

 থাকে না। আজকের ছুটিটা তাই অনেক দিনের পর মন ভরে খেলার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। মা অবশ্য আমার শরীরে কাঁটা-ছেঁড়ার দাগগুলো দেখে একটু রাগ করলেন। খেলতে গিয়ে দু বার পড়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য মায়ের তো অফিস আজ ছুটি। তাই মনও আজ খুব ভালো। ফলে অল্পতেই আমায় ছেড়ে দিলেন। লম্বা একটা গোসল দিয়ে আমি যখন বেরিয়ে এলাম খিদেয় তখন আমার পেট চো চো করছে। আমি, বাবা ও মা একসাথে খেতে বসলাম। ছুটি উপলক্ষে নানা রকমের রান্না রয়েছে আজ। খাবার টেবিলে বাবা তার ছোটবেলার অনেক মজার মজার ঘটনা শোনালেন ।

ঘণ্টাখানেক না কাটতেই পাড়ার বন্ধুরা আবার আমাকে ডাকতে এলো। আমরা সবাই জড়ো হলাম গলির মোড়ে। এবার সবার মাথায় নানা ধরনের দুষ্ট বুদ্ধি মাথাচাড়া দিয়েছে। ঠিক হলো কোনো একটা বাড়ির আম গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে নুন-মরিচ দিয়ে খাওয়া হবে। আম চুরি? ধরা পড়লে নিশ্চয়ই বকা শুনতে হবে। কিন্তু সারা বছরই তো আমি ভালো ছেলে হয়েই থাকি। একদিন দুষ্টামি করতে দোষ কী? কিন্তু আম চুরি করতে গিয়ে বিকেলটায় দারুণ মজার এক অভিজ্ঞতা হলো। দেখা গেল, নানারকম দুষ্ট বুদ্ধি বের করতে পারলেও কাজের বেলায় আমরা কেউ যোগ্য বা দক্ষ নই। 

আম গাছের নিচে গিয়ে একজন আরেকজনকে গাছে ওঠার জন্য ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে বুঝলাম, গাছে ওঠার সাহস ও অভিজ্ঞতা কারো নেই। তখন আমাদের সে কী হাসাহাসি। হাসির আওয়াজে বাসার মানুষরা জেগে ওঠে আর কী! কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আম চুরির পরিকল্পনা ইস্তফা দিলাম। পাড়ার মাঠে গোল হয়ে বসে শুরু হলো চুটকি বলা, ধাঁধার আসর আর গান গাওয়ার প্রতিযোগিতা। তার সাথে চলল ঠোঙ্গার পর ঠোঙ্গা বাদাম খাওয়া। সন্ধ্যের সময় যখন বাসায় ফিরলাম তখনও আনন্দের রেশটুকু মন জুড়ে রয়েছে।

আরো পড়ুন ঃ আমার শৈশব স্মৃতি রচনা

আজকের সন্ধ্যাটা একেবারে অন্যরকম। আজ ঘরোয়া টিচার নেই। বাড়ির কাজ নেই, পড়তে বসা নেই। কীভাবে সময় কাটানো যায়? প্রথমে ভাবলাম কিছুক্ষণ টিভি দেখি। পরে মনে হলো টিভি তো প্রতিদিনই একটু না একটু দেখা হয়। তার চেয়ে বরং জমে থাকা গল্পের বই দু-একটা পড়ে ফেলা যাক। অনেকগুলো না পড়া বইয়ের ভেতর থেকে জাহানারা ইমামের 'একাত্তরের দিনগুলি' বইটা টেনে বের করালাম। পড়তে শুরু করার পর চারপাশের সব ঘটনা, টিভির আওয়াজ, বাবা-মার কথোপকথন সবকিছু থেকে আমি অনেক দূরে সেই একাত্তরে হারিয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল আমি নিজেই যেন বইয়ের একটি চরিত্র। 

চোখের সামনে সমস্ত ঘটনাগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, এমনকি মিছিলের স্লোগান, গুলির আওয়াজ সব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। বইটা পড়ে শেষ করতে রাত ১০টা বেজে গেল। বইটা আমাকে এতটাই অভিভূত করলে যে, খাবার টেবিলে আমি বাবা-মার কোনো কথায় মনোযোগ দিতে পারছিলাম না । রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি আজকের দিনটার কথা চিন্তা করলাম। স্কুলেও অনেক মজা হয়, খেলাধুলা হয়, কিন্তু তাতে কখনো মন ভরে না। আমার মনে হলো সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে যদি আমাদের শিক্ষকরা একগাদা পড়া চাপিয়ে না দিতেন, তাহলে ঐ একটি সাপ্তাহিক ছুটিই সারা সপ্তাহে আমাদের মনকে ভালো রাখার জন্য যথেষ্ট হতো।

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url