আমার দেখা একটি গ্রাম্য মেলা রচনা 3-10 | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

শিক্ষার্থী বন্ধুরা নিচে আমরা তোমাদের জন্য একটি গ্রাম্য মেলা রচনাটি শেয়ার করেছি। তোমরা যারা যারা এই রচনাটি পড়তে চাও তাঁরা চাইলে পড়ে নিতে পার।

আমার দেখা একটি গ্রাম্য মেলা রচনা

এছাড়াও তোমাদের যদি আরও কোনো পছন্দের রচনা থাকে তাহলে সেটি তোমরা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পার। আমরা সেটিও সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।

রচনা সূচিপত্রঃ আপনি যে অংশ থেকে পড়তে চান সেখানে চাপ দিন

গ্রাম্য মেলা

ভূমিকা ঃ গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান উপকরণ মেলা । বিনোদনহীন নিরানন্দ একঘেয়ে গ্রাম্য জীবনে আনন্দের জোয়ার নিয়ে আসে মেলা। গ্রামবাসী এই দিনটি প্রতীক্ষায় প্রহর গোনে। জাত-ধর্ম-বর্ণ একাকার হয়ে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। মানুষের সাথে মানুষের, শিল্পের সাথে শিল্পীর এক অপূর্ব মেলবন্ধন তৈরি হয় । মানুষের মেলা আর মেলার মানুষ একসূত্রে বাঁধা পড়ে।

মেলার উৎপত্তি ঃ মেলার শুরু ঠিক কবে থেকে সে সম্পর্কে কোনো লিপিবদ্ধ ইতিহাস নেই। অর্থাৎ মেলার জন্মকথা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া সম্ভব নয় । তবে এ কথা বলা যায় : যখন থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের শুরু, তখন থেকে মেলারও শুরু।

মেলার স্থান, উপলক্ষ ঃ গ্রামের বেশির ভাগ মেলাই বসে নদীর তীরে। মেলার পসরা সাজিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসে নৌবহর। বিশাল বট কিংবা অশ্বত্থের ছায়ায়, কখনও বা বিস্তৃত খোলা মাঠে বসে মেলা। নির্জন অশ্বত্থ তল কিংবা নদীতীর হয়ে ওঠে কোলাহল মুখরিত। নানা উপলক্ষে গ্রামে মেলা বসে। আবহাওয়া ও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন জনপদে মেলার বৈচিত্র্য দেখা যায়। প্রবীণরা এখনও বলেন, এলো পৌষ গেলো পৌষ বলে শীত যখন জেঁকে বসে তখন প্রথমেই মনে পড়ে যায় মেলার কথা। শীতের শেষে গাঁয়ের মানুষের শস্যভাণ্ডার থাকে পূর্ণ। পিঠা-পার্বণের উৎসব চলে। এ সময় তাদের অখণ্ড অবসর। এই অবসরে আনন্দের স্পর্শ জাগায় মেলা।

আরো পড়ুন ঃ আমাদের বিদ্যালয় রচনা class 6 7 8 9 10 - রাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

বাংলা বছরের শেষে চৈত্র সংক্রান্তির মেলার মধ্য দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় আর বৈশাখি মেলায় নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। এ ছাড়াও মহরমের সময়ও মেলা বসে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বসে মেলা। আবহমান কাল থেকেই ধর্মীয় ও লৌকিক উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মেলা। রবীন্দ্র পরিবারে ছিল মেলার চল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর দীক্ষা উপলক্ষে বাংলা ১২৫০ সনের ৭ই পৌষ একটি মেলার আয়োজন করেছিলেন। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে শান্তিনিকেতনে মেলা অনুষ্ঠিত হতে থাকে। 

মেলার উদ্বোধনী দিনে তিনি ভাষণও দিতেন। এমনই এক মেলায় উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেছিলেন, 'এই মেলার উৎসবে পল্লী আপনার সমস্ত সংকীর্ণতা বিস্তৃত হয় - হৃদয় খুলে দান করবার ও গ্রহণ করবার এই মেলাই হলো প্রধান উৎস ও উপলক্ষ।'

গ্রাম্য মেলার পুরনো ইতিহাস ঃ বাংলার প্রাচীন প্রাচীন ইতিহাসে মেলার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। মোগল আমলে নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে প্রায়ই গ্রাম্য মেলা বসত। 'আইন-ই-আকবরী'তে বলা হয়েছে, মেলা এলেই গ্রামে পড়ে যেত সাজ সাজ রব। গ্রাম বাংলার আসল রূপ যেন তখনই ফুটে উঠত । মানুষের মন তখন আনন্দমুখর। এরও আগে মেলা রাজ-আঙিনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ছেচল্লিশ সালে জুলিয়াস সিজার একটি মেলার আয়োজন করেছিলেন, যেখানে সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার ছিল না। ইরানের ঐতিহ্যবাহী উৎসব 'নওরোজ' উপলক্ষে এক ধরনের মেলার প্রচলন ছিল। কালের আবর্তে মেলা সাধারণ জনগণের আওতায় আসে। 

গাঁয়ের সাধারণ মানুষই হয়ে ওঠে গ্রাম্য মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ব্রিটিশ- বিরোধী আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা ছিল গ্রাম্য মেলাগুলোর। মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল কবিগান, পালাগান, যাত্রা, লেটোর আসর। বিদ্রোহী কবি নজরুল কিশোর বয়সে এই লেটোর দলেই ব্রিটিশ-বিরোধী গান গেয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। রবীন্দ্রনাথ স্বদেশি গানের সূ চনা করেন শান্তিনিকেতনের এক মেলায়। অতীতে প্রধানত শীতকালেই মেলা হতো। কালক্রমে তা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, ঋতু উৎসব, লোকজ সংস্কৃতি, পালা-পার্বণ ইত্যাদিতে বিস্তৃতি পার।

আরো পড়ুন ঃ আমাদের গ্রাম রচনা ক্লাস ৩-১০ | রাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

বৈশাখি মেলা, কার্তিকের মেলা, আশুরার মেলা, রথের মেলা, পৌষ সংক্রান্তির মেলা, বগুড়ার মহাস্থানগড়ের মেলা, খুলনার খান জাহান আলী দরগার মেলা, চট্টগ্রামের বলি খেলা মেলা, কুমিল্লার জগন্নাথ মেলা, রাস পূর্ণিমার মেলা, মাঘী পূর্ণিমা তিথি মেলা, লাঙ্গলবন্দের গঙ্গাস্নানের মেলা ইত্যাদি একসময় শুধুই গ্রামবাংলায় সীমাবদ্ধ ছিল। কালক্রমে তা গ্রামের সীমানা ছাড়িয়ে আধুনিক যান্ত্রিক জীবনের কর্মকোলাহলের মাঝেও ঠাঁই করে নিয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ছোট বড় মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রতি বছর ২৫৩টি মেলা বসে।

মেলায় যেসব জিনিসের সমাগম ঘটে ঃ নতুন ধানের তৈরি পিঠে-পুলি, পায়েস, কুটির শিল্পজাত দ্রব্য যেমন- বাঁশ-বেতের ডালা, কুলা ও অন্যান্য আসবাব, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মৃৎ শিল্প যেমন- মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ব্যবহার্য অন্যান্য জিনিস, পুতুল, তাল পাতার পাখা, শীতল পাটি, নকশি কাঁথা, লোহার ও কাঠের নানা সামগ্রী, বিভিন্ন ধানের খই, বাতাসা, নাড়ু, ছাঁচের তৈরি বিভিন্ন জিনিস যেমন – হাতি, ঘোড়া, পাখি, আম, কাঁঠাল, মসজিদের গম্বুজ, মন্দিরের চূড়ো, নলেন গুড়ের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি ইত্যাদি অসংখ্য সামগ্রীর সমাবেশ ঘটে। 

গ্রাম্য মেলার তাৎপর্য ঃ বাংলার গ্রামীণ জীবন যেন সার্থকভাবে ফুটে ওঠে গ্রামের মেলায়। মেলা যেন উপেক্ষিত গ্রামের মানুষদের আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্র। গ্রামের আর্থ-সামাজিক জীবনের সাথে মেলার যোগ নিবিড়। হস্ত ও কুটির শিল্প এবং রকমারি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সমাবেশ ঘটে মেলায়। গ্রামের অবহেলিত সম্প্রদায় – দরিদ্র কুমোর, কামার, তাঁতি তাদের তৈরি পণ্য নিয়ে সহজেই মেলায় আসতে পারে। পণ্যের কারিগরের সাথে ক্রেতার সরাসরি সংযোগ তৈরি হয়। সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়। আবিষ্কৃত হয় নানা রকম নকশা, কারুকাজ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান পায় পূর্ণতা। কঠোর পরিশ্রমী মানুষ কিছুদিনের জন্য আনন্দে অভিভূত হয়।

আরো পড়ুন ঃ রচনা সোনালি আঁশ পাট ক্লাস ৩-১০ | রাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

এমন প্রাণপ্রাচুর্যময় আয়োজন আর দেখা যায় না। পসরা কেনাবেচার পাশাপাশি চলে লাঠিখেলা, ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা, মোরগের লড়াই, হা-ডু-ডু, পুতুল নাচ প্রভৃতি খেলা। বাঙালি নতুন করে স্বাদ পায় হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যের। আজকাল শহরে শিল্প মেলা, বই মেলা, কৃষিপণ্য মেলা, বাণিজ্য মেলা ইত্যাদি নানান রকমের মেলা হয়। এর মূল কিন্তু গ্রাম্য মেলাতেই প্রোথিত। মেলার মাধ্যমেই এক গাঁয়ের মানুষের সাথে অন্য গাঁয়ের পরিচিতজনদের দেখা হয়, পরিচয় ঘটে, ভাবের আদান-প্রদান হয়। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যেসব শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামের মেলায় সেসব যেন প্রাণ ফিরে পায় ।

উপসংহার ঃ গ্রামবাংলার মেলা আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য। বছরের পর বছর এই মেলা আমাদের সংস্কৃতিকে একভাবে টিকিয়ে রেখেছে, যদিও আজ নগর জীবনের বিলাসিতার উপকরণ গ্রামগুলোকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে। শহরের বৈদ্যুতিক বাতি, মাইক্রোফোনে ব্যান্ড সংগীত মেলার পুরনো ঐতিহ্যকে অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। তারপরও মেলার দিনটির জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এমন প্রাণোচ্ছ্বল সময়, এমন প্রাচুর্যময় মিলন মেলা আর কখনও আসে না। [বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url