ট্রেন ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

ট্রেন ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা

ট্রেনে ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা

রেল বা ট্রেন ভ্রমণের যে অভিজ্ঞতাটি আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল, তা আমার প্রথম ট্রেন ভ্রমণ নয় । খুব ছোটবেলায় একাধিকবার ট্রেন ভ্রমণ করেছি। কিন্তু সেসব আমার মনে নেই। যে ট্রেন ভ্রমণটি আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল তা হলো চট্টগ্রাম থেকে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্য যাত্রা । তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। হাতে লম্বা ছুটি, শীতও তখন সবে মাত্র শুরু হচ্ছে। এমনি সময়ে আমার ছোট খালা আমাদের মৌলভীবাজারে আমন্ত্রণ জানালেন। শুনে আমরা তো মহাখুশি। আমাদের আর অপেক্ষা সইছিল না। যাত্রার তারিখ ঠিক করে বাবা টিকিট কেটে আনলেন। 

যাত্রার দিন অটোরিকশায় চড়ে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছলাম। যাত্রী চার জন – আমি, আমার ছোট ভাই, মা ও বাবা । কুলি ছুটে এলো। কিন্তু আমরা যার যার ব্যাগ নিজেরাই কাঁধে তুলে নিলাম। কুলিরা একটু যেন মনঃক্ষুণ্ণ হলো । প্লাটফর্মে নানা ভিড়। কেউ আমাদের মতোই যাত্রী। কেউবা এসেছে আত্মীয়-স্বজনকে বিদায় বা অভ্যর্থনা জানাতে। আরো আছে কুলি, ফেরিওয়ালা, ভিক্ষুক । প্রায় দশটার সময় ট্রেন প্লাটফরমে এলো। ট্রেন থেকে যাত্রীরা নামল। আমরাও উঠলাম। আমাদের সিট পড়েছে সামনাসামনি। আমি ও আমার ভাই জানালার পাশের সিট দুটো দখল করলাম। 

▶▶আরো পড়ুন ঃ একটি চাঁদনী রাত রচনা

কিন্তু কী ব্যাপার! ট্রেন তো ছাড়ছে না! আমার বিরক্তি দেখে বাবা খবর নিতে গেল। ফিরে এসে জানালো, ট্রেন ছাড়তে দেরি হবে। শুনে আমার ছোট ভাই সাদি খুব রেগে গেল। বাবাকে বলল, 'যাও, ওদের বকে দিয়ে এসো। তাড়াতাড়ি ট্রেন ছাড়তে বলো। খালারা আমাদের জন্য কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন!' যা হাক। প্রায় এক ঘণ্টা পর ট্রেন ছাড়ল। প্রথমে ধীরে তারপর বেশ দ্রুত। প্রথম দিকে দেখা গেল শহরের সেই পরিচিত দৃশ্য দালানকোঠা, দোকান-পাট, বাস-ট্রাক, রিকশা-সাইকেল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই দৃশ্য পাল্টে গেল। বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, সবুজ মাঠ, মাঠে চরে বেড়ানো গরু ছাগলের দল চোখের সামনে ছবির মতো ভেসে উঠল। ট্রেন ছোটার সঙ্গে মনে হলো রেললাইনের পাশে গাছপালা, টেলিগ্রামের খুঁটি, ঘরবাড়ি, লোকজন, রাস্তা, পুল- - সব যেন উল্টোদিকে ছুটে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে দূরে চোখে পড়ল গ্রামের পর গ্রাম। 

বিস্তীর্ণ মাঠের মাঝখানে সবুজ গাছ-পালায় ঘেরা ছোট ছোট বাড়িগুলোকে মনে হতে লাগল যেন একেকটা দ্বীপ। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। হঠাৎ চোখে পড়ল রেললাইনের সমান্তরাল মহাসড়ক। তাতে ছুটে চলেছে বাস, ট্রাক। একটা বাস আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে গেল। কিন্তু যানজটে আটকে তাকে পিছিয়ে পড়তে হলো । প্রায় ১ ঘণ্টা পর আমরা একটা বড় পুল পার হলাম। বাবা জানালেন, আমরা ফেনী নদী পার হচ্ছি। কয়েকটা নৌকা চোখে পড়ল। একটা নৌকায় জেলেরা মাছ ধরছে। এরপরই দৃশ্য পাল্টে গেল । আবার সেই গ্রাম আর মাঠের দৃশ্য।

এদিকে ট্রেনের কামরায় এক অন্ধ বাউল গান শুরু করল। খুব সুন্দর তার গলা, কয়েকটা গান গাওয়ার পর সে সবার কাছে হাত পাতল । আমরা তাকে দশটা টাকা দিলাম। একটু পরপরই বিভিন্ন ফেরিওয়ালা আসতে থাকল। একজনের কাছ থেকে আমরা কিছু চিপস কিনলাম। একটা স্টেশনে ট্রেন থামলে কমলাওয়ালা উঠল। বেশ বড় বড় কমলা। দাম খুবই সস্তা। বাবা তিন ডজন কমলা- কিনলেন – কয়েকটা ট্রেনে খাওয়ার জন্য, বাকিগুলো খালার বাড়িতে নেওয়ার জন্য। কামরার মধ্যে দুটি ছেলে একটি বই পড়ার জন্য ঝগড়া শুরু করল। ওদের বাবা ওদের ধমকি দিয়ে থামালেন।

দুপুরের দিকে মা টিফিন কেরিয়ার খুলল। খুব মজা করে হাতে আমরা পরোটা, কাবাব আর ফ্রায়িড চিকেন খেলাম। হঠাৎ বাইরে তাকাতে চোখে পড়ল সারি সারি তালগাছ। আর সে গাছে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা। এর আগে জানতাম্ বাবুই পাখি কাণ্ডের সাথে বাসা করে। কিন্তু আজ দেখলাম, না! গাছের ডাল-পাতা থেকে ঝুলে আছে বাবুই পাখির বাসা। বিকেলের দিকে আমাদের ট্রেন ঢুকল সিলেট অঞ্চলে, মাঝে মাঝে উঁচু টিলা চোখে পড়ল। সে টিলার মাটি লালচে ধরনের। সিলেটের চা বাগানের কথা বইতে কত পড়েছি। তাই ভেবেছিলাম, প্রথমেই চা বাগান চোখে পড়বে। কিন্তু তা হলো না। চোখে পড়ল প্রথমে আনারসের বাগান। তারপর দেখলাম কাঁঠাল বাগান । প্রায় দুই ঘণ্টা পরে চা বাগানের দেখা মিলল। ছোট ছোট চা বাগানের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ছায়া বৃক্ষ ।

▶▶আরো পড়ুন ঃ নদীতীরে সূর্যাস্ত রচনা

ট্রেনে একটা হৈ-চৈ পড়ল। সবাই চিৎকার করে বলল, জানালা বন্ধ করুন। সবাই জানালা বন্ধ করল। পরে দেখা গেল ছোট-খাটো একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। জানালা দিয়ে ছুটে আসা একটা পাথরের টুকরায় আমাদের পেছনের একজন বয়স্ক মহিলা আহত হয়েছেন। তাঁর হাতে পাথরটি লেগেছে। তিনি বেশ চোট পেয়েছেন। হাত ফুলে গেছে। আমাদের কামরাতেই একজন ডাক্তার ছিলেন। তিনি তার ব্যাগ থেকে একটা ওষুধ মহিলাকে খেতে দিলেন। বললেন, 'সিলেট পৌঁছে, হাতের এক্সরে করিয়ে নেবেন। তারপর ডাক্তার দেখাবেন।'

ঐ ঘটনার পর আর জানালা খোলা হয়নি। পরের প্রায় ১ ঘণ্টা যেকোনো ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে কাটল। পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটার দিকে ট্রেন শ্রীমঙ্গলে পৌঁছল। আমরা স্টেশনে নেমে দেখলাম আমার খালু ও খালাতো ভাইয়েরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের সাথে আমরা মাইক্রোবাসে করে মৌলভীবাজারে পৌছলাম।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url