বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

শ্রমজীবী মানুষ রচনা

বাংলাদেশের শ্রমিক

ভূমিকা ঃ শ্রমিকরাই তাদের পরিশ্রমে গড়ে তুলেছে মানব-সভ্যতার বুনিয়াদ। সভ্যতার উষালগ্নে নুড়িপাথর দিয়ে শ্রমের সাহায্যে মানুষ হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে। পরবর্তীকালে কোটি মানুষের কঠোর শ্রমের ফলে গড়ে উঠেছে সভ্যতার বিরাট সৌধ। শ্রমিকের শ্রমের বিনিময়েই উৎপাদিত হয় দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী । সেগুলো আমাদের জীবনকে করে সহজ ও সাবলীল। এককথায়, মানুষের জীবন ও সভ্যতা হলো শ্রমিকের শ্রমেরই ফলস্বরূপ ।

শ্রমের প্রকারভেদ ঃ সকল কাজে শ্রমের প্রয়োগ হয়ে থাকে দু ভাবে সেদিক থেকে শ্রম দুই প্রকার- - কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রম। কায়িক শ্রম বলতে বোঝায় শারীরিক শক্তি দিয়ে কাজ-সম্পাদন। আর মানসিক শ্রম বলতে বুঝায় কাজ-সম্পাদনে চিন্তা, বুদ্ধি ইত্যাদির প্রয়োগ। মানসিক শ্রমের সাহায্যে আমরা পরিকল্পনা, তত্ত্ব, পদ্ধতি ইত্যাদি আবিষ্কার করি। আর কায়িক শ্রমের মাধ্যমে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করা হয় । তাই সভ্যতার অগ্রগতিতে দু রকম শ্রমের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের কৃষক রচনা

বাংলাদেশে শ্রমিকের অবস্থান ঃ আমাদের দেশে শ্রমিকরা নানাভাবে উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। যে শ্রমিক আমাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও বিলাসদ্রব্য উৎপাদন করে তারা সমাজে অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার। তারা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা থাকে ফুটপাতে, রেললাইনের ধারে, বস্তিতে। তারা বাধ্য হয় মানবেতর জীবনযাপন করতে। তাই শ্রমজীবীদের প্রতি সমাজের উপরতলার মানুষের অবহেলা ও অবজ্ঞা দেখে ব্যথিত কবি উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন :

‘আমি কবি যত কামারের, মুটে মজুরের

আমি কবি যত ইতরের।'

দেশের অর্থনীতিতে শ্রমিকের অবদান ঃ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শ্রমিকের ভূমিকা অপরিসীম। কৃষি শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা খাদ্য ও কৃষিপণ্য পাই। শ্রমিকরা অবদান রাখছে শিল্পোৎপাদনে সাহায্য করে। বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে মহিলা শ্রমিকরা পোশাক শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এদিক থেকে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকরাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল ভূমিকা পালন করে চলেছে।

বিদেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের শ্রমিক ঃ তা ছাড়া বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কায়িক ও মানসিক উভয় প্রকার শ্রম মর্যাদা পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রচুর শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। তারা শ্রমের বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করে চলছে ।

শ্রমের বৈষম্য ঃ সভ্যতার উন্নয়নে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা সমভাবে শ্রম নিয়োগ করলেও আমাদের দেশে নারী ও পুরুষের শ্রমের মধ্যে রয়েছে বিভেদ। নারী শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত । শ্রমের ক্ষেত্রে এই বৈষম্যের কারণে নারী শ্রমিকরা কাজে উৎসাহ হারাচ্ছে এবং কর্মক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে নানারকম সমস্যা ।

শ্রমিক অসন্তোষ ও প্রতিকার ঃ আমাদের দেশে শ্রমিকরা শোষণ ও নির্যাতনের শিকার। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া হলেও শ্রমিকের মজুরি বাড়ে না। তারা বাধ্য হয়ে ধর্মঘটে নামলেও সহানুভূতি পায় না; বরং পুলিশি নির্যাতন ও দমননীতির শিকার হয়। তাদের চাকরিচ্যুত করে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এর ফলে শ্রমিক অসন্তোষ আমাদের দেশে উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, শ্রমিকদের কাজের পরিবেশও উন্নত নয়। গার্মেন্টস্ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে বহু শ্রমিকের নিহত হওয়ার ঘটনা তার প্রমাণ। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ককে উন্নয়নের স্বার্থে সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থানে উন্নীত করতে হবে।

শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি ঃ দেশের শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা যায়। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, বেতন ও মজুরি বৃদ্ধি করে, তাদের কাজের পরিবেশ উন্নয়ন করে, পরিবহন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে সরকার ও মালিকপক্ষ শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ।

আরো পড়ুন ঃ আমার পড়া একটি বইয়ের গল্প রচনা

উপসংহার ঃ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এদেশের শ্রমিকরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নির্মমভাবে শ্রমিক শোষণের পন্থায় কিন্তু আধুনিক কালে উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেই জাতীয় উন্নতি নিশ্চিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে শ্রমিককে অমর্যাদা করার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়নে সরকারকে নিতে হবে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ। অধিকারহীনতা কিংবা শ্রমের অমর্যাদার কারণে শ্রমিকরা যেন শ্রমবিমুখ না হয়ে পড়ে, সেদিকেও সংশ্লিষ্ট সবার বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে স্মরণ করা দরকার অভুক্ত, স্বাস্থ্যহীন, দক্ষতাবর্জিত শ্রমিককে দিয়ে এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রার্থিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url