সত্যবাদিতা রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

সত্যবাদিতা রচনা

সত্যবাদিতা

সূচনা ঃ মানুষ কতগুলো মূল্যবোধ বা গুণকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সত্যবাদিতা তেমনই এক মহৎ গুণ। এটি ব্যক্তিমানুষের আচরণগত একটি মূল্যবোধ বা গুণ। এ গুণটি মানবিক গুণের অন্যতম আদর্শ। এই আদর্শ মানুষকে সৎ চরিত্রবান করে তোলায় সাহায্য করে। সত্যবাদী লোক অন্যের পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পারেন। পৃথিবীতে যেসব মহাপুরুষ স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন তাঁরা সত্যবাদিতাকে আশ্রয় করেই বড় মাপের মানুষ হয়েছেন।

সত্যবাদিতা ঃ সত্যবাদিতা বলতে কেবল 'মিথ্যা কথা না-বলা'-কে বোঝায় না। এর অর্থ আরো ব্যাপক সত্য গোপন না-করা, মিথ্যাকে প্রশয় না দেওয়া, ন্যায়নীতি অবলম্বন করা ও অন্যায়-অসত্যকে প্রতিরোধ করা ইত্যাদি সত্যবাদিতার লক্ষণ ।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ ঈদ উৎসব রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

সত্যবাদিতার সামাজিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব ঃ সত্যবাদী লোককে সত্য প্রতিষ্ঠায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। কিন্তু তারা সমাজে সম্মান ও মর্যাদার আসন পান। বিভিন্ন ধর্মে সত্যবাদিতা মানুষের সাধনালব্ধ সুগভীর উপলদ্ধি ও মহৎ মানবিক গুণ হিসেবে বিবেচিত। প্রত্যেক ধর্মেই মিথ্যা মহাপাপ হিসেবে গণ্য হয়েছে। উপনিষদে বলা হয়েছে, সত্যের জয় হবে, মিথ্যার নয়। ইসলাম ধর্মেও সদা সত্য কথা বলতে ও সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলার উপদেশ দেয়া হয়েছে ।

সত্যবাদিতার সুফল ঃ সত্যবাদী লোকের কথা ও কাজে কোনো তারতম্য হয় না। সত্যবাদিতা মানুষকে খাঁটি সোনার মতো নিখাদ করে তোলে। তাই সহজেই লোকে তাঁর ওপর আস্থা রাখে, তাঁকে বিশ্বাস করে, শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। ফলে অন্যদের ওপর সত্যবাদী লোকের প্রভাব হয় প্রবল। সমাজে অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে থাকে মিথ্যার সম্পর্ক। মিথ্যার স্বরূপ একসময় না একসময় উদ্‌ঘাটিত হয়। ফলে সমাজে সত্যের জয় মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত। তাই সত্যবাদী গরিব হলেও মিথ্যাবাদী ধনীর চেয়ে তাঁর মনোবল হয় দৃঢ়। তা ছাড়া সত্যসন্ধানী মানুষ সত্য উদ্ঘাটন করেই জীবন ও জগতের রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছে। নিত্যনতুন আবিষ্কারে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। সত্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে মানবসমাজ। মানুষে মানুষে সুন্দর ও সুস্থ সম্পর্কে ভিত্তি হচ্ছে সত্যাশ্রয়িতা ।

সততা দিয়ে শত্রুর মনও জয় করা যায়। আমৃত্যু সত্যের সাধক শেষ নবী মুহাম্মদ (স) তাঁর উজ্জ্বল উদাহরণ। সব সময় সত্যকে পরম মূ ল্যবান জ্ঞান করেছিলেন বলে তিনি তাঁর পরম শত্রুদের অন্তরও জয় করতে পেরেছিলেন। তিনি অসাধারণ বিশ্বস্ততার জন্য ‘আল আমিন’ বা 'বিশ্বাসী' বলে সবার আস্থা অর্জন করেছিলেন।

মিথ্যা বলার কুফল ঃ মিথ্যা বলা কেবল মহপাপ নয়, মিথ্যা থেকেই শুরু হয় প্রতারণা, জালিয়াতি, শঠতা। সেই জন্য মিথ্যাকে পাপ কাজের প্রথম ধাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। মিথ্যাবাদী কখনো সমাজে সম্মান ও মর্যাদার আসন পায় না, আর তার ওপর লোকে বিশ্বাস হারায়। মিথ্যাবাদী রাখালের গল্প তার উজ্জ্বল প্রমাণ। সাময়িকভাবে কখনো কখনো মিথ্যার জয় হলেও শেষ পর্যন্ত সত্যই লাভ করে চূড়ান্ত বিজয় ৷

▶▶ আরো পড়ুন ঃ বাংলা নববর্ষ রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

উপসংহার ঃ যুগ-যুগান্তরের এ সভ্যতা গড়ে উঠেছে সত্যের ওপর ভিত্তি করে। তাকে অসত্যের কাছে বিপন্ন করা যায় না। তাই মানবসমাজের মঙ্গল ও অগ্রগতির জন্য কথায় ও কাজে আমাদের সত্যাশ্রয়ী হতে হবে। ক্রমবর্ধমান অন্যায়, লোভে, দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে জাতিকে, বিশ্বকে রক্ষা করার জন্য সত্যনিষ্ঠা মানুষের প্রয়োজন এখন অনেক বেশি। তাই শৈশব থেকেই শিক্ষার অন্যতম আদর্শ হওয়া উচিত ‘সত্য কথা বলা ও সত্য পথে চলা।' রবীন্দ্রনাথ লিখেন----

“সত্য যে কঠিন

কঠিনেরে ভালোবাসিলাম

সে কখনো করে না বঞ্চনা।'

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

সবগুলো অনুচ্ছেদ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url