দেশভ্রমণ প্রবন্ধ রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

দেশভ্রমণ প্রবন্ধ রচনা

দেশভ্রমণ

ভূমিকা ঃ অজানাকে জানার নেশা মানুষের চিরন্তন। নিজের গণ্ডির বইয়ের বাইরের দুনিয়াটার প্রাণ তার রয়েছে দুর্বার আকর্ষণ। সেই নেশার টানে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটে চলে পথে প্রান্তরের লোকালয়ে পাড়ি দেয় মহাসাগর সুউচ্চ পর্বত; যা উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুতে, সাইবেরিয়া থেকে সাহারায়। ভারতের তাজমহল থেকে মিশরের পিরামিড দেখতে সে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে । এভাবেই মানুষ শেষে নতুনকে জানতে, পুরাতনকে অনুভব করতে আর ভবিষ্যৎকে কল্পনা করতে।

দেশভ্রমণের আকর্ষণ ঃ নিসর্গের অফুরন্ত ঐশ্বর্য ও বৈচিত্র্যে ভরা বিপুল এই পৃথিবী। এখানে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের ফেনিল জলরাশি, হিমালয়ের আকাশ ছোঁয়া পর্বতমালা। রয়েছে প্রেইরি ভূমি, নীল নদের বিশালতা। যুগে যুগে মানুষ এখানে রেখে গেছে সভ্যতার নানা স্মৃতির নিদর্শন গুহামানবের হায়রোগ্লিফিক, মিশরের পিরামিড, চীনের মহা প্রাচীর, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, মাদাম তুসোর মিউজিয়াম। পৃথিবীর কত বিচিত্র জনপদ, সমাজ-সভ্যতা, সংস্কৃতির কত বিচিত্র চেহারা, ঘরমুখো ও কর্মব্যবস্ততার নিগড়ে বন্দি মানুষের পক্ষে এসব দেখার সৌভাগ্য হয় খুব কম। সৌন্দর্য অতৃপ্তির এই হাহাকার প্রতিধ্বনিত হয় কবির কণ্ঠে ----

▶▶আরো পড়ুন ঃ বসন্তকাল রচনা

‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি

দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী

মানুষের কত কীর্তি, কত না নদী গিরি সিন্ধু মরু,

কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু রয়ে গেল অগোচরে।'

তাইতো ভ্রমণ বিলাসী মানুষ ঘরের বাঁধন কেটে বেরিয়ে পথে। বেরিয়ে পড়ে অজানাকে জানতে বিচিত্রকে উপভোগ করতে, অনন্ত সৌন্দর্যের মধ্যে অবগাহন করতে।

দেশভ্রমণের উপকারিতা ঃ মানুষের জিজ্ঞাসু মনই মূলত মানুষকে টানে ভ্রমণের নেশায়। দেশভ্রমণ মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন জনপদ ও নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে। প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসস্তূপগুলো অবলোকন করে আমরা জানতে পারি মানুষের অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও ত্যাগের মহিমা । বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের শিল্পকর্ম, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য আমাদের দেয় নতুন সৃষ্টির প্রেরণা। মহামনীষীদের জন্মভূমি পরিদর্শন আমাদের উদ্বুদ্ধ করে নিজেদের বিকশিত করতে, প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাতে। দেশভ্রমণের মাধ্যমে মানুষের ইতিহাস ভূগোলের বর্ণহীন

বিবরণ হয়ে ওঠে জীবন্ত ও উজ্জ্বল। আহসান মঞ্জিলের মতো পুরাকীর্তি, মহাস্থানগড়, ময়নামতির মতো পুরানিদর্শন আমাদের অধীত বিদ্যাকে যেন জীবন্ত করে তোলে। দেশভ্রমণের মাধ্যমে একজন মানুষ বুঝতে পারে এই পৃথিবীটা শুধু তার একার নয়। সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত প্রতিটা জীবসত্তা এই পৃথিবীর বাসিন্দা । এই পৃথিবী আমাদের সবার আবাসভূমি ।

কলম্বাস, রিডিংস্টেন, ক্যাপ্টেন কুক, মার্কোপোলোর মতো বিশ্ব বিশ্রুত পর্যটকগণের দুঃসাহসিক অভিযাত্রার ফলে আজ পৃথিবীর অনেক দুর্গম ও অজানা ভূখণ্ড সম্পর্কে জেনেছে বিশ্বের মানুষ। আবিষ্কৃত হয়েছে কত না নামহীন নদী, পর্বত অরণ্য-জনপদ, মরুভূমি ও মরুপ্রদেশ। প্রয়োজনের তাগিদেও মানুষ বের হয় দেশভ্রমণে। সাম্রাজ্য বিজয়ের উচ্চাশা নিয়ে মহাবীর আলেকজান্ডার মেসিডোনিয়া ছেড়ে ঘুরেছেন দেশে দেশে। জীবন ও জীবিকার কঠোর প্রয়োজনে ফিনিসীয়দের ছোটাছুটি করতে হয়েছে বাংলা থেকে শুরু করে রোম সাম্রাজ্য পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। বাণিজ্যের এলাকা বাড়ানোর তাড়নায় ইংরেজরা পণ্য নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছে দেশ-দেশান্তরে ।

▶▶আরো পড়ুন ঃ একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা

দেশভ্রমণের আনন্দ ঃ একঘেয়েমি এড়িয়ে জীবনকে মুক্তভাবে উপভোগ করার লক্ষ্যেই মূলত মানুষ দেশভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে। তবে দেশভ্রমণ যদি এমন হয়, শুধু ভ্রমণের জন্য ভ্রমণ তাহলে তা মাহাত্ম্য হারায়। তাজমহলকে যার চোখে কেবল কাচ আর পাথরের দালান, তার জন্য দেশভ্রমণ শুধু অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। দেশভ্রমণের জন্য তাই খোলা মন, দেখার মতো চোখ, আনন্দ লাভের আকাঙ্ক্ষা। ভ্রমণপিপাসু মানুষ তাই ভারত মহাসাগরের সামনে দাঁড়িয়ে অনুভব করেন এই মহাসাগর পাড়ি দিয়েই একদিন ভাস্কো দা গামা ভারতবর্ষকে আবিষ্কার করেছিলেন। হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্যমুগ্ধতার সঙ্গে যোগ হয় বিস্ময় একদিন পর্বতরাশি

শীর্ষদেশগুলোকেও পদানত করেছে তেনজিং ও হিলারীর মতো দুঃসাহসী মানুষরা। দেশভ্রমণের নেশায়, ভয়ঙ্করের দুর্নিবার আকর্ষণে এখনো অসংখ্য মানুষ পাড়ি জমায় দিক-দিগন্তে। প্রশান্ত মহাসাগরে ছোট একটা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায়। আমাজানের গভীর অরণ্যে খুঁজে বেড়ান প্রাচীন মানব সভ্যতার নিদর্শন। হাজারো বাধা বিপত্তি পাড়ি দিয়ে এই সব সাহসী মানুষ ছুটে যান অজানার আকর্ষণে, অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়। যেমন ছুটে গিয়েছিলেন তাদের পূর্বপুরুষেরা নিজেদের চেনা গণ্ডি পেরিয়ে অচেনার সন্ধানে।

দেশভ্রমণের সেকাল ও একাল ঃ সেকালের দেশভ্রমণ ছিল খুবই কষ্টকর। তখন পথঘাট ছিল দুর্গম। সমুদ্র ছিল দুস্তর। পর্বত ছিল দুরারোহ। কিন্তু ভ্রমণের নেশায় পথের বাধা পরাজয় মেনেছে। মানুষ ক্রমে দূরকে করেছে নিকট। একালে ভ্রমণের উপায় উপকরণ বেড়েছে প্রচুর। যানবাহনের দ্রুতগতি সময়কেও করেছে সাশ্রয়। গরুর গাড়ি ঘোড়ার গাড়ির জায়গা নিয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি। পালতোলা নৌকার জায়গায় এসেছে পরমাণু শক্তিচালিত জাহাজ । আকাশ পথের দূরত্ব হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে শব্দের চেয়ে দ্রুতগতি বিমান । গ্রহান্তরের পথেও এখন চলছে মানুষের অভিযাত্রা।

▶▶আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য রচনা

উপসংহার ঃ বিশ্বায়নের এ যুগে গোটা পৃথিবী এসে পড়েছে অনেক অনেক কাছে। এই অবস্থায় সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে দেশ ভ্রমণের জনপ্রিয়তা। নানা দায়িত্ব ও কর্তব্যের বোঝা থেকে মুক্তি নিয়ে মানুষ কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটানোর লক্ষ্যে সুযোগ পেলেই এখন বেরিয়ে পড়ে দেশভ্রমণে। মানুষের ক্রমবর্ধমান দেশভ্রমণের চাহিদা মেটাতে সারাবিশ্বে ঘটেছে পর্যটন শিল্পের প্রসার। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এই সুযোগ নিয়ে অনেকেই এখন নিজেকে দেশের সীমানায় আবদ্ধ না রেখে পা রাখছেন দেশের বাইরে, পর্যটক হিসেবে পরিচিত হতে।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url