গ্রীষ্মের একটি দুপুর রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

গ্রীষ্মের একটি দুপুর রচনা

গ্রীষ্মের একটি দুপুর

ভূমিকা ঃ ঋতু বদলের পালায় গ্রীষ্মকাল আপন ভাবমূর্তি নিয়েই প্রকৃতিতে ধরা দেয়। আর এর যথার্থ রূপ ফুটে ওঠে গ্রীষ্মের দুপুরে। গ্রীষ্ম এলেই বাংলার প্রকৃতি হারাতে বসে বসন্তের সমস্ত বর্ণিল মাধুর্য। ভরদুপুরে সূর্য যেন অগ্নিরূপ ধারণ করে। প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুক্ষ, বিবর্ণ ও বিশুষ্ক। প্রচণ্ড তাপে যেন চারিদিকে আগুনের হলকা ছড়ায়। হারিয়ে যায় প্রকৃতির শ্যামল-কোমল ছোঁয়া, ফেটে চৌচির ফসলের মাঠ, নদী শুকিয়ে হয় খটখটে, ধুলোর ঝড় তুলে আসে মত্ত কালবৈশাখী। তীব্র তাপদাহে ওষ্ঠাগত প্রাণ একটু পানি, একটু ঠাণ্ডা বাতাস আর গাছের শীতল ছায়া পেলে যেন জুড়িয়ে যায়। আর এই রুক্ষতা ও বিবর্ণতার যথার্থ রূপ ফুটে ওঠে কেবল গ্রীষ্মের দুপুরেই। এ এক অনন্য রূপ। 

গ্রীষ্মের দুপুরের রূপ বর্ণনা ঃ গ্রীষ্মের দুপুরে সূর্যের প্রখর তাপে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া যায় না। ঘরের ভেতর অসহ্য গরম আর বাইরে তাপদাহ। শহুরে লোকেরা তবু বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস উপভোগ করে। কিন্তু গ্রামবাসীরা গাছের ছায়ায় বসে কিংবা হাতপাখা দিয়ে দুঃসহ গরমের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও ঘোচাবার চেষ্টা করে। যদিও বা বাতাস বয়, সে বাতাস সবকিছু পুড়িয়ে দিতে চায়। তপ্ত হাওয়া মাটিতে লুটিয়ে থাকা শুকনো পাতার দলকে উড়িয়ে নিয়ে যায় ।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য রচনা

গ্রীষ্মের দুপুর শহুরে চাঞ্চল্য বা ব্যবস্ততায় তেমন প্রভাব না ফেললেও গাঁয়ের জীবন একটু ঝিমিয়ে পড়ে, সেখানে নেমে আসে মন্থরতা। অলস দুপুরে চোখ জুড়িয়ে আসে ঘুমে। প্রখর সূর্যের তাপে মাঠে কাজ করা যায় না। যেসব কৃষক মাঠে কাজ করে তারাও মধ্যদুপুরে কাজ ফেলে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। তপ্ত মেঠো পথে জনমানব চোখে পড়ে কদাচিৎ। কেবল ছোট ছোট ছেলেমেয়ের দল গরমের তীব্রতা ভুলে গিয়ে আমের বাগানে ঘুরে বেড়ায়। কখনো বা তারা খানিকটা শুকিয়ে যাওয়া নদী কিংবা পুকুরের পানিতে সাঁতার কেটে শরীর জুড়ায়। প্রচণ্ড গরমে হাঁপিয়ে ওঠে পশুপাখিরাও। ক্লান্ত রাখাল গাছের ছায়ায় গামছা বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। 

দূর থেকে ভেসে আসে উদাসী ঘুঘুর ডাক। নির্জন দুপুরে এই ডাক নিস্তব্ধতাকে যেন আরো বাড়িয়ে দেয়। কেউ কেউ হাতপাখার বাতাসে একটু ঠাণ্ডা হতে চায়, কেউবা শীতল পাটি বিছিয়ে শুয়ে-বসে অবসর কাটায়। বৌ-ঝিরা কেউ নকশি কাঁথায় ফুল তোলে; কেউ সুতো পাকায়, কেউ দড়ি বানায় । গাঁয়ের হাটেও এ সময় লোক সমাগম হয় না। বেশিরভাগ দোকানেরই ঝাঁপ বন্ধ থাকে। হাটের পাশের মসৃণ পাকা সড়কে উঠে দাঁড়ালে দূরে মরীচিকা দেখা যায়। পাকা সড়কও থাকে জনবিরল, যানবাহনশূন্য। সবাই যেন প্রতীক্ষায় থাকে কখন বেলা পড়বে, কখন কমবে সূর্যের তাপ ।

আরো পড়ুন ঃ বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা

গ্রীষ্মের দুপুরে চারিদিকে কেবল রুক্ষতা আর রুদ্রতা। ফসলহীন শূন্য চৌচির মাঠ; স্রোতহীন শীর্ণ নদী, দীর্ঘ অনাবৃষ্টি এই রুক্ষতা আর রুদ্রতারই রূপ। শহরে গ্রীষ্মের দুপুরে নির্জনতার অবকাশ নেই। কর্মকোলাহলময় শহরের যান্ত্রিক বাস্তবতায় গ্রীষ্মের দুপুরেও কাজ বন্ধ হয় না৷ যারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বা যানবাহনে আরামেই থাকে। তবে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, আর দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের দুর্দশার অন্ত থাকে না। জীবনের তাগিদে তাদের বাধ্য হয়েই কাজে নামতে হয়। ঠেলাওয়ালা, রিকশাওলাদের কষ্ট সীমাহীন । কারণ শহরে তো গাছের ছায়ায় দু দণ্ড জিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই ।

গ্রীষ্মকালে বিদ্যু সংকট দেখা দেয়। শিল্প এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎপ্রবাহ সচল রাখতে আবাসিক এলাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়। প্রচণ্ড গরমে মধ্যদুপুরে এই লোডশেডিং যেন অভিশাপ হয়ে আসে। স্কুলফেরতা ছেলেমেয়েদের দেখা যায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। প্রচণ্ড গরমে যানবাহনের ভাড়া বাড়ে, সেই সাথে যানসংকট দেখা দেয়। পথের পাশে বিক্রি হয় আইসক্রিম, তরমুজ কিংবা বেলের শরবত। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে খায় এসব পানীয়।

আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল রচনা

উপসংহার ঃ গ্রীষ্মের দুপুরে গ্রামের কাঁচাঘর কিংবা শহরের বস্তিতে মাঝে মাঝে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ সময় সবকিছু শুকনো থাকে বলে অসাবধান হলেই আগুন লেগে যায়। শহরের বস্তিগুলো খুব ঘিঞ্জি থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। অনেক লোক সহায়-সম্বলহীন আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।

প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের দুপুর এভাবেই কিছুটা রুক্ষ ও নিমর্মরূপে ধরা দেয়। তবে দুপুরের স্থায়িত্ব কম বলে কিছুটা স্বস্তিও থাকে ।

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url