বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য বা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
সূচনা ঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে প্রত্যেক দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও রূপ ফুটে ওঠে। বিশাল বিশ্বের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি দেশে দেশে ভিন্নত সৃষ্টি করে নিজ নিজ রূপে মানুষকে আকৃষ্ট করছে। তাই পাহাড়-পর্বত, বন-বনানী, নদী-সাগর, মরুভূমি, সবুজ দেশ কোনো কিছুই মানুষের কাছে মাধুর্যহীন নয়। সব দেশের মানুষ তার প্রকৃতিকে আপন করে নেয়, নিবিড়ভাবে ভালোবাসে। আমাদের বাংলাদেশের প্রকৃতিও অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয়। আমরা তার রূপসৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হই।
বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি ঃ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এশিয়ার একটি ছোট দেশ। এর আয়তন প্রায় এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার বা পঞ্চাশ হাজার বর্গমাইল। মোটামুটি সমতল ভূমির দেশ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে আছে পাহাড় এলাকা, ময়মনসিংহ সীমান্তে আছে নিচু পাহাড়, ভাওয়াল আর মধুপুর এলাকায় গড়, দক্ষিণাঞ্চলে নদীনালা, উত্তরাঞ্চলে সমতল ভূমির ধু ধু করা মাঠ শুকানো মৌসুমে আনে মরুভূমির আমেজ।
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের নদ-নদী রচনা
দেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে ছড়িয়ে আছে কিছু দ্বীপাঞ্চল। এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গঠন। ছোট দেশ হলেও এখানে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির লীলাখেলা সহজেই লক্ষ করা যায়। একদিকে যেমন সমুদ্রের কলগর্জনে মুখরিত, আর একদিকে তেমনি পাহাড়, টিলা, বন-বনানীর সবুজ পরিবেশ। নদীনালা পরিবৃত্ত বিশাল বনভূমির দক্ষিণ বঙ্গের রয়েছে এক বিচিত্র রূপ। তেমনি সমতল ভূমিতে সবুজের বিচিত্র সমারোহ। এভাবে আমাদের দেশের ছোট পরিধিতে প্রকাশ পায় প্রাকৃতিক রূপের লীলাখেলা ৷
ঋতুবৈচিত্র্য ঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য নিহিত রয়েছে এর ঋতু বৈচিত্র্যের মধ্যে। বারো মাসে ছয় ঋতুর আগমনে একটি চমৎকার বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের যেন প্রকাশ ঘটে এদেশের প্রকৃতির বুকে। বৈশাখে কালবৈশাখী আসে রুদ্র রূপ নিয়ে । বাংলার কবি এ সময় গেয়ে উঠেন-----
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো
তাস নিশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, যাক, যাক
এসো এসো।'
গ্রীষ্মের দারুণ অগ্নিবাণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে প্রকৃতি। প্রকৃতি তখন রুদ্র মূর্তি ধারণ করে। চারদিকে যেন ভাঙার পালা শুরু হয়। এরপর আসে বর্ষা পরিপূর্ণ রূপ নিয়ে। চারদিক জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পথঘাট ডুবে যায়। খাল-বিল-নদী-নালা জলে ভেসে যায়। প্রচুর বৃষ্টিপাতে প্রকৃতির নতুন সাজ-সজ্জা শুরু হয়। প্রকৃতির বুকে তখন সবুজের সমারোহ। ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে বর্ষার প্রকৃতি। শরতে বাংলার প্রকৃতি ধারণ করে ভিন্নরূপ। সবুজের বিপুল সমাবেশে তখন প্রকৃতির শান্ত রুপ। কবির কণ্ঠে সে সৌন্দর্যের বাণী-----
‘আজিকি তোমার মধুর মুরতি হেরিনু শারদ প্রাতে।'
আরো পড়ুন ঃ জাতীয় পাখি দোয়েল রচনা
হেমন্তের রূপ ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে দেখা দেয়। তখন মাঠে মাঠে ফসলের বিপুল সমারোহ। ঘরে ঘরে তখন আনন্দের চঞ্চলতা। প্রকৃতি তখন রূপে সৌন্দর্যে যেন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এরপর আসে শীত ঋতু আর গৈরিক উত্তরীয় নিয়ে। তখন মাঠ থাকে শূন্য। শীতের আমেজে গাছের পাতা ঝরে পড়ে । একটা নিরাভরণ রূপ তখন প্রকৃতির মধ্যে। অচিরেই এ শূন্যতা কাটিয়ে এসে উপস্থিত হয় ঋতুরাজ বসন্ত তার বিপুল সৌন্দর্য নিয়ে। গাছে গাছে নতুন পাতা, সর্বত্র ফুলের বিচিত্র সমাবেশ। বসন্তে প্রকৃতি নতুন সাজে সেজে ওঠে। প্রকৃতির সৌন্দর্যে রোমাঞ্চিত হয়ে এ সময়ে কবি গেয়ে উঠেন ---
‘আজি দক্ষিণা দুয়ার খোলা
এসো হে, এসো হে, আমার বসন্ত এসো
দিব হৃদয় দোলায় দোলা.........
উপসংহার ঃ বাংলাদেশের প্রকৃতির বিচিত্র সৌন্দর্য এদেশের মানুষের মনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। এখানকার সৌন্দর্যের খ্যাতি দেশের বাইরেও ছড়িয়েছে। অপরাপর দেশের মানুষ এদেশের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়েছে। দেশের সৌন্দর্য দেশবাসীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছে।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url