রচনা সোনালি আঁশ পাট ক্লাস ৩-১০ | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
শিক্ষার্থী বন্ধুরা নিচে আমরা তোমাদের জন্য সোনালি আঁশ পাট রচনাটি শেয়ার করেছি। তোমরা যারা যারা এই রচনাটি পড়তে চাও তাঁরা চাইলে পড়ে নিতে পার।
এছাড়াও তোমাদের যদি আরও কোনো পছন্দের রচনা থাকে তাহলে সেটি তোমরা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পার। আমরা সেটিও সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।
পাট : সোনালি আঁশ
সূচনা ঃ পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। এটি একপ্রকার উদ্ভিদের ছাল। পৃথিবীর উৎপন্ন পাটের শতকরা বিরাশি ভাগ পাটই বাংলাদেশে জন্মে । বাংলাদেশের আবহাওয়া পাট উৎপাদনের অনুকূল বলে এদেশে প্রচুর পাট উৎপন্ন হয় । আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাটের ভূমিকা অপরিসীম।
সোনালি আঁশ ঃ পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। কারণ পাট ও পাটজাতদ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। আবার পাটের রং সোনার মতোই হলদে। পাটের আঁশ যেমন সোনালি চুলের মতো, তেমনই এর মূল্যও আমাদের কাছে সোনার চেয়েও দামি। সেজন্য পাটকে সোনালি আঁশ বলে। উজ্জ্বল রোদে যখন পাট শুকাতে দেওয়া হয় তখন সোনার মতো চিকচিক করে। তখন মনে হয় পাট সত্যিই সোনার আঁশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের ড. মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী এ সোনালি আঁশের জীবন রহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেছেন।
এ যুগান্তকারী সৃষ্টির ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেল । আকৃতি : পাট এক প্রকার মৌসুমি উদ্ভিদ। পাটগাছ কাঠির মতো সরু ও সোজা এবং চার থেকে আট হাত পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কাঁচা পাটগাছ সবুজ রঙের। পাট গাছের ছালকে পাট আর ভেতরের সরু কাঠির মতো অংশটিকে পাটকাঠি বলা হয়। পাটগাছে ডালপালা নেই বললেই চলে। মাথার দিকে কয়েকটা পাতা হয়। বড় হলে পাটগাছ কিছুটা হলদে হয়ে যায়।
আরো পড়ুন ঃ আমাদের বিদ্যালয় রচনা class 6 7 8 9 10 - রাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
উৎপত্তি স্থান ঃ নিচু জমিতে পাট খুব ভালো জন্মে। সেজন্য যে দেশের ভূমি নিচু সে দেশে পাট ভালো হয়। বাংলাদেশ নদীবহুল বলে এর ভূ মি বেশি নিচু। সেজন্য এখানে প্রচুর পরিমাণে উৎকৃষ্ট জাতের পাট জন্মে। ভারতের আসামে, বিহারে, উড়িষ্যায় ও মাদ্রাজে কিছু কিছু পাট উৎপন্ন হয়, বর্তমানে আমেরিকা ও মিশরে কিছু কিছু পাট উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই পাট জন্মে। তবে ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, ফরিদপুর, পাবনা, রংপুর এবং রাজশাহী জেলায় পাট বেশি জন্মে। বাংলাদেশে প্রায় ষাট লক্ষ বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়ে থাকে।
প্রকারভেদ ঃ পাট তিন প্রকার। যথা : দেশি, তোষা ও মেস্তা। দেশি পাটের আঁশ সাদা। তোষা পাটের আঁশ লালচে এবং অপেক্ষাকৃত লম্বা । মেস্তা পাটের আঁশ অপেক্ষাকৃত মোটা। এ তিন জাতের পাটই বাংলাদেশে জন্মে ।
চাষের উপযোগী ঃ উষ্ণ, আর্দ্র জলবায়ু ও পলি গঠিত দোঁআশ মাটি পাট চাষের জন্য উপযোগী। পাট চাষের জন্য প্রখর রৌদ্রএবং প্রায় ৬০ ইঞ্চি থেকে ৭০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাতের একান্তই দরকার ।
চাষের সময় ঃ সাধারণত ফালা ও চৈত্র মাস পাট চাষের সময়। ভালোভাবে জমি চাষ করে সামান্য বৃষ্টিপাতের সাথেই জমিতে পাটের বীজ বোনা হয় এবং শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পাট কাটা হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে আষাঢ় মাসেই পাট কাটা হয়, নতুবা পাটগাছগুলো পানিতে ডুবে মারা যায় ।
চাষপ্রণালি ঃ পাট চাষ করা খুবই কষ্টসাধ্য। প্রথমেই পাটের জমিকে উত্তমরূপে চাষ করতে হয়। যাতে পাটগাছ সহজেই অঙ্কুরিত হতে পারে। জমি প্রস্তুত হলে পরিমিত সার প্রয়োগ করে পাটের বীজ বপন করতে হয়। পাটবীজ থেকে চারা বের হয়। গাছ একটু বড় হলেই আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হয় এবং গাছগুলো ঘন হলে মাঝে মাঝে কিছু গাছ তুলে ফেলে হালকা করে দিতে হয়, যাতে গাছগুলো সহজে মোটা ও উঁচু হয়ে উঠতে পারে । শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে গাছগুলো পরিপূর্ণতা লাভ করে। এ সময় পাটগাছ কেটে আঁটি বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। বিশ- পঁচিশ দিন পর গাছগুলো পচে নরম হয়ে ওঠে। অতঃপর পাটকাঠি থেকে আঁশগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে পানিতে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকাতে হয় । শুকানো আঁশগুলোকেই বলে পাট। আঁশগুলো গাঁট বেঁধে ঘরে সাজিয়ে রাখা হয় এবং প্রয়োজনমতো বিক্রি করা হয়।
আরো পড়ুন ঃ আমাদের গ্রাম রচনা ক্লাস ৩-১০ | রাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
প্রয়োজনীয়তা ঃ বিশ্বব্যাপী পাট অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য। পাট থেকে ব্যাগ, থলে, দড়ি, চট, কাগজ, কাপড়, কম্বল, কার্পেট প্রভৃতি তৈরি হয়। পাটজাতদ্রব্য প্রস্তুত করতে আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় কলকারখানা স্থাপিত হয়েছে। এসব কলকারখানায় প্রচুর লোক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে । পাট বিদেশে রপ্তানি করে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কৃষকও নগদ অর্থপ্রাপ্ত হয় । দেশের সমগ্র বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগই পাট থেকে আসে। পাটখড়ি জ্বালানি ও গ্রামঞ্চলে ঘরের বেড়া তৈরি কাজে লাগে। পাটখড়ি থেকে বর্তমানে হার্ডবোর্ড, কাগজ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাটের বীজ থেকে কীটনাশক ঔষুধ তৈরি হয়। শুকনো পাটপাতা ভিজিয়ে তার পানি খেলে পেটের পীড়া, কৃমি ইত্যাদি দূর হয়। পাটের পাতা উত্তম সবজি হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।
পাটশিল্প ঃ বাংলাদেশে প্রায় ছোট-বড় ৭৬টি পাটশিল্প কারখানা আছে। এগুলোর মধ্যে আছে নারায়ণগঞ্জের অদূরে আদমজী পাটকল যা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ। তবে বর্তমানে এ পাটকলটি বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া লতিফ বাওয়ানী, করিম জুটমিল, চট্টগ্রামে ইস্পাহানি, ক্রিসেন্ট, আমিন জুট, খুলনায় পিপলস ও ক্রিসেন্ট মিলস্ প্রসিদ্ধ।
পাট চাষে সমস্যা ঃ পাটচাষে লাভজনক হলেও এতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তেমনই এর চাষাবাদে খরচও বেশি। বাংলাদেশের গরিব কৃষক অনেক সময় যথেষ্ট অর্থের অভাবে নিয়মিতভাবে পাট চাষ করতে পারে না। জমিতে উপযুক্ত সার দিতে না পারলে পাট ভালো হয় না।
আরো পড়ুন ঃ আমার দেখা একটি গ্রাম্য মেলা রচনা 3-10 | রাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
অপকারিতা ঃ পাট চাষে চাষিদের কিছুটা ক্ষতিও হয়ে থাকে। পাট পচা পানি দূষিত হয়ে তাতে মশা জন্মে । মশার কামড় ও পাট পচা পানির জন্য গাঁয়ের লোকেরা ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হয়।
উপসংহার ঃ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি দ্রব্য পাট। পাট রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলেও গরিব চাষিদের অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অনেকে পাটে পানি দিয়ে তা ভারী করে সরকারের কাছে বিক্রি করে এতে পাট পচে যায় এবং মান নিম্ন হয়। ফলে বিদেশিরা পাট কিনতে রাজি হয় না। তাই পাট চাষ করে অধিকহারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার জন্য দেশের সরকার, ব্যবসায়ী এবং কৃষক – সবাইকে যত্নবান হতে হবে । [বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url