ঈদ উৎসব রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
ঈদ উৎসব রচনা
সূচনা ঃ বাংলাদেশের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে ঈদ। বছরে দুবার ঈদ উৎসব উদ্যাপিত হয়। প্রথমে পালিত হয় ঈদুল ফিতর, তারপর ঈদুল আযহা। ঈদের আভিধানিক অর্থ ‘আবার ফিরে আসা'। আর সামাজিক অর্থ উৎসব, আনন্দ বা খুশি ।
ঈদুল ফিতর ঃ গোটা রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা রেখে ভোগ-বাসনা থেকে বিরত থাকেন এবং ত্যাগের সাধনা করেন। আহারে ও আচরণে তাঁরা যথাসাধ্য সংযমী হন। যেদিন সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা হয়, তখন থেকেই তাদের কঠোর সাধনার অবসান হয়। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতরের উৎসব। ঈদ-উৎসবের মূল কথা হচ্ছে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে আনন্দ করা, উৎসবের আনন্দকে ধনী-গরিব সবাই মিলে ভাগ করে নেওয়া। এদিন সচ্ছল ও ধনীরা গরিবদের ফেতরা ও জাকাত দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোয় ব্রত হন ।
আরো পড়ুন ঃ
ঈদুল আযহা ঃ ঈদুল আযহা বা কোরবানি ঈদ হচ্ছে স্মরণের উৎসব। একদা হযরত ইব্রাহিম (আ) মহান আল্লাহর উদ্দেশে যে কোরবারি দিয়েছিলেন সেই আনুগত্য ও ত্যাগের ঘটনা এদিন স্মরণ করা হয়। ভক্ত মুসলমানরা ঈদের নামাজের শেষে নিজ নিজ সাধ্যমতো খাসি, গরু, দুম্বা বা উট কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানির গোশতের একাংশ আত্মীয়-বন্ধুদের এবং একাংশ গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ঈদের দিন প্রিয়জন সমাবেশ ও ভোজের আয়োজন হয়ে থাকে ।
সেকালের ঈদ ঃ বর্তমানে বাংলাদেশে ঈদ যত ব্যাপক ও গুরুত্বের সাথে উদ্যাপিত হয়, আগে তেমন হতো না। মোগল যুগে ঈদের আনন্দ সীমিত ছিল আমির-ওমরাহ ও ধনী মুসলমানদের মধ্যে। তবে সেকালেও ঈদ উৎসব গুরুত্ব পেয়েছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত শাহী ঈদগাহগুলো তার নিদর্শন হয়ে আছে। সেকালে ঈদ উপলক্ষে লোকায়ত মেলার আয়োজন হতো। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতো ঈদ-মিছিল। এ ছাড়াও ঈদের দিন আয়োজিত হতো নৌকাবাইচ, ঘুড়িওড়ানো, ঘোড়দৌড় ইত্যাদি প্রতিযোগিতা।
ঈদের প্রস্তুতি ঃ দুই ঈদের মধ্যে ঈদুল ফিতরই উৎসব হিসেবে বেশি ব্যাপকতা পেয়েছে। এ ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয় রমজানের শুরু থেকে । ঘরবাড়ি মেরামত, নতুন আসবাবপত্র দিয়ে ঘর সাজানো এবং নতুন জামাকাপড় কেনাকাটা চলে প্রায় গোটা রমজান মাস ধরে। এজন্য দোকানপাট সাজানো হয় নানা রং-বেরঙের পণ্যসামগ্রী দিয়ে। দোকানে দোকানে আলোকসজ্জার বন্দোবস্ত করা হয়। আয়োজিত হয় ঈদ বিক্রয় মেলা। ঈদ ফ্যাশনও গুরুত্ব পায় । ঈদুল আযহার অন্তত সপ্তাহখানেক আগে থেকে শহরে শহরে গ্রামে গ্রামে কোরবানির পশুর হাট বসে । ঘরে ঘরে শুরু হয় কোরবানির পশুর পরিচর্যা।
ঈদের দিন ঃ ঈদের দিন পরিপূর্ণ আনন্দ-উৎসবের দিন। এর সূচনা হয় খুব সকাল থেকেই। ঘরদোর পরিপাটি করে সাজানো হয়। ঘরে ঘরে সেমাই, ফিরনি, পোলাও, মাংস ইত্যাদি খাবার। নানারকম সুস্বাদু ঝালমিষ্টি তৈরি করা হয়। সকালে গোসল সেরে সবাই পরেন নতুন
জামাকাপড়। তারপর সুগন্ধি আতর মেখে সমবেত হন ঈদগাহে বা মসজিদে। ঈদের নামাজ শেষে শুরু হয় কোলাকুলি। পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সবাই। ঈদের দিন ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র, ছোট-বড় কোনো ভেদাভেদ থাকে না। একে অন্যকে বরণ করা হয় আন্তরিকভাবে। এদিন বাড়িতে বাড়িতে চলে নিজ নিজ সাধ্যমতো ভালো খাওয়া-দাওয়া। চলে গরিব-দুঃখীদের জন্য দান খয়রাত। এতিমখানা, জেলখানা, দুঃস্থ নিবাসে পরিবেশন করা হয় উন্নত মানের খাবার ।
আরো পড়ুন ঃ
ঈদ উপলক্ষে দেশের পত্র-পত্রিকাগুলো বের করে বিশেষ সংখ্যা। বেতার ও টিভিতে প্রচারিত হয় বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা । বাড়িতে বাড়িতে হয় আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়নের আয়োজন। কেবল মুসলিম সম্প্রদায় নয়, অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও দলে দলে যোগ দেন উৎসবে। যারা পেশাগত কারণে দূর-দূরান্তে থাকেন তাদের কাছে ঈদ বাড়ি ফেরার উৎসব। ঈদে উৎসবের আনন্দের সঙ্গে মেলে ছুটির আনন্দ। ঈদের ছুটিতে ঘর ছেড়ে যারা বাইরে যান, তারা পান ভ্রমণের আনন্দ ।
উপসংহার ঃ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও ঈদ আমাদের দেশে সবার জীবনে নিয়ে আসে আনন্দের হাওয়া। ঈদ-উৎসব মানুষে মানুষে প্রীতির উৎসব। ঈদ উজ্জীবিত করে সম্মিলন চেতনা। উদ্বুদ্ধ করে দুঃখী মানুষের প্রতি সমব্যথী হতে। ঈদের শিক্ষা তাই মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষা।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url