জাতীয় পাখি দোয়েল রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

জাতীয় পাখি দোয়েল রচনা

জাতীয় পাখি : দোয়েল

ভূমিকা ঃ বাংলাদেশে অগণিত পাখির বাস। বাংলাদেশে যেসব পাখি দেখতে পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে দোয়েল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এটি আমাদের জাতীয় পাখি। দোয়েলের মিষ্টিমধুর গান বসন্তের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বাড়তি আনন্দ জোগায়। এখানে সেখানে, পুকুর পাড়ে, ঝোপের মাঝে লুকিয়ে বা উঠানের কোণে ছোট্ট ডালিম গাছের ডালে বসে দোয়েল গান করে সবাইকে মুগ্ধ করে।

আকৃতি ঃ দোয়েল ছোট্ট আকৃতির পাখি। এটি আকারে ছয় ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। এর দুটি সরু পা, দুটি পাখা, দুটি মায়াবী সৌন্দর্যপূর্ণ চোখ এবং সুন্দর ঠোঁট মানুষকে সহজেই কাছে টানে। দোয়েলের মতো সুন্দর পাখি সচরাচর দেখা যায় না। পুরুষ ও স্ত্রীভেদে দোয়েল পাখির রঙে একটু ভিন্নতা দেখা যায়। পুরুষ দোয়েলের গলা, মাথা, বুক ও পিঠ মিশকালো। তবে লম্বাটে সাদা সাদা দাগ আছে। লেজের পালকটি ছাড়া আর সবই সাদা। পক্ষান্তরে স্ত্রী দোয়েলের রঙ অনেকটা বাদামি ও ধূসর। এদের ঠোঁট কালো।

আরো পড়ুন ঃ জাতীয় পশু বাঘ রচনা

লেজ শরীর থেকে অনেকটা লম্বা হয়। পুরুষ দোয়েল বেশ পরিপাটি। এদের লেজ সবসময় উঁচু করে তোলা থাকে। কিন্তু দোয়েল যখন গান গায়; তখন এদের লেজ থাকে ঝোলানো আর লেজের পাখনাগুলো থাকে কিছুটা প্রসারিত।

প্রকৃতি ঃ বাংলাদেশের গানের পাখি হিসেবে সমধিক পরিচিত দোয়েল। কিন্তু এরা বছরের সবসময় গান করে না। শীতের শেষে বসন্তের আগমনে গানের জন্য প্রস্তুত হয়। গান করার সময় এরা সাধারণত নড়াচড়া করে না এবং একটানা অনেকক্ষণ গান করে। দোয়েলের গানের সুর খুবই সুমধুর ও আকর্ষণীয়। দোয়েলের মতো মধুর গানের গলা খুব কম পাখিরই রয়েছে। দোয়েলের গান শুনলে মন আনন্দে মেতে ওঠে এবং প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এ কারণেই দোয়েলকে বলা হয় গানের পাখি ।

গরমের দিনে ঘরের পাশে লেবু বা ডালিম গাছের ডালে বসে দোয়েল মনের সুখে গান করে। অনেক সময় উঠানের পাশে ঝিঙে বা শসা গাছের মাচায় দোয়েল লাফিয়ে বেড়ায় আর শিস দেয়। দোয়েল অনেক সময় অন্য পাখির গানের অনুকরণও করে। দোয়েল খুব শান্ত প্রকৃতির পাখি। কারও কোনো অনিষ্ট করে না। দোয়েল সহজে পোষ মানে। পুরুষ ও স্ত্রী-ে -দোয়েলের স্বভাব ভিন্ন। পুরুষ দোয়েল বছরের বেশিরভাগ সময় ঝোপঝাড়ের তলায় নির্জন জায়গায় থাকতে ভালোবাসে এবং মাঝে মাঝে কেবল সুই-ই, সুই-ই শব্দ করে ।

বাসস্থান ঃ সুন্দর এ ছোট পাখি অগভীর জঙ্গলে একা বা জোড়াসহ থাকে। গভীর জঙ্গলে এদের দেখা যায় না। আবার একেবারে খোলামেলা জায়গায় এরা বাস করে না। দোয়েল আঙিনার কাছাকাছি ঝোপঝাড়ে, গাছের কোটরে, রান্নাঘরের পাশে, বৈঠকখানা বা শয়নঘরের পাশে বাস করে। দোয়েল বড় গাছের ডালে বাসা বাঁধে না। এরা গাছের ফোঁকরে কিংবা কোনো দেয়ালের ফাটলে খড়কুটা দিয়ে বাসা তৈরি করে । এ ছাড়া গাছের গুঁড়ির ফাঁক, পরিত্যক্ত লাইটপোস্টের মাথায় ঘাস, শিকড়, চুল ইত্যাদি বিছিয়ে এরা বাসা বাঁধে ।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের পাখি রচনা

খাদ্য ঃ কীটপতঙ্গই দোয়েলের প্রধান ও সর্বোত্তম খাবার । এরা প্রায় বাগানবাড়ি বা ঘরের আশপাশে খোলা জায়গায় ঘাসের ওপরই বিচরণ করে। ঘাসের উপর ছড়ানো শস্যকণা বা ছোট পোকামাকড় খেয়ে এরা জীবনধারণ করে। ছোট পাখি বলে অতি অল্প পরিমাণ খাদ্যই এদের প্রয়োজন পড়ে। এরা ছুটাছুটি ও গান নিয়ে যতটা ব্যস্ত থাকে, খাবার নিয়ে অতটা থাকে না ।

বংশবিস্তার ঃ প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী দোয়েল তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে লালচে সবুজ এবং এতে লালচে বাদামি ছাপ থাকে । ডিম ফুটে বাচ্চা হয় এবং সেগুলোকে লালন-পালন করে বড় করে তোলে ।

উপসংহার ঃ দোয়েল আকারে ছোট পাখি হলেও রং, আকৃতি ও প্রকৃতিতে খুবই আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। এদের দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। তাই বাংলাদেশের অগণিত পাখিদের ভিড়ে দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখির মর্যাদায় অভিষিক্ত। বাংলার সবুজ-শ্যামল-মায়াবী প্রকৃতির সঙ্গে মিষ্টি এ গানের পাখিটি যেন এক হয়ে আছে।

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url