অনুচ্ছেদঃ গ্রন্থাগার | বাংলা ২য় পত্র অনুচ্ছেদ রচনা

অনুচ্ছেদ রচনা

গ্রন্থাগার

মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থাগারের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত থাকে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির জ্ঞান। শিক্ষান্বেষী মানুষের কাছে তাই গ্রন্থাগার এক জ্ঞানতীর্থ, যেখানে মুক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। পাওয়া যায় জীবনের আলোকিত পথ। ধারণা করা হয়, প্রাচীন রোমেই সবার জন্য উন্মুক্ত প্রথম গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল। প্রাচীন যুগের বিখ্যাত গ্রন্থাগারের মধ্যে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া জাদুঘর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুসলিম বিশ্বে কর্ডোভা, দামেস্ক এবং বাগদাদেও বেশকিছু গ্রন্থাগার ছিল। বর্তমান বিশ্বের বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে ব্রিটেনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ফ্রান্সের বিবলিওথিক ন্যাশনাল লাইব্রেরি, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি, আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেস এবং কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উল্লেখযোগ্য । বাংলাদেশে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরির সহযোগিতায় শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি গ্রন্থাগার দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত হয়। মূলত গ্রন্থাগার অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতের যোগাযোগের অক্ষরসেতু নির্মাণ করে জ্ঞান- বিজ্ঞানকে দেশ থেকে দেশান্তরে এবং যুগ থেকে যুগান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া বহমান রাখে। গ্রন্থাগার হলো বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থের সংগ্রহশালা । এ সংগ্রহ ব্যক্তিগত হতে পারে। হতে পারে পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয়। তবে বহু মানুষের মিলিত প্রয়াসে সংগৃহীত সাধারণ গ্রন্থাগার থেকে নিজ নিজ প্রয়োজন ও রুচিমাফিক জ্ঞান আহরণ করতে পারে সবাই। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে গ্রন্থাগারের সংখ্যা নগন্য। তবে তুলনামূলকভাবে বর্তমানে গ্রন্থাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে শহর, জেলা-উপজেলা ছাড়াও কোনো কোনো ইউনিয়নেও গ্রন্থাগার রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণ সংস্থা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ও প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার রয়েছে। এসব গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুবিধা সংশ্লিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিজ্ঞান ও তথ্য- প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল গ্রন্থাগার তথা ই-বুক পদ্ধতির গ্রন্থাগার। মানুষ উপলব্ধি করছে দৈহিক চাহিদাই সব নয়। মনেরও খাদ্য প্রয়োজন। আর গ্রন্থাগারই মানুষের মনের পছন্দমাফিক রসদের সন্ধান দিতে পারে। কেউ গল্প-উপন্যাস, কবিতার বই পড়ে আনন্দ পায়, কেউ ভ্রমণবৃত্তান্ত কিংবা নাট পড়ে মজা পায়, কারও প্রিয় ধর্ম-দর্শনের বই, কেউ খোঁজে পদার্থ, রসায়ন বা প্রাণিবিজ্ঞান। অনেকে ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে ব্যস্ত। কেউ আবার ঘাঁটে পুরনো দলিল-দস্তাবেজ, প্রাচীন পুঁথি। এভাবেই গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। তবে সুষ্ঠুভাবে গ্রন্থ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ অতি দুরূহ কাজ। নানাবিধ পোকার উপদ্রব, প্রাকৃতিক বিপত্তি এবং অসৎ পাঠক ও গ্রন্থাগারকর্মীদের দায়িত্বহীনতায় বহু উৎকৃষ্ট গ্রন্থ বিনষ্ট হয়ে যায়। গ্রন্থাগারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবারই মনে রাখা উচিত, গ্রন্থাগারে সংগৃহীত গ্রন্থ দেশ ও জাতির অমূল্য সম্পদ। আমাদের দেশে পাবলিক লাইব্রেরি, বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র গ্রন্থাগার, শিশু একাডেমি গ্রন্থাগার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পাঠাগার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য গ্রন্থাগার জ্ঞানপিপাসু মানুষের গ্রন্থপাঠের প্রয়োজন মেটাচ্ছে।

আরো পড়ুন ঃ শিশু অধিকার | বাংলা ২য় পত্র অনুচ্ছেদ রচনা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url