ভাবসম্প্রসারণঃ মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন

ভাবসম্প্রসারণঃ মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন

ভাবসম্প্রসারণ সূচিপত্র ঃ

ভাবসম্প্রসারণ ১ম

ভাবসম্প্রসারণ ২য়

মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন

মূলভাব ঃ যেকোনো কাজের সাফল্যের জন্য চাই প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কর্মপ্রেরণা, নতুবা কাজ উদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে যায়। যারা আপাত প্রতিকূলতাকে জয় করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করে; সাফল্য তাদের নিশ্চিত।

সম্প্রসারিত ভাব ঃ কর্মে সাফল্য লাভ খুব সহজ বিষয় নয়; এর জন্য অসম্ভব নিষ্ঠা ও মানসিক শক্তি প্রয়োজন। আত্মাকে কর্মের প্রতি একনিষ্ঠ করতে পারলেই কেবল সাফল্য অমিতরূপে ধরা দেয়। তবে আত্মাকে একনিষ্ঠ করা অত্যন্ত দুরূহ ও কঠিন কাজ। মানুষের চঞ্চল মনকে বশ করার ক্ষমতা অধিকাংশক্ষেত্রেই তার হাতে থাকে না; সে কারণে আত্মার উদ্বোধনও তার কাছে জটিল হয়ে পড়ে। সহজ কাজও তখন দুরূহ হয়ে তার কাছে ধরা দেয়; চারদিকের প্রতিকূলতাও তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। এমতাবস্থায় মানুষ যদি আত্মশক্তির ওপর আস্থা রাখতে না পারে, তবে কোনোভাবেই সাফল্যের দেখা সে পাবে না। 

জীবনের চলার পথের বন্ধুরতায় মুষড়ে পড়া ব্যক্তি কোনোভাবেই আত্মচেতনাকে সাফল্যকামী করতে পারে না । দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ও দৃঢ়চিত্তই পারে মানুষকে সম্ভাবনাময় করে তুলতে। পৃথিবীর ইতিহাস প্রত্যক্ষ করে দেখা যায়, যাঁরা নিজেদের মনোবলকে একীভূত করে কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করতে পেরেছেন এবং শেষপর্যন্ত আত্মস্পৃহাকে ধরে রেখেছেন, তাঁরাই সাফল্য লাভে স্মরণীয় হয়েছেন। ইংরেজি প্রবাদে বলা হয়েছে, 'Do or die'। সংস্কৃত সাহিত্যেরও নীতিগল্পগুলোতে কর্ম সম্পর্কে এ প্রবাদই উচ্চারিত হয়েছে। বাঙালির ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাঁদের মধ্যেও লক্ষ্যজয়ের অদম্য ইচ্ছা ছিল। সে কারণেই যুগে যুগে তারা নানা বাধাবিপত্তিকে অগ্রাহ্য করে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।

আরো পড়ুন ঃ বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ এবং জীবনের সাথে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু

তবে শুধু মানুষের মধ্যেই নয়, প্রকৃতির নানা প্রাণীর মধ্যেও আমরা কর্মসম্পাদনের অদম্য ইচ্ছার প্রকাশ দেখতে পাই। পিঁপড়েসহ ক্ষুদ্র জীবগুলো কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় ছারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে থাকে। একই প্রবণতা মৌমাছির ক্ষেত্রেও দেখা যায়। নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে তারাও কঠোর পরিশ্রম করে এবং সফলতা লাভ করে। আর সম্রাট নেপোলিয়নের কথা আমরা সবাই জানি— আত্মশক্তিকে কাজে লাগিয়েই তিনি দিগ্বিজয়ী হয়েছিলেন; নিজেকে স্বরণীয় করে রেখেছেন ইতিহাসের পাতায়।

মন্তব্য ঃ সর্বকালে সর্বযুগে আত্মগতায়ী, প্রবল ইচ্ছার অধিকারী ও পরিশ্রমী মানুষই পৃথিবীতে জয়লাভ করেছে। ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে যারা বাস করে সাফল্য তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। তাই সাহস ও প্রতায় নিয়ে সামনে এগিয়ে সকল কর্মে সফলতা অর্জন করতে হবে । [বিঃ দ্রঃ এটি পাঞ্জেরী গাইড বই থেকে সংগ্রহীত]

মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন

ভাব-সম্প্রসারণ ঃ সফলতা অর্জন করতে হলে জীবনে প্রচুর সাধনার প্রয়োজন। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন মানবজীবনের প্রধান কাজ। তা সফল করতে হলে অবশ্যই নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। প্রতিটি মানুষই জীবনে অনেক অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আশায় বুক বাঁধে এই ভেবে যে, জীবনে সে অনেক বড় হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু জীবনের চলার পথ বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। তাই কোনো কাজে সফলতা লাভ সহজ ব্যাপার নয়। বন্ধুর পথকে পায়ে ঠেলে দিয়ে সকল বাধাবিপত্তিকে অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠার সোনালি দুয়ারে পা রাখা সম্ভব। এর জন্য চাই প্রচুর শ্রম, একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা। রোগ, শোক, ব্যাধি জীবনীশক্তিকে স্তিমিত করে। 

লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তাই এসবকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। দেহ এবং মনকে রাখতে হবে সতত সচল । জীবনে যারা বড় হয়েছে তাদের জীবনী পড়ে আমরা জানতে পারি যে, কঠোর অনুশীলনের মধ্য দিয়েই তাঁরা নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলেছেন । কোনো প্রকার হেঁয়ালিপনা, আলস্য এবং জরাজীর্ণতা তাঁদেরকে বাধা সৃষ্টি করতে পারে নি। যে আদর্শকে তাঁরা বুকে ধারণ করেছেন সে আদর্শকে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বময় শক্তি নিয়োগ করেছেন। নির্ভীক যোদ্ধার মতো অসীম সাহসে তাঁরা সম্মুখে অগ্রসর হয়েছেন ।

আরো পড়ুন ঃ বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে

প্রত্যয়ের দৃপ্ত অঙ্গীকারে বেঁধে নিয়েছেন বুক। পাকাপোক্ত মাঝির মতো হাল ধরে পাড়ি দিয়েছেন অকূল সমুদ্র। তাঁরা খুঁজে নিয়েছেন সুবর্ণ দ্বীপ। আর যাদের কাজে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার অভাব ছিল, যারা বারবার আচ্ছন্ন হয়েছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে, তারা কেউই জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে নি। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা-বাসনা অপূর্ণই রয়ে গেছে। হা-হুতাশ আর এক বুক দীর্ঘশ্বাস ছাড়া তারা জীবনে আর কিছুই সঞ্জয় করতে পারে নি জীবনের বেলা শেষে নিয়তির হাতে নিজেদেরকে সমর্পণ করে তারা অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে। কিন্তু এমন জীবন কারো কাম্য হতে পারে না। 

তাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে চাই সুন্দর স্বপ্ন, চাই উঁচু আশা, চাই আত্মবিশ্বাস, চাই ত্যাগ, চাই নিষ্ঠা। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই জীবনকে অনেক সুন্দরময় করে তোলা সম্ভব। প্রতিটি মানুষেরই সুন্দর জীবন, সুন্দর ভবিষ্যৎ একান্ত কাম্য। আর সে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কঠোর পরিশ্রম। অনুশীলনই জীবনকে সুন্দর ও আনন্দময় করে তুলতে পারে এবং তা অস্বাভাবিক কিছুই নয় । [বিঃ দ্রঃ এটি লেকচার গাইড বই থেকে সংগ্রহীত]

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url