অনুচ্ছেদঃ বসন্তকাল | বাংলা ২য় পত্র অনুচ্ছেদ রচনা
বসন্তকাল
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি এই বাংলাদেশ। ঋতুবৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই এ দেশকে বলা হয় রূপসী বাংলা। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এদেশটি যেন ষড়ঋতুর এক অপূর্ব মিউজিয়াম। আর বাংলা বর্ষপঞ্জির সর্বশেষ ঋতুর নাম বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস বসন্তকাল। বসন্তকে বলা হয় ঋতুশ্রেষ্ঠ বা ঋতুরাজ। মূলত প্রতিটি ঋতু এখানে আসে স্বাতন্ত্র্যের অনুপম রূপসজ্জায়। রূপের ঐশ্বর্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ-বাতাস, পথ-প্রান্তর, ফসলের মাঠ। অনুপম বৈচিত্র্যময় ঋতুরঙ্গের এমন বাহারি প্রকাশ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। তাই রূপমুগ্ধ করি তাঁর আবেগস্নিগ্ধ উচ্চারণে বলেন- ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।' বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামলিমাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে চমৎকারভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। বারো মাসে ছয় ঋতুর এ দেশে প্রতিট ঋতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করে এবং নিজের অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপহার দিয়ে চলে যায়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এদেশে ঋতুর আবির্ভাব ঘটে এবং পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়। তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ এবং রূপ-ঐশ্বর্যে ঋতুগুলো একটি থেকে আরেকটি পৃথক । প্রতিট ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রং ও সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে প্রকৃতিপ্রেমিক মানুষকে। স্বভাবে ও মেজাজে এক-একটি ঋতু এক-এক রকম। ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাসে বসন্ত ঋতুও আসে বৈচিত্র্যময় অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে । শীত শীত মাঘের শেষে শুরু হয় ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী গান। আসে সবুজ কচি কিশলয় শোভিত পুষ্প রতির পরম লগ্ন। দখিনা হাওয়ায় ভরে যায় মন-প্রাণ। বাতাসে ফুলে ওঠে নৌকার রঙিন পাল। রঙিন হয়ে ওঠে নর-নারীর ঘরোয়া জীবন। নতুন পাতায় রোদ লেগে পান্নার মতো ঝলমল করে। বসন্তের গানের পাখি কোকিল ছড়িয়ে দেয় উদাস করা কুহুতান। ফুলে ফুলে প্রকৃতির নতুন সাজ। সুবাসমাখা বাতাসে মাতোয়ারা বাংলার প্রকৃতি। মন গেয়ে ওঠে ‘ওমা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে...।' এমনই মন-প্রাণ পাগল করা বসন্তকালের মৃদু-মন্দ দখিনা বাতাসের জাদুস্পর্শে বর্ণ-বিরল বাংলাদেশের সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব পুলকপ্রবাহ, বন-বীথির রিক্ত শাখায় জাগে কচি-কচি পাতার অফুরন্ত উল্লাস। বাতাসের মৃদু মর্মর ধ্বনি এবং দূর বনান্তরাল থেকে ভেসে আসে কোকিলের গান এবং প্রকৃতি হয়ে ওঠে মায়াময় প্রাণময় আনন্দভুবন। অশোক-পলাশের রঙিন বিহ্বলতায়, শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার বিপুল বিন্যাসে বিকশিত মধুমালতী ও মাধবী-মঞ্জরির গন্ধমদির উচ্ছল প্রগলভতায় সমগ্র গগনতলে বর্ণ, গন্ধ ও গানের তুমুল কোলাহলে শুরু হয়ে যায় এক আশ্চর্য মাতামাতি। তখন আনমনে গেয়ে ওঠে ‘মহুয়ার মালা গলে কে তুমি এলে/নয়ন ভুলানো রূপে কে তুমি এলে।' বসন্তকে এ কারণেই বলা হয় ঋতুরাজ। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার ফলে সুখকর সময়কাটানো যায় এসময় । এই ঋতুতে অনেক উৎসব হয়, বিশেষ করে হিন্দুদের বাসন্তী পুজা, দোলযাত্রা, চৈত্রসংক্রান্তি প্রভৃতি উৎসব বিপুল সমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বসন্তকালের প্রথম দিকেই 'ভালোবাসা দিবস' পালিত হয় মহা ধুমধামে এবং নগরকেন্দ্রিক বসন্ত উৎসবও আয়োজন করা হয় মহাসমারোহে। এ সবই ঋতুরাজ বসন্তের উপহার। রূপসী বাংলার এই অপরূপ রূপবৈচিত্র্য শহরবাসী ও শহরমুখী বাঙালিরা আজ খুব একটা অনুভব করতে পারে না সত্য কিন্তু ঋতুরাজ বসন্তের নিমন্ত্রণ ও বসন্তের দূত কোকিলের গান তাদের অন্তরে বেজে চলে নিরন্তর
আরো পড়ুন ঃ গ্রন্থাগার | বাংলা ২য় পত্র অনুচ্ছেদ রচনা
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url