ভাবসম্প্রসারণঃ পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর
ভাবসম্প্রসারণ সূচিপত্র ঃ
পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর
ভাব-সম্প্রসারণ ঃ পাপ পুণ্য মিলেই এ দুনিয়া। পাপ অপবিত্র কিন্তু পাপী অপবিত্র নয় । কেননা, সে পাপ দ্বারা কলুষিত। তাই পাপীকে নয় বরং পাপকে ঘৃণা করতে হবে। পাপ বলতে আমরা অন্যায় অবিহিত কাজ, অধর্মকে বুঝি। যে অন্যায় কাজ, অধর্মের কাজ করে, তাকে আমরা পাপী বলি। সাধারণভাবে আমরা পাপ ও পাপী উভয়কেই ঘৃণা করি; কিন্তু এটা ঠিক নয়। পাপ অবশ্যই ঘৃণার কাজ, কারও জন্যই তা বাঞ্ছনীয় নয়। পাপের ফলে মানুষের ইহকাল ও পরকাল দু-ই নষ্ট হয়। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীতে যখন একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয় তখন সে থাকে নিষ্পাপ। তার বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে চাওয়া-পাওয়ার প্রসার ঘটে।
না চাইতেই যে পায় সে হয়ত এ সংঘাতকে এড়াতে পারে। কিন্তু যে শিশু জন্মের পর থেকে বা পরবর্তীতে বিরূপ পরিবেশে বড় হয়, দুঃখকষ্ট, ক্ষুধা আর নির্যাতনের সাথে যার বাস, জীবনের প্রয়োজনে তার পক্ষে সমাজের নিষিদ্ধ পথে, পাপের পঙ্কিল পথে পা বাড়ানো অস্বাভাবিক নয়। বাধ্য হয়েই সে পাপী হয়। কিন্তু জন্মের সময় তো সে পাপী ছিল না। বরং পরিবেশের প্রতিকূলতাই তাকে পাপী করেছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে; স্নেহের, ভালোবাসার একটু পরশ পেলে হয়তো বা তার হৃদয়ে সৃষ্টি হতে পারে অনুতাপের অমিয় ধারা। এ জগতে এমন অনেক উদাহরণ আছে, যাঁরা জীবনের একটি সময়ে অনেক পাপ কাজ করেছেন কিন্তু পরবর্তী জীবনে তাঁরাই মানবকুলের শিরোমণি হিসেবে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন ঃ জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা
উদাহরণ হিসেবে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা)-এর কথা বলা যায় যিনি ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-কে হত্যার জন্য উন্মুক্ত তরবারি নিয়ে হযরতের (স) দিকে ছুটে গিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তী জীবনে তিনি হয়েছেন আদর্শ পুরুষ । তাই পাপীকে ঘৃণা করে সমাজকে কলুষমুক্ত করা সম্ভব নয়। সেজন্যই পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো পাপকার্য অনুষ্ঠিত হতে দেখলে সে যেন হাত দিয়ে তাতে বাধা দেয়, নয়তো মুখ দিয়ে তা নিষেধ করে। আর যদি তাও না পারে তবে যেন অন্তত অন্তর দিয়ে সেই পাপকার্যকে ঘৃণা করে।” পাপ তাই সর্বদা বর্জনীয়; কিন্তু পাপীকে বর্জন করা বা ঘৃণা করা ঠিক নয়। কেননা মানুষ অনেক সময়ই পাপ করে নানা কারণে বা অবস্থার বিপাকে পড়ে। ইচ্ছা করে হয়তো সে তা করে নি ।
অথবা অজ্ঞতার কারণে কিংবা অভাব অনটনে পড়ে বা রিপুর তাড়নায় বাধ্য হয়ে সে পাপ করেছে। অনেকে পরিণাম না বুঝে অনেক কাজ করে যা অত্যন্ত খারাপ, কিন্তু তাদের বুঝিয়ে বললে তখন সে পাপের জন্য তারা অনুশোচনা করে, অনুতপ্ত হয়। এমতাবস্থায় পাপীকে ঘৃণা করা কখনো ঠিক নয়। বরং ক্ষমা করে মহত্ত্ব দিয়ে পাপীকে কাছে টেনে নিলে পাপীও পাপের পথ ছেড়ে সুপথে ফিরে আসে। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) তাঁর অশেষ ক্ষমাগুণ দিয়ে বহু পাপীকে সৎপথে ফিরিয়ে এনেছিলেন । পাপীকে ঘৃণা করা যাবে না। পাপকে ঘৃণা করতে হবে, পাপীকে ক্ষমার মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। [বিঃ দ্রঃ এটি লেকচার গাইড বই থেকে সংগ্রহীত]
পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করো
মূলভাব ঃ পাপ করা ঘৃণ্য কাজ। তাই যে পাপ করে সে পাপীকে ঘৃণার চোখে দেখে সমাজ। কিন্তু পাপীকে ঘৃণার চোখে না দেখে পাপকে ঘৃণার চোখে দেখাই শ্রেয় ৷ কারণ একজন মানুষ যেকোনো পরিস্থিতির শিকার হয়ে পাপী হতে পারে ।
সম্প্রসারিত ভাব ঃ পাপ করা অবশ্যই একটি ঘৃণ্য কাজ। পাপ করাকে কোনো সুস্থ বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন লোক সমর্থন করে না এবং তা করা উচিতও নয় । কিন্তু যে পাপ করে সে পাপী আমাদের মনুষ্য সম্প্রদায়েরই একজন। পাপীরও রয়েছে মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন ব্যক্তিসত্তা। তাই পাপকে ঘৃণা করলেও পাপীকে ঘৃণা করাটা অমানবিক হয়ে পড়ে। পাপীকে ঘৃণা না করে বরং তাকে পাপকর্ম ছেড়ে দেওয়ার জন্য পথনির্দেশ করাই উত্তম। ভালোবাসা দিয়ে পাপীকে তার পাপকর্ম থেকে ফিরিয়ে এনে যদি তাকে সুস্থ জীবন দেওয়া যায়, তবে তাই হবে পাপীর জন্য সর্বোত্তম ।
আরো পড়ুন ঃ পরের জন্যে আত্মবিসর্জন ভিন্ন পৃথিবীতে স্থায়ী সুখের অন্য কোনো মূল্য নাই
আর সমাজ ও রাষ্ট্র পাপীর ভারবহন থেকে হবে মুক্ত । একজন ব্যক্তি পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে পাপকর্ম করতে পারে, তাই তাকে সুযোগ করে দেওয়া উচিত পাপকর্ম ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তা না করে তাকে ঘৃণাভরে এড়িয়ে চললে সে কখনোই অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসার সুযোগ পাবে না। বরং ধীরে ধীরে সে পঙ্কিল জগতের আরও অতলে হারিয়ে যাবে। পাপকে ঘৃণাভরে দূরে সরিয়ে রেখে, পাপীকে কাছে টেনে নিয়ে সংশোধনের সুযোগ করে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
মন্তব্য ঃ পাপী একজন মানুষ । তাই তাকে ঘৃণা না করে, তার কর্ম পাপকে ঘৃণা করে, তাকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত। ঘৃণা করলে পাপী কখনোই আর সুস্থ জীবনে ফিরতে পারে না। জাতি ও সমাজের জন্য সে শুধু বোঝা হয়েই থাকে । [বিঃ দ্রঃ এটি পাঞ্জেরী গাইড বই থেকে সংগ্রহীত]
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url