ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
ভাবসম্প্রসারণ সূচিপত্র ঃ
ভাবসম্প্রসারণ ২য়ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
মূলভাব ঃ দেশ ও মানবকল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে ত্যাগের অনন্ত মহিমা। আর এ ত্যাগের মধ্যেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত সুখ । ভোগলিপ্সা মানুষকে শুধু লোভী করে তোলে, সুখী করতে পারে না।
সম্প্রসারিত ভাব ঃ মানুষ স্বভাবতই প্রবৃত্তির দাস। প্রবৃত্তির শৃঙ্খল মোচনের মাধ্যমেই মানুষের মুক্তি ঘটে। আর এ মুক্তির মাধ্যমেই পাওয়া যায় জীবনের আস্বাদ। ভোগে আসক্তি জন্ম নেয়, আসক্তির দ্বারা ভোগের আকাঙ্ক্ষা বাড়ে। মানুষ তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, সীমাহীন দুঃখ- দুর্দশায় পতিত হয়ে সে যন্ত্রণাময় জীবনযাপন করে। প্রচুর ধনসম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও মনের দিক দিয়ে সে হয় দরিদ্রের চেয়েও দরিদ্র। ভোগের বশবর্তী লোক নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থেই মশগুল থাকে। তার দ্বারা পৃথিবীর মানুষের জন্য কোনো মহৎ কাজ করা সম্ভব হয় না।
আরো পড়ুন ঃ পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে
মৃত্যুর সাথে সাথে তার স্মৃতি মানুষের কাছে ম্লান হয়ে যায় । অপর পক্ষে, ত্যাগের মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই স্বীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল হতে পারে। ত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে, পৃথিবীর মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পায়। ত্যাগেই মানবজীবনের সার্থকতা প্রতিপন্ন হয়, মানুষ প্রকৃত সুখ লাভে সক্ষম হয়। তাই ত্যাগই আমাদের চরিত্রের সর্বোচ্চ আদর্শ হওয়া উচিত। ত্যাগই মহাশক্তি। কেবল ত্যাগের দ্বারাই মানবজীবন সার্থক করা সম্ভব। মানুষ যদি অপরের কল্যাণে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে তাতে তার চরিত্রে মহত্ত্বেরই প্রকাশ ঘটে। এখানেই জীবনের যথার্থ গৌরব, প্রকৃত সুখ ।
মন্তব্য ঃ জীবনের সুন্দর বিকাশের জন্যে স্বার্থত্যাগ বাঞ্ছনীয়। ভোগে জীবনের কোনো সার্থকতা নেই, নেই ন্যূনতম সুখ। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাঝেই রয়েছে প্রকৃত সুখ । [বিঃ দ্রঃ এটি পাঞ্জেরী গাইড বই থেকে সংগ্রহীত]
ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।
ভাব-সম্প্রসারণ ঃ ত্যাগ করতে না পারলে ভোগ করে আনন্দ পাওয়া যায় না। স্বার্থলোলুপতা, ভোগাকাঙ্ক্ষা বা আত্মসুখপরায়ণতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থি। যে ব্যক্তি শুধু নিজের স্বার্থচিন্তায় তৎপর, নিজের ভোগবিলাসে নিমজ্জিত, জগৎ ও জীবনের বৃহত্তর অঙ্গন থেকে সে স্বেচ্ছানির্বাসিত। জগতবাসীর ভালোমন্দ, সুখদুঃখ, মঙ্গল-অমঙ্গল তার হৃদয়মনকে স্পর্শ করে না, এ পৃথিবীর আলো-আঁধার তার মানসরাজ্যে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। বিরাট এ জগৎ সংসারের কল্যাণ-অকল্যাণ সম্পর্কে যে একান্ত নির্লিপ্ত ও উদাসীন, তার মানব জনম বৃথা। তার বেঁচে থাকা না থাকা সমান। কেননা জীবনের সার্থকতা তথা মনুষ্য জন্মের সফলতা কখনো স্বার্থপরতায় নিহিত নয়।
মানুষের যে দুর্লভ গুণটি তাকে অপরাপর সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে তা-ই মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্বের সারকথা, জাগ্রত বিবেককে শুভ ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করা। অপরাপর প্রাণীর প্রতি সহজাত মমত্ববোধ মানুষকে মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত করে তোলে। তাই মানুষকে হতে হয় অপরের হিতৈষী। আত্মসুখ বিসর্জন দিয়ে পরের কল্যাণে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটে। ভোগ মানুষকে অবসন্ন করে, তার চিন্তাশক্তিকে ভোঁতা করে ও জীবনকে হীনতার অভিশাপপুষ্ট করে। আগুনে ঘি ঢাললে আগুন যেমন না নিভে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে, তেমনি ভোগবিলাসীর জীবনও নতুন থেকে নতুনতর ভোগের নেশায় বহু গুণ বেগে জ্বলতে থাকে।
আরো পড়ুন ঃ দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ
অথচ ত্যাগের মধ্যেই পরম শান্তি লাভ করা যায়, জীবনকে গৌরবান্বিত করে তোলা যায়। ত্যাগ মানুষের পরম লক্ষ হওয়া উচিত। ভোগীকে কেউ মনে রাখে না, মনে রাখে ত্যাগীকে। এ পৃথিবীতে মানুষের জন্মই হয়েছে মানুষের তথা সৃষ্টির উপকার করার জন্য। যে মানুষ শুধু পেতেই চায় দিতে চায় না, সে পাওয়ারও উপযোগী নয় । তাকে কোনো কিছু দান করার অর্থই হবে অপাত্রে প্রদান। বস্তুত ত্যাগের মধ্যেই পরিপূর্ণ তৃপ্তি ও সুখ। এ জন্যই বলা হচ্ছে ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। [বিঃ দ্রঃ এটি লেকচার গাইড বই থেকে সংগ্রহীত]
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url