হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি | কোন বেদে কি আছে জানুন

সুধি সনাতনী ভক্তবৃন্দ সকলকে জানাই আমার নমস্কার। প্রতিদিনের মতই আজকেও আমরা আরও একটি ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে জানব। আজকে আমরা যে বিষয়ে জানব তা হচ্ছে হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি এবং কোন বেদে কি আছে সে বিষয়ে। আমরা সকলেই জানি যে বেদ হিন্দুদের আদি ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবার এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা দরকার।

হিন্দু ধর্মের বেদ কি

সুধি সনাতনী ভক্তবৃন্দ আপনারাও যদি হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি এবং কোন বেদে কি আছে এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ ধৈর্য্য সহকারে পড়ুন। আজকের পোস্টে আমরা হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি, কোন বেদে কি আছে এই বিষয়ে সবিস্তারে বর্ণনা করব। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করি

পোস্ট সূচিপত্রঃ হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি - কোন বেদে কি আছে বিস্তারিত জানুন

হিন্দু ধর্মগ্রন্থের ধারণা

সুধি সনাতনী ভক্তবৃন্দ হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি এবং কোন বেদে কি আছে তা জানার আগে হিন্দু ধর্মগ্রন্থের কিছুটা ধারণা আপনার জানা থাকা আবশ্যক। তাহলে চলুন আমরা প্রথমেই ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জানি, 

আমরা সকলেই জানি, যে গ্রন্থে অতি প্রাকৃতিক সত্তার কথা বলা হয়ে থাকে, তাকে ধর্মগ্রন্থ বলা হয়। ধর্মগ্রন্থে থাকে ঈশ্বরের বাণী ও ঈশ্বরের মাহাত্ম্যের বর্ণনা সমূহ। আরো থাকে সৎ ও পরিশুদ্ধ জীবন-যাপনের বিধিবিধান। আমাদের মঙ্গল হয় এমন উপদেশ সমূহ ব্যপ্ত থাকে এই গ্রন্থে। এ সকল উপদেশ যে কেবল সরাসরি দেয়া হয় তা নয়। 

▶▶ আরো পড়ুন ঃ হিন্দু ধর্মের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল মন্ত্র বাংলা অর্থ সহ

বরং উপাখ্যানের মধ্য দিয়েও বিভিন্ন উপদেশ দেওয়া হয়। উপদেশের মাধ্যমে আমরা পাই ধর্মের নৈতিক শিক্ষা। এ নৈতিক শিক্ষা আমাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আমাদের অনেক ধর্মগ্রন্থ আছে। যেমন বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা, শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত ইত্যাদি।

এসব ধর্ম গ্রন্থে সকল ঈশ্বরের শ্রুতি কথা বর্ণিত হয়েছে। এসব ধর্ম গ্রন্থ সকল সনাতনীদের জানা আবশ্যক। তাই আজকে আমরা হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে পুরাতন ও প্রধান ধর্ম গ্রন্থ বেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বেদ কি ও বেদ শব্দের ব্যুৎপত্তি

সুধি সনাতনী ভক্তবৃন্দ এখন আমরা জানব বেদ কি ও বেদের উৎপত্তি সম্পর্কে। চলুন জেনে নেই উক্ত বিষয়ে

বেদ হচ্ছে প্রাচীন ভারতের লিপিবদ্ধ একাধিক গ্রন্থের সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রন্থ গুচ্ছ। বেদ অপৌরুষেয় অর্থাৎ বেদকে সৃষ্টি করেনি উপলব্ধি করেছেন মাত্র। এক ধর্মীয় প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আর্ষ শাস্ত্র অনুসারে সৃষ্টির শুরুতে মানব কল্যাণে পরম ব্রক্ষই বেদের এই জ্ঞান প্রকাশ করেন। সর্বপ্রথম চার ঋষি এই জ্ঞান প্রাপ্ত হন।

এই চার ঋষিদের নাম হচ্ছে অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরা। এই চার ঋষিগণ সর্বপ্রথম বেদের জ্ঞান প্রাপ্ত হন পরবর্তীতে তাঁদের হাত ধরেই  বেদের এই জ্ঞান অন্যান্য ঋষিরাও আয়ত্ত করেন। এছাড়াও বেদকে শ্রুতি শাস্ত্রও বলা হয়ে থাকে। কারণ বেদের কোনো বই বা পুস্তক নেই। বৈদিক ঋষিগণ তাঁদের ধ্যানের মাধ্যমে প্রাপ্ত করা বেদের এই জ্ঞান তাঁদের শিষ্যদের শোনাতেন। আর শিষ্যরা বেদের এই জ্ঞান শ্রবণ করে করে অধ্যায়ণ করতেন। 

এতোক্ষণ ধরে আমরা জানলাম বেদ কি সে বিষয়ে। এখন আমরা বেদের উৎপত্তি সম্পর্কে জানব। আমরা সকলেই অবগত আছি যে, বেদ সৃষ্ট নয় দৃষ্ট। বেদ কেউ সৃষ্টি করেননি বেদ নিজেই নিজের স্রষ্টা। সনাতনীদের বিশ্বাস অনুসারে সৃষ্টির আদিতে এই বেদ সৃষ্টি হয়েছে এবং অনন্ত কাল ধরে এটি মানব কল্যাণে জ্ঞান প্রকাশ করে আসছে। বেদ শব্দটি বিদ্ ধাতু থেকে উৎপন্ন। আর বিদ্ শব্দ ধারা জ্ঞানার্থ, সত্যার্থ, লাভার্থ ও বিচারার্থ এই চার প্রকার অর্থ প্রকাশ পায়।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে রাশি জানার উপায় | রাশিফল নির্ণয়

'বিদ্' ধাতুর সঙ্গে 'ঘঞ্' এই প্রত্যয় যোগে বেদ শব্দটি সিদ্ধ হয়। আবার বেদ শব্দেরও দুটি অর্থ লক্ষ্য করা যায়। একটি হচ্ছে মূখ্য ও অপরটি হচ্ছে গৌণ। মূখ্য শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞানরাশি আর গৌণ শব্দের অর্থ হচ্ছে শব্দরাশি। সুধি সনাতনী ভক্তবৃন্দ তাহলে আমরা এই অনুচ্ছেদ থেকে বেদ কি ও বেদ শব্দের ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পেলাম। চলুন এবার আমরা একে একে বেদের আরো তথ্য উদঘাটন করার চেষ্টা করি।

বেদের সাধারণ পরিচয়

সুধি সনাতনী ভক্ত যেতুহে আপনি আমাদের পোস্টের এই পর্যন্ত চলে এসেছেন তার মানে আপনি বেদ সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আগ্রহী। আপনি যদি আমাদের আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে আপনি বেদ সম্পর্কে অনেক জ্ঞান আয়ত্ত করতে পারবেন। তাহলে চ

বেদ হিন্দুদের সবচেয়ে পুরাতন এবং প্রধান ধর্মগ্রন্থ । বেদকে আদি ধর্ম গ্রন্থ নামেও অভিহিত করা হয়। 'বেদ' শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। আর জ্ঞান শব্দের অর্থ হচ্ছে পবিত্র, বিচিত্র ও সুন্দর। এ জ্ঞান স্রষ্টা ও প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, জ্ঞানের কি শেষ আছে? জ্ঞান কি চেষ্টা ছাড়া পাওয়া যায়?

তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, জ্ঞানের কোনো শেষ নেই। জ্ঞান অনন্ত ও অশীম। জ্ঞান হচ্ছে পবিত্র, বিচিত্র ও সুন্দর এই তিন শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। আর এই জ্ঞান হচ্ছে স্রষ্টা ও প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান। এই জ্ঞান অর্জন করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা করতে হয়, সাধনা করতে হয় তবেই এই জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।

অনেকেই মনে করে গভীর চিন্তায় ডুবে যাওয়া বা নিমগ্ন হওয়ার মাধ্যমে এই জ্ঞান অর্জন করা যায়। আসলে তা একটা ভুল ধারণা। মূল সত্য হচ্ছে গভীর চিন্তায় ডুবে যাওয়া বা নিমগ্ন হওয়াকে বলে ধ্যান । আর এই ধ্যান হলো সত্যকে উপলব্ধি করার একমাত্র উপায়। এখন অনেকেই বলে বসতে পারেন তাহলে সত্য কি? আসুন আপনার মনের এই সংঙ্গা টাও দূর করে দিই। 

▶▶ আরো পড়ুন ঃ একাদশী তালিকা ২০২৪ ইসকন এবং বৈষ্ণব মতে সঠিক সময় জানুন

সত্য হলো চিরন্তন বা সনাতন । যা সনাতন তার কোনো অন্ত নেই । এ সত্য কে সৃষ্টি করা যায় না, এ সত্য গভীর ধ্যানের আলোতে দর্শন করা যায় বা উপলব্ধি করা যায় মাত্র। প্রাচীনকালে যাঁরা এই সত্য বা জ্ঞান এবং স্রষ্টার মাহাত্ম্য দর্শন বা উপলব্ধি করতে পারতেন, তাঁদের বলা হতো ঋষি । আর বেদ হচ্ছে এই ঋষিদের ধ্যানলব্ধ পবিত্র জ্ঞান। 

গভীর ধ্যানের মাধ্যমে ঋষিগণ সেই সত্যকে দর্শন করে তাকে ভাবের আবেগে প্রকাশ করেছেন। এ জন্যই বলা হয়, বেদ সৃষ্ট নয়, দৃষ্ট । অর্থাৎ বেদ কেউ সৃষ্টি করেননি, উপলব্ধি করেছেন মাত্র । বেদে বহু দেব-দেবীর বর্ণনা পাওয়া যায় । যেমন - অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র, বিষ্ণু, বায়ু, বরুণ, রুদ্র, যম, ঊষা, বাক্, রাত্রি, সরস্বতী ইত্যাদি । 

তবে বেদে এটিও বলা হয়েছে যে, একই পরমাত্মা থেকে সকল দেব-দেবীর উদ্ভব তথা জন্ম। প্রত্যেক দেব-দেবী তাঁদের নিজস্ব গুণ ও শক্তি ভেদে তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন দেব-দেবী রূপে প্রকাশিত । ঋষিগণ বেদে এই সকল দেব-দেবীর মাহাত্ম্য তুলে ধরেছেন। তাঁদের স্তুতি বা প্রশংসা করেছেন এবং অসাধারণ শক্তি ও প্রভাবসম্পন্ন দেব-দেবীর কাছে ধন-সম্পদ, সুখ ও শাস্তি প্রার্থনা করেছেন ।

বেদের বৈদিক দেবতা কারা?

সুধি সনাতনী ভক্তবৃন্দ ইতিপূর্বে আমরা বেদের সাধারণ পরিচয় সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা বেদের বৈদিক দেবতা সম্পর্কে জানব। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করি, 

ঋষিগণ বেদের দেবতাদের তিন ভাগে ভাগ করেছেন। এবং তাদের বৈদিক দেবতা নামে অভিহিত করেছেন। 

বৈদিক দেবতা ঃ 

  • স্বর্গের দেবতা
  • অন্তরিক্ষের দেবতা
  • মর্ত্যের দেবতা

১. স্বর্গের দেবতা ঃ এঁদের ক্ষমতাই শুধু বোঝা যায়। এঁরা পৃথিবীতে নেমে আসেন না। যেমন- সূর্য, যম, বরুণ, প্রভৃতি ।

২. অন্তরিক্ষের দেবতা ঃ এঁদের ক্ষমতা বোঝা যায়, দেখাও যায় । এঁরা মর্ত্যে নেমে আসেন কিন্তু অবস্থান করেন না । যেমন— ইন্দ্র, বায়ু ইত্যাদি ।

৩. মর্ত্যের দেবতা ঃযে সকল দেবতা মর্ত্যে বা পৃথিবীতে আসেন এবং অবস্থান করেন তাঁদের বলা হয় মর্ত্যের দেবতা । যেমন- অগ্নি দেবতা ।

অগ্নিকে আমরা পৃথিবীতে দেখতে পাই । তাই তাঁর কাছে ভালো ভালো জিনিস উৎসর্গ করে তাঁরই মাধ্যেমে অন্যান্য দেবতাদের নিকট প্রার্থনা জানানো হয়। এভাবে আগুন জ্বেলে বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করে দেবতাদের আহ্বান জানানো এবং ও এই প্রার্থনা করাকে যজ্ঞ বলা হয় ।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ একাদশী পারনের নিয়ম ও একাদশীতে কি কি খাওয়া নিষিদ্ধ জানুন

বেদের ছন্দোবদ্ধ বাক্যকে বলা হয় মন্ত্র । ঋষিরা বেদ থেকে মন্ত্র উচ্চারণ করে ধর্মানুষ্ঠান বা উপাসনা করেছেন । বৈদিক উপাসনা পদ্ধতি ছিল যজ্ঞ বা হোম করা । এছাড়া বেদের বাক্য সুর দিয়ে যজ্ঞের সময় গান করা হয় । বেদে রয়েছে এই রকম কিছু গান । এই গানকে বলা হতো সাম । জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের বিচিত্র জ্ঞানের কথাও বেদে রয়েছে ।

হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি

সুধি সনাতনী ভক্তবৃন্দ আপনারা নিশ্চয়ই পোস্ট পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেছেন তাই না? চিন্তার কোন কারন নেই আমরা পোস্টের প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি। এখন আমরা জানব হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি সেই বিষয়ে যা আমাদের আজকের পোস্টের মূল বিষয় ছিল।

তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি । আমরা ইতিমধ্যে সকলেই জানি যে বেদ হিন্দুদের সবচেয়ে পুরাতন ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ। মূলত ঋষিগণ তাঁদের ধ্যানের মাধ্যমে এই জ্ঞান রপ্ত করেছেন। ঋষিদের রপ্ত করা এই জ্ঞান তাঁদের শিষ্যদের শোনাতেন ।

এসব বিষয়বস্তু ও রচনা রীতির পার্থক্য সামনে রেখে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদকে বিভক্ত করেছেন বলে তাঁকে বলা হয়েছে বেদব্যাস । তিনি বেদকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন।

হিন্দু ধর্মের বেদ চার প্রকার যথা ঃ 

  • ঋগ্বেদ
  • সামবেদ
  • যজুর্বেদ
  • অথর্ববেদ

▶▶ আরো পড়ুন ঃ কোজাগরী লক্ষী পূজার পাঁচালী ও লক্ষী পূজার সকল মন্ত্র একসাথে জানুন

কোন বেদে কি আছে?

সুধি সনাতনী ভক্তবৃন্দ ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি এই বিষয়ে। এখন আমরা জানব কোন বেদে কি আছে সেই বিষয়ে। আপনিও যদি উক্ত বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে ধৈর্য্য সহকারে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন

হিন্দু ধর্মে চার প্রকার বেদের কথা উল্লেখ রয়েছে যথা - ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ। এই চার প্রকার বেদের আবার কিছু আলাদা আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। যা আমার আপনার সকলের জানা একান্ত প্রয়োজন। বেদ সকল শাস্ত্রের মূল। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে বেদ থেকেই সকল শাস্ত্রের সৃষ্টি তথা জন্ম হয়েছে।

চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক কোন বেদে কি আছে বা কোন বেদের কি মাহাত্ম্য 

১. ঋগ্বেদ ঃ 

চার প্রকার বেদের মধ্যে প্রথম অংশটি হচ্ছে ঋগ্বেদ । এই গ্রন্থে সকল প্রকার শ্লোক বা শ্রুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ঋগ্বেদে উল্লিখিত প্রতিটি শ্লোককে ঋক্ বলে সম্বোধন করা হয়। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে ঋক্ কী?

ঋক্ মানে হচ্ছে মন্ত্র । ঋগ্বেদের মধ্যে রয়েছে সকল দেবতাদের স্তুতি ও প্রার্থনামূলক মন্ত্র সমূহ । এখানে স্তুতি মানে প্রশংসা আর প্রার্থনা মানে কোনো কিছু চাওয়া । প্রার্থনা করে এক এক দেবতার কাছ থেকে এক এক বিষয় চাওয়া হয় । 

ঋগ্বেদের মধ্যে প্রায় ১০৫৫২টি ঋক্ বা মন্ত্র রয়েছে। এই সকল ঋক্ বা মন্ত্র গুলো পদ্যে বা ছন্দে রচিত যা এক ধরনের কবিতা স্বরূপ । ঋগ্বেদের মধ্যে অগ্নি, ইন্দ্ৰ, বিষ্ণু, ঊষা, রাত্রি প্রভৃতি দেব-দেবীর স্তুতি ও প্রার্থনামূলক মন্ত্র রয়েছে। এছাড়াও ঋগ্বেদের মধ্যে মৃত্যু প্রতিরোধ করার মহা মন্ত্র তথা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র ও জগৎ বিখ্যাত গায়ত্রী মন্ত্র ও বর্ণিত হয়েছে।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

৩. যজুর্বেদ ঃ

বেদের দ্বিতীয় খণ্ডটি হচ্ছে যজুর্বেদ । যজুঃ মানে হচ্ছে যজ্ঞ । যজুর্বেদে রয়েছে এমন কিছু ঋক্ বা মন্ত্র যেগুলো শুধুমাত্র যজ্ঞ করার সময় উচ্চারিত করা হয়। এই বেদে মূলত যজ্ঞের নিয়মাবলী ও পদ্ধতি সমূহ বর্ণিত হয়েছে । এই বেদ দুটি ভাগে বিভক্ত যথা এই বেদের প্রথম অংশটি হচ্ছে কৃষ্ণ যজুর্বেদ ও দ্বিতীয় অংশটি হচ্ছে শুক্ল যজুর্বেদ । বেদের এই দুটি অংশে মোট ৪০৯৯টি মন্ত্র রয়েছে যা যজ্ঞের সময় পাঠ করা হয়।

২. সামবেদ ঃ

বেদের তৃতীয় খণ্ডটি হচ্ছে সামবেদ। সাম মানে হচ্ছে গান । এই বেদে সংগৃহীত হয়েছে গান, ছন্দ ও নিত্য সমূহ। যজ্ঞ করার সময় কোনো কোনো ঋক বা মন্ত্র আবৃত্তি না করে সুরাকারে গাওয়া হতো । যজ্ঞে দেবতাদের উদ্দেশ্যে এই গান গাওয়া হয়। সামবেদে সর্বমোট ১৮৭৫টি মন্ত্র আছে । 

৪. অথর্ববেদ ঃ

বেদের চতুর্থ তথা সর্বশেষ খণ্ডটি হচ্ছে অথর্ববেদ। এই বেদে চিকিৎসা বিজ্ঞান, বাস্তুকলা, ইত্যাদি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের জ্ঞান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অথর্ববেদে ২০ টি শাখা রয়েছে এবং এই বেদে মন্ত্রের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৬০০০ এর মতো। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে ভারতীয় প্রথম চিকিৎসা শাস্ত্রের উদ্ভব হয় এই গ্রন্থ থেকে।

বেদের যে চারটি ভাগ রয়েছে, এর একেকটি ভাগকে সংহিতা বলা হয়েছে । যেমন- ঋগ্বেদ সংহিতা, সামবেদ সংহিতা, যজুর্বেদ সংহিতা এবং অথর্ববেদ সংহিতা ।

মনুষ্য জীবনে বেদের শিক্ষা ও গুরুত্ব

বেদ পাঠ করলে স্রষ্টা, বিশ্বপ্রকৃতি ও জীবন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। বেদের প্রত্যেকটি খণ্ডের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । ঋগ্বেদ সংহিতা পাঠ করলে আমরা বিভিন্ন দেব-দেবীর সম্পর্কে জানতে পারি এবং এর মাধ্যমে দেব-দেবীর স্তুতি বা প্রশংসা করতে শিখি । অগ্নি, ইন্দ্র, ঊষা, রাত্রি, বায়ু প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতা উপলব্ধি করা যায় ।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ ২০২৪ সালের সকল বৈষ্ণবীয় তিথিসমূহ দেখে নিন একনজরে

তাঁদের কর্মচাঞ্চল্যকে আদর্শ করে, আমরা আমাদের জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করব । যজ্ঞের মন্ত্রের সংগ্রহ হচ্ছে যজুর্বেদ । এ থেকে জানতে পারি সেকালে উপাসনা পদ্ধতি কেমন ছিল সে বিষয়ে। যজুর্বেদ অনুসরণে বিভিন্ন সময়ে যজ্ঞানুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষপঞ্জি বা ঋতু সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন সময়ব্যাপী যজ্ঞানুষ্ঠান করা হতো । যজ্ঞের বেদি নির্মাণের কৌশল থেকেই জ্যামিতি বা ভূমি পরিমাপ বিদ্যার উদ্ভব ঘটেছে । সামবেদ থেকে সেকালের গান ও রীতি সম্পর্কে জানতে পারি । অথর্ববেদ হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল । এখানে নানা প্রকার রোগব্যাধি এবং সেগুলোর প্রতিকারের উপায় স্বরূপ নানা প্রকার লতা, গুল্ম বৃক্ষাদির বর্ণনা করা হয়েছে । 

আয়ুর্বেদ নামে চিকিৎসা শাস্ত্রের আদি উৎস এই অথর্ববেদসংহিতা । বলা যায়, অথর্ববেদ থেকে জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় । সুতরাং সমগ্র বেদ পাঠে পরমাত্মা, বৈদিক দেব-দেবী, যজ্ঞ, সঙ্গীত, চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করে জীবনকে সুন্দর, সুস্থ ও পরিপাটি করে তোলা যায় । আর এজন্যই এ গ্রন্থ আমাদের প্রত্যেকের পাঠ করা অবশ্য কর্তব্য ।

আমাদের শেষ কথা

আজকের পোস্টে আমরা হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি এবং কোন বেদে কি আছে এই নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছি। আপনি যদি আজকের পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে পুরাতন ও প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

আজকের পোস্টটি মূলত হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা ৬ ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্য বই এবং নিজের মনের ভাবানুসারে প্রকাশিত করেছি। আজকের পোস্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে সেটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল। আর এই রকম আরো ইনফরমেটিভ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটফেসবুক পেইজ। নমস্কার সকল ভক্তগণকে

হিন্দু ধর্মের সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url