মহাভারত বাংলা সকল পর্ব ১ থেকে ২৮৮ - কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী
প্রিয় পাঠক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে আজকে আলোচনা করব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবার কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থেকে অনেক জ্ঞান অর্জন করা যায়। অনেকেই আছে যারা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী কাহিনী সম্পর্কে তেমন কোনো কিছুই জানে না। তাই আজকে তাদের জন্য এখন আমরা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী সহ মহাভারতের সকল পর্ব দেখতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী
পোস্ট সূচিপত্র ঃ মহাভারত বাংলা সকল পর্ব ১ থেকে ২৮৮ - কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবার কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী জানা থাকা আবশ্যক। কারণ এই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হলো মহাভারতের একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ। যা আজীবন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তাদের ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কুরুক্ষেত্র এই যুদ্ধ উদ্ভূত হয় পান্ডব আর কৌরব দের মধ্যে।
এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় মূলত ধর্মের স্থাপনা করতে ও অধর্মের বিনাশ করার জন্য। এই যুদ্ধে পাণ্ডবরা ছিল ন্যায়, কর্তব্য ও ধর্মের পক্ষে আর অন্যদিকে কৌরবরা ছিল অন্যায়, জোর - জবরদস্তি ও অধর্মের পক্ষে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৩৮ অব্দে বর্তমান ভারতের হরিয়ানায় এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধের স্থায়ীকাল ছিল ১৮ দিন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মূল কারণ হচ্ছে হস্থিনাপুরের রাজসিংহাসনের অধিকার নিয়ে।
আরো পড়ুন ঃ শ্রী কৃষ্ণের প্রনাম মন্ত্র - গায়ত্রী মন্ত্র জপ করার নিয়ম
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রী কৃষ্ণ এবং তাঁর নারয়ণী সেনা আলাদা আলাদা দলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তিনি কোনো অস্ত্র ধারণ করেননি । তিনি ছিলেন অর্জুনের রথের সারথি । আবার অন্য দিকে কৃষ্ণের নারায়ণী সেনা কৌরবদের পক্ষ থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এরপর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ ১৮ দিন ব্যাপী চলতে থাকে। নিচে যুদ্ধের প্রতিটি দিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিন
যুদ্ধের প্রথম দিন পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের পক্ষ থেকে সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। যুদ্ধের প্রথম দিনেই পাণ্ডব পক্ষ থেকে ভীম আর কুরু পক্ষ থেকে ভীষ্ম বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন পরস্পরের বহু সৈন্য হত্যা করেন। যুদ্ধে অর্জুনের পুত্র অভিমন্যু অমিত বিক্রম প্রদর্শন করেন। অভিমন্যু একই সাথে ভীষ্ম, কৃতবর্মা, কৃপাচার্য ও শল্যের সাথে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে মদ্ররাজ শল্যের আক্রমণে বিরাট রাজার পুত্র যুদিষ্টির কে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর দ্বতীয় দিন
যুদ্ধের দ্বতীয় দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। এই দিন যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ভীষ্ম আর অর্জুনের যুদ্ধ। প্রবল যুদ্ধের পরও কৌরব আর পাণ্ডবদের মধ্যে কেউ বিজয়ী হতে সক্ষম হননি। এই দিন ভীম কলিঙ্গরাজ শ্রুতায়ু ও তাঁর পুত্র শত্রুদেব , কেতুমান, ভানুমান, সত্য, সত্যদেব সহ আরও বিপুল সংখ্যক কলিঙ্গ সৈন্য হত্যা করেন। এ ছাড়াও এই দিন পাণ্ডব পক্ষ থেকে অর্জন পুত্র অভিমন্যু, ধৃষ্টদ্যুম্ন ও অর্জুন অশেষ বীরত্বের পরিচয় দেন। অন্যদিকে কৌরব পক্ষ থেকে ভীষ্ম ছাড়া আর কেউ তেমন বীরত্ব প্রদর্শন করতে পারেন নি।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর তৃতীয় দিন
যুদ্ধের দ্বতীয় দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। এই দিন ভীমের সাথে দুর্যোধনের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে দুর্যোধন পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। যুদ্ধের তৃতীয় দিন ভীম ও অর্জুনের অশেষ বীরত্ব লক্ষ্য করা যায়। এই দিন ভীষ্মের প্রচন্ড সংহারমূর্তি দেখে তার প্রতি ক্রোধবশ্বত কৃষ্ণ সুদর্শন চক্র উত্তোলন করেন পরে ভীষ্মের তোষণ ও অর্জুনের অনুরোধে কৃষ্ণ তাঁর সুদর্শন চক্র প্রত্যাখ্যান করে নেন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর চতুর্থ দিন
যুদ্ধের চতুর্থ দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। এই দিনে দ্রুপদ পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন শল্যপুত্র সাংযমনিধিকে হত্যা করেন। যুদ্ধে ভীমের অশেষ বীরত্ব দেখে কৌরব পক্ষের একাংশ সৈন্য পলায়ন করে। পরে ভীষ্ম ভীমের গতিকে রোধ করতে সক্ষম হন। এই দিন আবার ভীমের সাথে দুর্যোধনের যুদ্ধ হয়।
যুদ্ধে দুর্যোধনের শরাঘাতে ভীম সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। পরে সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে ভীম পুনরায় আক্রমণ করলে শল্য আহত হয়ে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে। এরপর ধৃতরাষ্ট্রের ১৪ জন পুত্র ভীমের উপর একসাথে আক্রমণ করলে ভীম জলসন্ধ, সুষেণ, উগ্র, অশ্ব, কেতু, বীরবাহু, ভীম ও ভীমরথকে হত্যা করেন। এই দেখে ধৃতরাষ্ট্রের অন্যান্য পুত্ররা পালিয়ে যায়।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর পঞ্চম দিন
যুদ্ধের পঞ্চম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। এই দিন যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু সৈন্য নিহত হন তবে ওই দিন বড় কোনো বীরের পতন হয়নি।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর ষষ্ঠ দিন
যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। এই দিন যুদ্ধে নকুলের পুত্র শতানীক রণক্ষেত্র ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র দুষ্কর্ণকে বধ করে।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর সপ্তম দিন
যুদ্ধের সপ্তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। এই দিন যুদ্ধে দ্রোণ কর্তৃক বিরাট পুত্র শঙ্খ নিহত হন। সপ্তম দিন যুদ্ধে বড় বড় কয়েকজন যোদ্ধা প্রাণে বেঁচে গেলেও ভীমের পুত্র ঘটোত্চক ভগদত্তের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হন। শল্য নকুল সহদেবের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হন এবং শ্রুতায়ু যুধিষ্ঠিরের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর অষ্টম দিন
যুদ্ধের অষ্টম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। অষ্টম দিন ভীম ও ভীষ্মের যুদ্ধে ভীষ্মের সারথি নিহত হন। এরপর ভীম ধৃতরাষ্ট্রের সুনাভ নামক পুত্রকে বধ করেন । এটা দেখে ধৃতরাষ্ট্রের অন্যান্য পুত্ররা ভীমকে একযোগে আক্রমণ করলে ভীম ধৃতরাষ্ট্রের আরও
সাত পুত্র অনাধৃষ্য, কুণ্ডভেদী, বৈরাট, বিশালাক্ষ, দীর্ঘবাহু, সুবাহু ও কনকধ্বজ নামক পুত্রদের বধ করে। এই দিন অর্জুন পুত্র ইরাবান শকুনির ছয় ভাইকে হত্যা করে। পরে আর্যশৃঙ্গের হাতে ইরাবান নিহত হন। এটাই ছিল প্রথম কোন পাণ্ডব বীরের পতন। এরপর দুর্যোধন বিদ্যুজ্জিহবকে হত্যা করেন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর নবম দিন
যুদ্ধের নবম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। যুদ্ধের নবম দিন দুইটি ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। প্রথম টি হলো ওই দিন যুদ্ধে অর্জুন পুত্র অভিমন্যুর কাছে অলম্বুষের পরাজয় হয় এবং দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ওই দিন ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরের কাছে নিজর মৃত্যুর উপায় বলে দেয়।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর দশম দিন
যুদ্ধের দশম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ভীষ্ম। এই দিন অর্জুন বিদেহসহ বহু সৈন্যকে হত্যা করে। যুদ্ধে দুঃশাসন, কৃপ প্রভৃতি বীর রণক্ষেত্র ছেড়ে পলায়ন করে। ভীষ্ম শতানীককে হত্যা করে। ভীষ্ম হলেন মহাপরাক্রমশালী বীর। তাকে বধ করা অসম্ভব।
আরো পড়ুন ঃ ইসকন একাদশী তালিকা ২০২৩ - একাদশী তালিকা ২০২৩ বৈষ্ণব মতে
কিন্তু শিখন্ডী যিনি পূর্বজন্মে মেয়ে ছিলেন তাঁর প্রতি ভীষ্ম অস্ত্র তুলবেননা এটা পান্ডবরা জেনে যায়। শিখন্ডী কে সামনে রেখে অর্জুন অজস্র শর দ্বারা পিতামহ ভীষ্মকে এমনভাবে বিদ্ধ করেন যেন পিতামহ ভীষ্মের দেহ মাটিতে না পড়ে। ওই দিন ভীষ্মের পরাজয় হলেও তাঁর মৃত্যু হয়নি কারণ তাঁর ইচ্ছা মৃত্যুর বড় দান ছিল।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর একাদশ তম দিন
যুদ্ধের একাদশ তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন দ্রোণাচার্য। এই দিন যুদ্ধে দ্রোণাচার্য পাঞ্চাল রাজকুমার ও ব্যাঘ্রদত্তকে হত্যা করেন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর দ্বাদশ তম দিন
যুদ্ধের দ্বাদশ তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন দ্রোণাচার্য। দ্বাদশ দিন যুদ্ধে বীর যোদ্ধা অর্জুনের হাতে সুধন্বা, মালব, মাবেল্লক, ললিণ্খ ও ত্রিগর্ত নিহত হন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর ত্রয়োদশ তম দিন
যুদ্ধের ত্রয়োদশ তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন দ্রোণাচার্য। এই দিন যুদ্ধে দ্রোণাচার্যের কাছে সত্যজিত, শতানীক, দৃঢ়সেন বীরগণকে পরাজিত করে নিহত হন। অপরদিকে অর্জুন সংশপ্তক সুশম্মার ভাইদের হত্যা করেন। নকুল কর্তৃক ভূতকর্মা নিহত হন। ভীম কর্তৃক নিহত হন অঙ্গনৃপতি। আর অশ্বত্থামা কর্তৃক নিহত হন নীল।
এই দিন যুদ্ধে দ্রোণাচার্য কর্তৃক রচিত চক্রবুহ্য ভেদ করে অভিমন্যু শল্যের ভাইদের, রুক্সরথ, লক্ষ্মণ ক্রাত্থ, বৃক্ষারক, বৃহদ্বল, অশ্বকেতু, চন্দ্রকেতু, সৌবলগণ সহ বহু বীর ও সৈন্য হত্যা করেন। পরে সাত মহারথী অভিমন্যুকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে। এই সাত মহারথীগণের মধ্যে রয়েছে দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্য, অশ্বত্থামা, কর্ণ, কৃতবর্মা, শল্য, দুর্যোধন ও দুঃশাসন। এই দিন জয়দ্রথ শিবের বরে বলীয়ান হয়ে পাণ্ডব যোদ্ধাদের চক্রব্যূহে প্রবেশ করতে দেননি যার ফলে অভিমন্যু হত্যা হয়।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর চতুর্দশ তম দিন
যুদ্ধের চতুর্দশ তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন দ্রোণাচার্য। যুদ্ধে পাণ্ডু পুত্র অর্জুন তাঁর পুত্র অভিমন্যুর হত্যার প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা করেন। এই দিন যুদ্ধে মূল্য উদ্দেশ্য ছিল । এদিনের যুদ্ধে শ্রুতায়ুধ নিজ গদা দ্বারা নিহত হন। এরপর সহদেব হত্যা করেন নিরমিত্রকে । দ্রৌপদীর সন্তানরা বধ করে সৌমদত্তিকে। ভীমের পুত্র ঘটোত্চক হত্যা করেন অলাম্বুষকে। এক্ষেত্রে পাণ্ডুপুত্র গণ যুদ্ধে লাভবান হন।
এই দিন যুদ্ধের এক পর্যায়ে দ্রোণাচার্য হত্যা করেন পাঞ্চাল কৈকয়ী বীরদের । এরপর পাণ্ডু পুত্র অর্জুনকে সাহায্য করার জন্য সাত্যকি অগ্রসর হয়ে বহু কৌরব সৈন্যকে বধ করেন। বিশেষ করে সাত্যকি যাদের বধ করেন তাঁরা হলো জলসন্ধ, সুদর্শন, পাঁচশ ও ত্রিগর্ত বীরকে। অবশেষে অর্জুন সাত্যকি মিলিত হন। বিকেলের দিকে দ্রোণাচার্য বৃহতেক্ষত্র, ধৃষ্টকেতু, চেদিবীরদের হত্যা করেন। এরপর সাত্যকি ও অর্জুনের সমবেত চেষ্টায় ভুরিশ্রবা নিহত হন।
এই দিন যুদ্ধে শ্রী কৃষ্ণের কৌশলে পাণ্ডু পুত্র অর্জুন সিন্ধুরাজ জয়দ্রথকে বধ করতে সক্ষম হয়। চতুর্দশ তম দিন যুদ্ধ রাত্রি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। রাতের যুদ্ধে ভীম কলিঙ্গরাজের পুত্র ও দুর্যোধনের দুই পুত্রকে হত্যা করেন। তা ছাড়া এই দিন রাতের যুদ্ধে ভীমের পুত্র ঘটোত্চক কৌরবদের অসংখ্য সৈন্য কে হত্যা করেন। কিন্তু কর্ণের ইন্দ্রদেব থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে ভীমের পুত্র ঘটোত্চক কে হত্যা করেন। এর মধ্যে দিয়ে ওই দিন যুদ্ধ সমাপ্ত হয়।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর পঞ্চদশ তম দিন
যুদ্ধের পঞ্চদশ তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন দ্রোণাচার্য । এই দিন যুদ্ধে দ্রোণাচার্য বীরাট ও দ্রুপদকে হত্যা করেন। শ্রী কৃষ্ণের কৌশলে অশ্বত্থামা হত প্রচার দ্বারা দ্রোণ কাতর হয়ে নিজের অস্ত্র ত্যাগ করে ধ্যানে বসে যান। এই ধ্যানে থাকা অবস্থায় ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণাচার্যের শিরশ্ছেদ করেন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর ষোড়শ তম দিন
যুদ্ধের ষোড়শ তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন কর্ণ। এই দিন যুদ্ধের শুরুতেই পাণ্ডু পুত্র ভীম ক্ষেমধুর্তিকে, সাত্যকি বিন্দ অনুবিন্দকে, শ্রুতকর্মা চিত্রসেনকে, অর্জুন সংশপ্তকদের ও দণ্ডাধরকে হত্যা করেন। এই অবস্থায় দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা পাণ্ডব পক্ষীয় পাণ্ড্যকে হত্যা করেন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর সপ্তদশ তম দিন
যুদ্ধের ত্রয়োদশ তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন কর্ণ। এই দিনের যুদ্ধে কর্ণ ভানুদেব, চিত্রসেন, সেনাবিন্দু, তপন, শূরসেন, চন্দ্রধর, দণ্ডাধর ও জিষ্ণুকে হত্যা করেন। ভীম ভানুসেন, ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদেরকে হত্যা করেন। কৃপ সুকেতুকে হত্যা করেন। এরপর যুদ্ধে কর্ণ ভার্গবদত্ত অস্ত্র প্রয়োগ করে পাণ্ডবদের অসংখ্য সৈন্য হত্যা করেন।
এরপর ভীম দুঃশাসনকে হত্যা করে তাঁর রক্ত পান করেন। তারপরই শুরু হয় মহাভারতের অন্যতম যুদ্ধ কর্ণ আর অর্জুনের মধ্যে। যুদ্ধের প্রথম অবস্থাতেই অঙ্গ রাজ কর্ণ অর্জুনের উপর প্রাধান্য বিস্তার না করতে পেরে নাগাস্ত্র নিক্ষেপ করেন। এই অস্ত্রে অশ্বসেন যোগবলে প্রবেশ করলেও কৃষ্ণের সহায়তায় অর্জুন রক্ষা পায়। তবে এই অস্ত্রের প্রহারে অর্জুনের মুকুট ধ্বংস হয়ে যায়।
এরপর অশ্বসেন নাগাস্ত্র থেকে মুক্ত হয়ে অর্জুনকে আক্রমণ করতে গেলে অর্জুনের অস্ত্রাঘাতে নিহত হন। এরপর অর্জুনের তীব্র আক্রমণে কর্ণ জ্ঞাণ হারিয়ে ফেললে অর্জুন থাকে অসুস্থ অবস্থায় হত্যা করেন না। কিন্তু কৃষ্ণের উৎসাহে তিনি পুনরায় কর্ণকে আক্রমণ করেন। কর্ণ সংজ্ঞালাভের পর আবার যুদ্ধ করেন । অবশেষে অর্জুন কর্ণকে হত্যা করেন। কর্ণের মৃত্যুর পর কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন মহারাজ শল্য।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর অষ্টাদশ তম দিন
যুদ্ধের ত্রয়োদশ তম দিনও পাণ্ডবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে ছিলেন শল্য। যুদ্ধের প্রথম দিকেই নকুল কর্ণপুত্র চিত্রসেন, সত্যসেন ও সুষেণকে হত্যা করলেন। এরপর দুর্যোধন চেকিতানকে, অশ্বত্থামা সুরথকে এবং যুধিষ্ঠির শল্য ও শল্যের ভাইকে হত্যা করেলেন। এরপর সাত্যকি শ্বাল্য ও ক্ষেত্রকীর্তিকে, সহদেব উলূক ও শকুনিকে হত্যা করেন।
এরপর যুদ্ধে দুর্যোধনের অধিক সৈন্য নিহত হলে দুর্যোধন ভয়ে ভীত হয়ে হ্রদে আত্মগোপন করেন। পাণ্ডবরা কিছু শিকারির মুখে এই সংবাদ পেয়ে হ্রদের কাছে আসেন। এরপর ভীমের সাথে দুর্যোধনের গদা যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পাণ্ডু পুত্র ভীম দুর্যোধনের উরু ভেঙে দেয় এবং মাথায় গদার আঘাত করে । পরে দুর্যোধনের মৃত্যু হয়।
মহাভারতের এই যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষ থেকে কেউ বেঁচে নেই আর পাণ্ডব পক্ষ থেকে পঞ্চ পাণ্ডব জীবিত ছিলেন। এই যুদ্ধের মূল কারণ হলো দুর্যোধনের সিংহাসন লালসার ফল। কুরুক্ষেত্রের এই যুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মের স্থাপনা হয়।
মহাভারত বাংলা সকল পর্ব ১ থেকে ২৮৮
প্রিয় পাঠক এতোক্ষণ ধরে আমরা আলোচনা করেছি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মাধ্যমেই মহাভারতের সূচনা হয়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মূল কারণ হচ্ছে হস্থিনাপুরের রাজসিংহাসনের অধিকার নিয়ে। আর এই যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে আমার উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখন আমরা আলোচনা করব মহাভারত বাংলা সকল পর্ব কিভাবে দেখবেন সে বিষয়ে।
মহাভারত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ সমূহের মধ্যে একটি। মহাভারতের মূল উপজীব্য বিষয় হলো কৌরব আর পাণ্ডবদের মধ্যে যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ছিল একটি ধর্ম যুদ্ধ। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চার পুরুষার্থ সংক্রান্ত একটি আলোচনা (১২|১৬১) সংযোজিত হয়েছে এই মহাভারত গ্রন্থে । এই মহাভারতের রচিয়তা হলেন মহামুনি ব্যাসদেব ( কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস)।
আরো পড়ুন ঃ শিবের গলায় সাপের নাম কি - শিবের ত্রিশূল এর নাম
২০১৪ সালে মহাভারত প্রথম স্টার প্লাস চ্যানেলের মাধ্যমে রিলিজ হয়। তখন থেকেই এই মহাভারত সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ২০১৫ সালে এই মহাভারত স্টার জলসায় বাংলা ডাবিংয়ের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। স্টার জলসার মাধ্যমে বাংলায় মহাভারত রিলিজ হওয়ায় সেটা দুই বাংলার মধ্যে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আসল কথায় আশি। মহাভারত যারা বাংলায় দেখতে চান তারা নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে মহাভারত বাংলা সকল পর্ব ১ থেকে ২৮৮ পর্যন্ত এইচডি ভিডিও দেখতে পারবেন।
মহাভারত বাংলায় দেখতে নিচের বাটনে চাপ দিন👇
মহাভারত বাংলা সকল পর্ব ১ থেকে ২৮৮
মহাভারত হিন্দিতে দেখতে নিচের বাটনে চাপ দিন👇
মহাভারত হিন্দি সকল পর্ব ১ থেকে ২৮৮
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ঃ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কতদিন হয়েছিল?
উত্তর ঃ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল ১৮ দিন ব্যাপী।
প্রশ্ন ঃ মহাভারতের যুদ্ধ কোথায় হয়েছিল?
উত্তর ঃ মহাভারতের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বর্তমান ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে।
প্রশ্ন ঃ মহাভারতের যুদ্ধ কবে হয়েছিল?
উত্তর ঃ বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় গণিতজ্ঞ ও মহাকাশবিদ বরাহমিহিরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাভারতের যুদ্ধ ২৪৪৯ খ্রিষ্টপূর্ব সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধের তিথি ছিল ১৮ই ফ্রেব্রুয়ারি ৩১০২ খ্রিষ্টপূর্ব।
প্রশ্ন ঃ মহাভারতের যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?
উত্তর ঃ মহাভারতের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল কৌরব আর পাণ্ডবদের মধ্যে।
প্রশ্ন ঃ মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে?
উত্তর ঃ বিরাট এই যুদ্ধে অর্জুন একাই ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য ও কর্ণের মতো মহাযোদ্ধাদের পরাজিত করেন। তাই মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হচ্ছে অর্জুন।
প্রশ্ন ঃ কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?
উত্তর ঃ বৈয়াসকী মহাভারত অনুযায়ী অবশ্যই অর্জুন শ্রেষ্ঠ।
প্রশ্ন ঃ মহাভারতের নায়ক কে?
উত্তর ঃ মহাভারতের নায়ক হলেন অর্জুন।
প্রশ্ন ঃ মহাভারত রচয়িতা কে?
উত্তর ঃ মহাভারত রচয়িতা হলেন Vyasa.
প্রশ্ন ঃ মহাভারত বাংলা রচয়িতা কে?
উত্তর ঃ কবীন্দ্র পরমেশ্বর মধ্যযুগীয় (১৬শ শতাব্দী) বাঙ্গালী কবি। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলায় সংস্কৃত মহাকাব্য অনুবাদ করেন
মহাভারত নিয়ে শেষ কথা
প্রিয় পাঠক গণ, আজকের পোস্টে আমরা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেই সাথে আরো আলোচনা করেছি যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কেন সংঘটিত হয়েছে এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে সে বিষয়ে। তাছাড়া আজকের এই পোস্টে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী সহ মহাভারতের সকল পর্ব ১ থেকে ২৮৮ পর্যন্ত এইচডি ভিডিও দেখতে পারবেন। আর আজকের পোস্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে সেটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
আরো বিস্তারিত জানতে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url