ভাবসম্প্রসারণঃ জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
ভাবসম্প্রসারণঃ জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
মূলভাব ঃ মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয় জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে। জ্ঞানের আলোয় মানুষের জীবন বিকশিত হয়। তাই জ্ঞান অর্জন না হলে মানুষ আর পশুতে কোন প্রকারভেদ থাকে না।
সম্প্রসারিত ভাবঃ সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এ শ্রেষ্ঠত্বের করণ তার বিবেক বা জ্ঞান, যা পশু এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে অনুপস্থিত। জ্ঞান মানুষের জীবনের হিরন্ময় দ্যুতিতে ভাস্বর এক অনন্য মানবীয় গুণ। প্রতিটি মানুষের মাঝেই এ বিবেক বা জ্ঞান সুপ্ত অবস্থায় থাকে। ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞানকে জাগ্রত করতে হয়।
আর এ জাগ্রত জ্ঞানের পরশে জীবন আলোকিত হয়ে উঠে। জ্ঞান মানুষকে কলুষমুক্ত জীবনের সন্ধান দেয় এবং অন্তর্নিহিত পাশবিক শক্তির বিনাশ সাধন করে পূত-পবিত্র জীবন গঠনে সহায়তা করে। পক্ষান্তরে জ্ঞানহীন মানুষ আলোক বিবর্জিত। তার মধ্যে কখনোই মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না বলে সে কুপথে বা খারাপ পথে ধাবিত হয়। তার মধ্যে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, বিচার - বুদ্ধি কোনো কিছুই থাকে না।
আরো পড়ুন ঃ ভাবসম্প্রসারণ তালিকা | 10 টি গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ
পশুসুলভ আচার-আচরণে সে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। জ্ঞানহীন মানুষ সর্বদা হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা প্রভৃতির দাসত্বে নিমগ্ন থাকে। তাই জ্ঞানহীন মানুষ সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। আপন অস্তিত্বকে সে টিকিয়ে রাখতে পারে না বলে অজ্ঞানতার অন্ধকারে সে সারাজীবন নিমজ্জিত থাকে। দার্শনিক প্লেটো বলেছেন -- “অজ্ঞ থাকার চেয়ে পৃথিবীতে না জন্মানোই ভালো, কারণ অজ্ঞতা সব দুর্ভাগ্যের মূল ”
মন্তব্য ঃ জ্ঞানহীন মানুষ ও পশুর মধ্যে কোন পার্থক্যই থাকে না। তাই সুন্দর ও সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রতিটি মানুষের জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। তাছাড়া জ্ঞানহীন মানুষকে সমাজ বিশ্ব জাতি কেউ পছন্দ করে না। সুতরাং জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান,
ভাবসম্প্রসারণঃ জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
মূলভাব ঃ পৃথিবীতে তথা জীবজগতে পশুর যেমন জ্ঞান বুদ্ধি ও বিবেচনা বোধ নেই, তেমনি প্রকৃত জ্ঞান ও শিক্ষাহীন মানুষের ও আত্মবোধ নেই। পশুর সঙ্গে তার কোনো পার্থক্য নেই বললেই চলে। জ্ঞানের আলোই মানুষকে বিকশিত করে তোলে।
সম্প্রসারিত ভাবঃ জ্ঞান পরশ পাথরের মতো, তা যে মানুষকে স্পর্শ করে তাকেই সোনার মত মূল্যবান করে তোলে। তাই মানবজাতির কাছে জ্ঞান অতি অমূল্য সম্পদ, যা লাভ করা খুবই কঠিন। প্রকৃত শিক্ষায় মানুষকে জ্ঞানের সন্ধান দিতে পারে। জ্ঞান মানুষকে দিয়েছে সৃষ্টির সেরা হবার স্বীকৃতি। ইসলাম ধর্মের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছিলেন, “জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যাও”। জ্ঞানের অসীম গুরুত্ব উপলব্ধি করেই তিনি এ বক্তব্য প্রদান করেছিলেন।
জ্ঞান আছে বলেই মানুষ বিচারবোধের অধিকারী হয় এবং জ্ঞানের স্পর্শে মানুষের অন্তরাত্মার সকল অন্ধকার দূর হয়। কলুষমুক্ত জীবনের সন্ধান পায় সে। মানুষ তার প্রয়োগিক জীবনে অনেকভাবেই হয়তো সফলতা লাভ করে থাকে, কিন্তু জ্ঞানের সাফল্য তার কাছে একবারেই আলাদা। জ্ঞানের স্পর্শেই মানুষের হৃদয়ের সকল পাশবিকতা দূরীভূত হয়। জ্ঞান লাভ করে মানুষ অন্তরের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে শুদ্ধাচারী হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুনঃ প্রাণ থাকলে প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না
অপরদিকে জ্ঞানহীন মানুষকে মানুষ নামে পরিচয় দেওয়া ভুল কারণ জ্ঞানহীন মানুষ তার হৃদয় অন্তরের কালিমা দিয়ে আলোর পথকেও ধোঁয়াশায় পরিপূর্ণ করে তোলে। এ বৈশিষ্ট্যের মানুষ পশু শক্তি দিয়ে জীবনকে ভয়াবহ জটিলতায় টেনে নিয়ে যায়। বিবেচনাশক্তি হারিয়ে সে নির্বোধ মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। ভালোমন্দের কোনো বিচারবোধ তার মধ্যে থাকে না। তার মধ্যে সর্বদা কুপ্রবৃত্তি ও কুরিপু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
তাই অন্যায় অত্যাচারে সে চারপাশকে ভরিয়ে তোলে। লোভ লালসা, হিংসা-বিদ্বেষের দাসে পরিণত হয় সে। সমাজ ও জাতির জন্য জ্ঞানহীন মানুষ রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এরকম অন্তরেই যদি জ্ঞানের সঞ্জীবণী ধারা প্রবাহিত হয়, তবে তাও পদ্মের সৌরভে ম-ম করতে থাকে। হিংসা -বিদ্বেষ ভুলে তা দানবীয় থেকে মানবীয়তে পরিণত হয়। রামায়ণের রচিয়তা দস্যু রত্নাকর জ্ঞানের স্পর্শেই পরবর্তীকালে মহামুনি বাল্মীকি হয়ে উঠেছিলেন।
মন্তব্য ঃ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বলেই মানুষ সকল বিচার বিবেচনার অধিকারী হয়। অপরপক্ষে এগুলো যার মধ্যে থাকে না সে, নির্বোধের আখ্যা পায় সমাজে। বিবেচনাহীন ব্যাক্তি দেখতে মানুষের মতো হলেও তার হৃদয় সর্বদা পশুর ন্যয়। সমাজে তারাই যত বিশৃঙ্খলার হোতা। কিন্তু জ্ঞানী সমাজকে সদা আলোকিত করতে থাকে।
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url