ভাবসম্প্রসারণঃ সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে

আরো ৩০০+ ভাবসম্প্রসারণ পড়ুন

ভাবসম্প্রসারণ ছবি

"আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে" বা "সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে"

মূলভাব ঃ পরার্থপরতা মানুষের একটি বিশিষ্ট গুণ। পশুর মতো আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপনের জন্য মানুষ পৃথিবীতে আসেনি। পরার্থে আত্মোৎসর্গ করার মধ্যেই রয়েছে মানব জীবনের পরম সার্থকতা।

সম্প্রসারিত ভাব ঃ পশুর মতো কিছু আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর মানুষ লোক সমাজে আছে। তারা সমাজ সংসারের কথা ভুলে নিজেকে নিয়ে অতি ব্যস্ত; অতি বিব্রত থাকে। অথচ সমাজ সংসারের কাছে প্রত্যেকের ঋণের সীমা পরিসীমা নেই। মানুষ সামাজিক জীব। সংঘবদ্ধ সমাজ জীবনই তাকে দিয়েছে আত্মরক্ষার নিরাপত্তা, শান্তি শৃংখলার অনুকূল পরিবেশ। 

ব্যক্তিমানুষের কল্যাণে সমাজ যেমন এগিয়ে আসে, সমাজও আশা করে তার বৃহত্তর কল্যাণে ব্যক্তি মানুষ তেমনই ক্ষুদ্র স্বার্থের কথা ভুলে সহযোগিতার হাত বাড়াবে, প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে অকুণ্ঠ চিত্তে। সংঘবদ্ধ সমাজ জীবনের আত্মকেন্দ্রিক ভাবনা চিন্তা, স্বার্থপর মনোবৃত্তি এবং কার্যকলাপ সামাজিক কল্যাণের পরিপন্থি। প্রতিটি সামাজিক মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতার যোগসূত্রে আবদ্ধ। সংসারের কেউ নিজের জন্যে আসেনি।

আরো পড়ুন ঃ প্রাণ থাকলে প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না

একা একা কেউ বাঁচতেও পারে না। আর আত্মকেন্দ্রিক একক জীবন ভয়ংকর দুঃসহ। পাঁচজনের সঙ্গে মিলেমিশে বাঁচাই হলো যথার্থ বাঁচা। সেজন্য স্বার্থত্যাগ করা প্রয়োজন। আত্মকেন্দ্রিকতার শক্ত আবরণটির ধ্বংস প্রয়োজন। পড়াতে আত্মোৎসর্গে জীবন সার্থক হয়, ধন্য হয়। পরহিতে নিজেকে নিঃশেষে দান করে প্রকৃত সুখ, অনাবিল আনন্দ ও পরম তৃপ্তির অধিকারী হয় মানুষ।

মন্তব্য ঃ ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে মানবতার স্বার্থকে বড় করে দেখার মধ্যেই জীবনে প্রকৃত সার্থকতা। মানুষ যদি কেবল আপন স্বার্থ নিয়ে মগ্ন থাকতো তাহলে পৃথিবীর এই উন্নত সভ্যতা কোনোদিনই গড়ে উঠতো না।

"সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে" বা "পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না"

মূলভাব ঃ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যই মানুষ জন্মেনি। পরস্পরের উপকার সাধনের মধ্যেই মানব জীবনের চরম সার্থকতা নিহিত।

সম্প্রসারিত ভাব ঃ ফুল পরহিত ব্রতে উৎসর্গীকৃত জীবনের সার্থক প্রতিনিধি। সে কখনো তার নিজের প্রয়োজনে আসে না। সে তার সৌরভ ও সৌন্দর্যে সকলকে মোহিত করে। সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে সে শোভা পায় সকলের মনো রাজ্যে। নিজের সৌন্দর্য ও সৌরভ অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেওয়াতে তার সার্থকতা। স্বীয় গুন ও বৈশিষ্ট্যের জন্য পবিত্রতার প্রতীক ফুল দেবতার চরণে নিবেদিত হয় নৌবেদ্য হিসেবে।

আরো পড়ুন ঃ রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে

এভাবে ফুটন্ত ফুল তার অপার সৌন্দর্য ও পবিত্র সৌরভ বিলিয়ে এক সময় নিঃস্ব হয়ে যায়, বৃন্তচ্যুত হয়ে যায় ‌। মানব জীবনকেও ফুলের সাথে তুলনা করা যায়। মানুষ শুধু ভোগ-বিলাস, ও নিজ স্বার্থোদ্ধারের জন্যই জন্মগ্রহণ করেনি। পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মাঝেই তার জীবনের চরম ও পরম সার্থকতা। পরের কল্যাণ সাধনই মহত্বের লক্ষণ। জগতের সাধু, মহৎ ব্যক্তিরা তাই করেন। 

তাঁরা সর্বদা পরের হিত সাধনে ব্যাপৃত থাকেন এবং পরের তরে জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। কেননা প্রেম প্রীতি, ভালোবাসা ও ব্যক্তি স্বার্থ পরিহারের মাধ্যমেই সমাজ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে। মহৎ ব্যক্তিগণ বিশ্ব মানবের আদর্শ। তাঁরা সকলের প্রিয় এবং সকলের আপনজন। তাঁদের জীবন পুষ্পের ন্যায় পড়াতে উৎসর্গীকৃত। 

পক্ষান্তরে, স্বার্থপর ব্যক্তি মনে করে সমস্ত জগৎটা তার একার উপভোগ্য। সকলকে বঞ্চিত করে সে বড় হতে চায়। ফলে বিদ্বেষ, অমিল, কলহ, হিংসা মনুষ্য সমাজকে কলুষিত করে তোলে।

মন্তব্য ঃ আত্মসুখ অন্বেষণের মাঝে প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমাদের সকলেরই উচিত পরের হিতার্থে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url