বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা আমাদের গ্রাম/একটি আদর্শ গ্রাম
আমাদের গ্রাম/একটি আদর্শ গ্রাম
সূচনা ঃ মানুষের কাছে তার জন্মভূমি বা তার নিজের গ্রাম বড়ই প্রিয় ও আদর্শ। আমার গ্রাম সবচেয়ে প্রিয় ও পবিত্র। আমি এখানে জন্মগ্রহণ করেছি। এর ছায়াঘেরা মায়া-ময় কোলে আমার চঞ্চল জীবন কাটাচ্ছি। এর নদীর পানি আমার তৃষ্ণা দূর করেছে। এর ক্ষেতের ফসল আমার ক্ষুধা দূর করেছে। এর নানা রঙের পাখি গান শুনিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়েছে ।
এর বাতাসে আমি শ্বাস গ্রহণ করে বড় হয়ে উঠেছি। এই গ্রামের মানুষজনের কাছে আমি পেয়েছি আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা। তাই, আমার গ্রামকে আমি আমার প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমার গ্রামের মধুর স্মৃতি আমার হৃদয়ে জেগে থাকে।
অবস্থান ঃ আমি যে গ্রামে বাস করি সে গ্রামখানির নাম সাইচাপাড়। গোমতী নদীর কূলে শ্যামলসোভা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে গ্রাম। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানায় অবস্থিত সেই গ্রাম। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব হবে ১৫ থেকে ২০ মাইল। দেবিদ্বার থানা শহরের পূর্বদিকে মাত্র পাঁচ মাইল দূরত্বে আমাদের গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ মাইল এবং প্রস্থ আধা মাইল। এর পূর্ব প্রান্ত দিয়ে সর্পিল গতিতে কুমিল্লা সিলেট বিশ্বরোড চলে গেছে।
লোকসংখ্যা ও পেশা ঃ আমাদের গ্রামে প্রায় তিন হাজার লোক বসবাস করে। এই গ্রামে হিন্দু ও মুসলমান উভয়েই বসবাস করে। এই গ্রামের দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে রয়েছে সম্প্রতির বন্ধন। গ্রামের অনেক বাড়িতে উচ্চশিক্ষিত লোক আছেন। তারা ঢাকা ও অন্যান্য শহরে ভালো চাকরি করেন। গ্রামে বয়স্ক যারা আছেন তারা সবাই কোনো না কোনো ব্যবসা কিংবা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্যান্য পেশার মানুষের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, উকিল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জেলে, কামার, কুমোর ও সুতার।
ঘরবাড়ি ঃ আমাদের গ্রামে যারা বসবাস করে তাদের বাড়িঘর প্রধানত টিনের তৈরি। আমাদের গ্রামে দশটি পাকা বাড়িও আছে। এখানে ছনের বা খরের ঘর নেই বললেই চলে।
পোশাক-পরিচ্ছদ ঃআমাদের গ্রামে স্ত্রী পুরুষেরা ভালো ভালো কাপড়-চোপড় পরিধান করে। প্রত্যেক বাড়ির কেউ না কেউ দেশের বাইরে চাকরি করে বলে পোশাকে আধুনিকতার ছাপ দেখা যায়। পুরুষরা লুঙ্গি, পায়জামা, শার্ট, গেঞ্জি, চাদর প্রভৃতি এবং মেয়েরা সালোয়ার কামিজ, শাড়ি প্রভৃতি পরিধান করে।
উৎপন্ন দ্রব্য ঃ আমাদের গ্রামে উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ধান, পাঠ, গম, ডাল, সরিষা, তেল, আখ এবং বিভিন্ন রকমের শাকসবজি। আমাদের গ্রামের পুকুর, নদী ও খাল, বিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। হাঁস মুরগি প্রচুর ডিম দেয়। গাভীর দুধ পাওয়া যায়। বাগানে আম, জাম, কলা, নারিকেল, সুপারি, তাল, পেয়ারা, বেল প্রভৃতি ফল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। এক কথায় গ্রামের মানুষের খাবারের জন্য যা যা প্রয়োজন তার প্রায় সবই আমাদের গ্রামে উৎপন্ন হয়।
আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট রচনা
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঃ আমাদের গ্রামে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদ্রাসা সংলগ্ন দুটি এতিমখানাও আছে। গাঁয়ের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীবনের প্রথম পাঠ শুরু করে এবং এখানে পড়া শেষ করে হাই স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়। সকালবেলায় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বসে আরবে শেখানো হয়। ছোট ছেলে-মেয়েরা এখানে এসে ভিড় জমায়।
সন্ধ্যার পর চৌধুরী বাড়ির বৈঠকখানায় বসে বয়স্ক লোকদের লেখাপড়ার আসর। গাঁয়ের কয়েকজন শিক্ষিত যুবক তাদের লেখাপড়া শেখাবার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই আমাদের গ্রামে কোনো নিরক্ষর লোক নেই এবং সবাই নিজের নাম নিজেই স্বাক্ষর করতে জানে। গোমতী নদীর পাড়ে “নতুন বাজারে” পোস্ট অফিস, টেলিগ্রাম, দাতব্য চিকিৎসালয় ও কৃষি অফিস আছে। সেজন্য আমাদের গ্রামের যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে।
হাট-বাজার ও দোকানপাট ঃ আমাদের গ্রামে একটি বাজার আছে। বাজারটি দেখতে বেশ বড়। বাজারটিতে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। তাছাড়া দৈনিক সকালে বাজার বসে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এমনকি বিভিন্ন রকমের তৈ-তরকারি ও দৈনন্দিন প্রয়োজনের প্রায় সব জিনিসপত্র এখানে পাওয়া যায়। হাটের দিনে বহুদূর থেকে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা আসে। হাতের দিন এখানে ধান, চাল, হাঁস-মুরগিসহ প্রকৃতি সব রকমের জিনিসপত্র বেচা-কেনা হয়ে থাকে। বাজারে ২০ জন স্থায়ী দোকানদার আছে। তাদের দোকান ভোর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। মোটকথা গ্রামের লোকদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাব হয় না।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ঃ কুমিল্লা চট্টগ্রাম বিশ্বরোড এই গ্রামের ওপর দিয়ে চলে গেছে। গ্রামের মধ্যে এক পাড়া হতে অন্য পাড়ায় যাওয়ার জন্য কয়েকটি উঁচু রাস্তা আছে, তাছাড়া জলের মতো ছড়িয়ে আছে পায়ে চলার গলিপথ। উঁচু রাস্তা দিয়ে রিকশা, টেম্পু, ভ্যান ইত্যাদি চলাচল করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঃ অবারিত মাঠ গগন লালট চুমে তবে পদধূলি, ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি। সত্যিই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশের গ্রামের সুন্দর বর্ণনা সার্থক হয়েছে আমাদের গ্রামখানির ক্ষেত্রে। মনে হয় যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে এই গ্রামটি সাজানো।
মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা বৈচিত্রে ভরপুর আমাদের গ্রামখানি। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে দেখা যায় আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, বেল, কুল, পেয়ারা এবং নানান রকমের গাছের সারি। মাঠভরা ধান ও অন্যান্য শস্যক্ষেতের ওপর দিয়ে যখন বাতাস বয়ে যায় তখন খুবই সুন্দর দেখায়।
আরো পড়ুন ঃ জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর ভাবসম্প্রসারণ
সামাজিক অবস্থা ঃ আমাদের গ্রামটির সমাজিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। এখানে চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি একেবারে নেই বললেই চলে। শিক্ষার প্রভাবে গ্রাম্য কুসংস্কারও এখানে নেই।
উপসংহার ঃ এমন একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করে আমি ধন্য। সর্বদাই সাত জাগে যেকোনো মূল্যে গ্রামের ঐতিহ্য বজায় রাখবো। উন্নয়নে তৎপর হব এবং সর্বপ্রকার কুপ্রভাব থেকে গ্রামটি মুক্ত রাখবো। আমাদের গ্রামটি যেন চিরদিন আদর্শ গ্রাম হিসেবে টিকে থাকে___ সৃষ্টিকর্তার নিকট এ প্রার্থনা করি।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url