ভাবসম্প্রসারণঃ অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে

ভাবসম্প্রসারণ ছবি

"অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে"

মূলভাব ঃ অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী উভয়েই সমান অপরাধে অপরাধী। সময়ের ব্যবধানে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।

সম্প্রসারিত ভাব ঃ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় মানুষের আচরণগত বিপরীতধর্মী দুটি দিক। কেউ কেউ ব্যক্তি বা সমাজ জীবনের বৃহত্তর কল্যাণ ও সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ভালো ও ন্যায় কাজ করে, আবার কেউ কেউ বিপরীতমুখী হয়। বস্তুত আমাদের সমাজে অন্যায় প্রবণ মানুষ সংখ্যায় কম হলেও তারা বৃহত্তর সুশীল সমাজকে জিম্মি করা রাখে। 

তারা অন্যকে অহেতুক উৎপীড়ন করে, অন্যের অধিকার এ অন্যায় হস্তক্ষেপ করে, উশৃঙ্খল আচরণে সামাজিক শৃঙ্খলা নস্যাৎ করে। এরা সমাজের চোখে অন্যায়কারী এবং আইনের চোখে অপরাধী। এদের অপরাধ অবশ্যই দণ্ডনীয়। কিন্তু মানুষ বিবেকবান হিসেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকারী হলেও অনেক সময় নানা কারণে দিনের পর দিন অন্যায় সহ্য করা যায়। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সৎ সাহস তাদের থাকে না।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ ভাবসম্প্রসারণঃ জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান

অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাহাদের এ প্রতিবাদীন নির্লিপ্ততা প্রকারান্তরে অন্যায়কারীকে আরো বেপরোয়া করে তোলে। দিনে দিনে বাড়ে তার শক্তি সাহস। সাধারণ মানুষ মেরুদণ্ডহীনের মতো মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হয়। জগতের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ বিধাতার প্রতিনিধি রূপে ন্যায় অন্যায় মূল্যায়নের মাধ্যমে অন্যায় কাজ ও অন্যায় চিন্তা থেকে বিরত থাকবে। ক্ষমাশীলতা মানুষের একটি মহৎ গুণ। কিন্তু ক্ষমার ও একটা বিশেষ সীমা থাকা প্রয়োজন। 

অন্যায় কারী কে ক্ষমা করার মাঝে কোনো মহত্ত্ব নেই। নেই কোনো কৃতিত্ব। যারা এদের ক্রমাগত ক্ষমা করে প্রশ্রয় দেয় তাদের অপরাধও কম নয়। কেননা অন্যায়কারীর মতোই অন্যায়কে প্রশ্রয়দানকারী সমান অপরাধে অপরাধী। মনীষী গ্যাটে বলে, “যখন তোমার পাশে কোনো অন্যায় অবিচার সংঘটিত হয়, তুমি যদি সেই অন্যায়ের বিরোধিতা না করো তাহলে তুমি তোমার কর্তব্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।”

▶▶ আরো পড়ুন ঃ লোভে পাপ পাপে মৃত্যু

মন্তব্য ঃ অন্যায়কে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করা দরকার। ক্ষমা যেখানে দুর্বলতা সেখানে অত্যন্ত কঠিন হতে হবে।

"অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে"

মূলভাব ঃ অন্যায়কারী ও অন্যায়কে নতশিরে সহ্যকারী উভয়েই সমান অপরাধী। কেউ নিজে অন্যায় না করলেই তার কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। আপ্রাণ চেষ্টা করে অন্যায়কে প্রতিহত করায় সকলের কর্তব্য।

সম্প্রসারিত ভাব ঃ প্রত্যেক মানুষেরই অন্তরে ন্যায়বোধের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রত্যেকের বিবেকের শুভ্র বেদিতে ন্যায়ের আসন পাতা। জগতের সকল কাজেই মানুষের অন্তরের এই বিবেক থেকে আসে অমোঘ নির্দেশ। মানুষকে সেই নির্দেশ পালন করতে হয়। কিন্তু ভীতি ও দুর্বলতার কারণে অনেক সময় মানুষ ন্যায়ের সেই অমক নির্দেশ পালন করতে কুন্ঠিত হয়। 

তাই মুষ্টিমেয় মানুষের অপরাধের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রয়েছে অন্যায়কে মানিয়ে চলার মন মানসিকতা। এ মানসিকতায় কতখানি ক্ষমাশীলতা, কতখানি ঔদার্য, কতখানি সহনশক্তি রয়েছে তা পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। বস্তুত মানুষ শুধু তিতিক্ষা ও করুণাবশতই অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে না; তার এ মন মানসিকতার নেপথ্যে রয়েছে এক আত্মপলায়নপর মনোভাব। নিজেকে অপরাধীর সংস্রব থেকে দূরে সরিয়ে রাখাকেই মানুষ নিরাপদ বলে মনে করে। 

ন্যায়ের নির্দেশ পালনে এ অক্ষমতার অর্থই অন্যায়কে প্রশ্রয়দান। তেমনই অন্যায়কে ক্ষমা করা বা উপেক্ষা করাও অন্যায়কে প্রশ্রয়দান করে। যার ফলে অন্যায়কারীরা আরও অন্যায় করার সাহস পায় এবং তাতে পৃথিবী থেকে ন্যায়বোধের ধারণা কমতে থাকে। কাজেই অন্যায়কারী এবং যে অন্যায় সহ্য করে তারা উভয়েই দোষী, উভয়েই শাস্তির যোগ্য। 

অন্যায় আচরণে কেউ কেউ নীরব উদাসীন দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। তাতে প্রশ্রয় পেয়ে অন্যায়কারী হয়ে ওঠে দুর্নিবার ও শক্তিশালী। অন্যায়কারী তাতে প্রশ্রয় পেয়ে নিজের আরও ক্ষমতা প্রদর্শন করে। মানুষের প্রতি অন্যায় অবিচার করে নিজের প্রভাব ও প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখতে চায়।

মন্তব্য ঃ সমাজে, অন্যায়কারী ও অন্যায় সহ্যকারী দুজনেই সমান অপরাধী। তাই সকলকে অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Anonymous
    Anonymous March 12, 2024 at 2:43 AM

    Erokom aro ki6u hole valo hoto

    • Anonymous
      Anonymous May 11, 2024 at 7:44 AM

      জীবে পেম কৰে

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url