বাংলা ২য় পত্র আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট রচনা | বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ

বিশ্ব ক্রিকেট বাংলাদেশhttps://www.futuredreamit.com/2023/08/our-village.html

আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট/বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ/তোমার প্রিয় খেলা

ভূমিকা ঃ ক্রিকেট বর্তমানে বিশ্বের একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা খেলা বলতে আজ যেন ক্রিকেটকেই বোঝে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে আজ ক্রিকেটের অবস্থান। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করে দেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল রয়েছে ক্রিকেটের গৌরবময় অনিশ্চয়তা প্রতি বলেই টানটান উত্তেজনা ও ঔৎসুক্যতা। 

দীর্ঘসূত্রতা অবিজাত্যপূর্ণ অভিজাত্যপূর্ণ সাজ-সরঞ্জাম ও রাজসিক ব্যয়-বাহুল্যের কারণে ক্রিকেটকে আবার “রাজার খেলা” বা “খেলার রাজা” ও বলা হয়ে থাকে। তবে যতই ব্যয়বহুল হোক না কেন, ক্রিকেট বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। যার মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক দেশই নতুন করে চিনে নিলো বাংলাদেশকে। টাইগারদের দল আজ ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম অভিজাত “টপ টেন”।

ক্রিকেটের উদ্ভব ইতিহাস ঃ ক্রিকেটের জন্মভূমি হচ্ছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডেই ক্রিকেটের প্রচলন ও প্রসার ঘটে। তেরশ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম অ্যাডওয়ার্ডের সময় ক্রিকেটের প্রচলন ঘটে বলে জানা যায়। তবে ১৮ শতক থেকে এ খেলা ইংল্যান্ডে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৭৬ থেকে ১৮৭৭ সালে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রথম টেস্ট খেলার মাধ্যমে ক্রিকেট বিশ্বে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সূত্রপাত ঘটে। তবে দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, ক্রিকেটের জন্ম ইংল্যান্ডে এবং ইংল্যান্ডের জাতীয় খেলা ক্রিকেট হলেও ইংল্যান্ড কখনো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারেনি।

ক্রিকেট খেলার প্রস্তুতি ঃ প্রায় সব খেলাতেই দুটি দল থাকে। ক্রিকেট তার ব্যাতিক্রম নয়। প্রতি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে। প্রতি দলে খেলা পরিচালনা করার জন্য একজন ক্যাপ্টেন বা অধিনায়ক থাকে। ক্যাপ্টেন বা অধিনায়ক কে সহায়তা করার জন্য আবার একজন করে সহঅধিনায়কও থাকে। খেলা শুরু হওয়ার আগে ক্যাপ্টেনদ্বয়ের মধ্যে টস বা লটারি হয়। টসে জয়লাভকারী অধিনায়ক নির্ধারণ করে থাকে কারা আগে ব্যাটিং বা ফিল্ডিং করবে।

▶▶আরো পড়ুন ঃ প্রবন্ধ রচনা আমাদের গ্রাম/একটি আদর্শ গ্রাম

খেলা পরিচালনা করার জন্য মাঠে দুজন করে আম্পায়ার থাকেন। বর্তমানে প্যাভিলিয়নের পাশে একজন বাড়তি আম্পায়ারও থাকেন। তাকে থার্ড আম্পায়ার বলা হয়। কোনো সমস্যা মীমাংসা করতে যদি মাঠের আম্পায়ারদের সমস্যা হয়, তবে তারা থার্ড আম্পায়ারের মতামত গ্রহণ করে থাকেন। থার্ড আম্পায়ার কম্পিউটারের মনিটরে খেলা রিপ্লে করে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।

খেলার ধরন ঃ প্রকৃতির ভিত্তিতে কয়েক শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা প্রচলিত রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে টেস্ট ম্যাচ, ওয়ান-ডে ম্যাচ, এবং টি-টোয়েন্টি খেলা। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা হচ্ছে “টেস্ট ম্যাচ” খেলা। এ প্রকৃতির ম্যাচ 5 দিন ধরে চলে। দুই দল পালাক্রমে দুবার করে চার বার ব্যাট করে থাকে। এতে ওভার সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। ওয়ান-ডে ম্যাচ নির্ধারিত ‘ওভার’ এ সীমাবদ্ধ। 

ওয়ান-ডে ম্যাচ দিবা-রাত্রিতে অনুষ্ঠিত একদিনের খেলা যা সাধারণত ৫০ ওভারে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে পরিচালনা পর্ষদ তা কমাতেও পারেন। বর্তমানে ওয়ান-ডে ম্যাচই জনপ্রিয়। তবে টি-টোয়েন্টি খেলাই আজ জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। এ ধরনের খেলায় প্রত্যেক দল ২০ ওভার করে খেলার সুযোগ পায়। প্রত্যেক দলের একবার করে খেলাকে ইনিংস বলে। তবে কারা ইনিংস নেবে তা টসে যে তার ওপরই নির্ভর করে।

ক্রিকেট ও বাংলাদেশ ঃ বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ক্রিকেটের গর্বিত অংশীদারীদের একটি স্বর্ণোজ্জ্বল নাম। বাংলাদেশে ক্রিকেটের শিকড় অতি গভীরে প্রোথিত। সেই জন্মলগ্ন থেকেই বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখে আসছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার অল্পকাল পরেই ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড বা বি. সি. সি. বি. । ১৯৯৭ সালে আই. সি. সি. ট্রফি জিতে স্বীকৃত রূপে বিশ্ব ক্রিকেটে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে স্থান পায় টাইগাররা।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেই বাংলাদেশ দল সাফল্য ও কৃতিত্বের সাথে স্কটল্যান্ড ও শক্তিধর দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে পরাজিত করে। ২০০০ সালে ক্রিকেটে টেস্ট মর্যাদা লাভসহ বিশ্বকাপ ক্রিকেট, এশিয়া কাপ ক্রিকেট এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বি.পি.এল ক্রিকেটের আয়োজন করে বাংলাদেশ। বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের নাম বিশ্ব স্বীকৃত এবং বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের কথা প্রায় ভাবাই যায় না।

আই.সি.সি ও বাংলাদেশ ঃ আই.সি.সি এর সদস্য পদ লাভ করে 1977 সালের 26 শে জুলাই এবং বাংলাদেশ দল প্রথম আই.সি.সি থেকে শুরু করে সর্বশেষ ষষ্ঠ আই.সি.সি -97 পর্যন্ত সবকটি টুর্নামেন্ট খেলে এসেছে দাপটের সাথে। ১৯৭৯ সালের প্রথম আইসিসি টুর্নামেন্টে চারটি খেলায় বাংলাদেশ দুটিতে বিজয় লাভ করে। ১৯৮২ এর দ্বিতীয় টুর্নামেন্টে নয়টি ম্যাচের দুটি পরিত্যক্ত সহ চারটি ম্যাচে বিজয়ী হয়ে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ওঠে বাংলাদেশ দল।

▶▶আরো পড়ুন ঃ ভাবসম্প্রসারণঃ কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

এছাড়াও পরবর্তীতে আরো দুই দুইবার বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে খেলে। সর্বশেষ ষষ্ঠ আই.সি.সি তে পঞ্চম বিশ্বকাপের অন্যতম তিন সেরা দল আরব আমিরাত, কেনিয়া ও ইংল্যান্ডকে অভূতপূর্ব ক্রীড়ানৈপুণ্যোর সাথে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। যারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ দল ক্রিকেট অনুরাগীদের নজর কাড়তে সমর্থ হয় এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন পূরণ করে।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ঃ ১৯৯৭ সালের আই.সি.সি-তে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্বপ্ন দেখিয়েছিল বাংলাদেশকে। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশ দল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিস, স্কটল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। 

বাংলাদেশ বিশ্বকাপে প্রথম জয় ছিনিয়ে আনে ২৪ শে মে ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত খেলায় স্কটল্যান্ড এর বিরুদ্ধে। অতঃপর ৩০ শে মে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে ৬২ রানের ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়। ২০০৭ এর বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের সাফল্য ছিল ঈর্ষণীয়। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সুপার এইটে ওটার গৌরব নিয়ে চমক সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। 

২০১১ সালের দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক দেশ সমূহের অন্যতম দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনসহ খেলায়ও বাংলাদেশ দেখিয়েছে বিশেষ নৈপুণ্য ও সাফল্য। কালের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করবেই করবে যা ক্রিকেট অনুরাগীদের দৃঢ় বিশ্বাস।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

টেস্ট ক্রিকেট ও বাংলাদেশ ঃ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের পর পরই বাংলাদেশ আই.সি.সি এর অধিবেশনে টেস্ট মর্যাদা লাভের জন্য আন্দোলন করে। পাকিস্তানের প্রস্তাবনায় এবং ভারতের সমর্থনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ে সমর্থন করলেও ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের বিরোধিতায় বাংলাদেশ সম্ভাব্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ২০০০ সালের ২৬ শে জুন। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে এক মাইলফলক ও অমূল্য প্রাপ্তি।

এশিয়া কাপ ও বাংলাদেশ ঃ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পরে সবচেয়ে বড় ক্রিকেটের আসর হচ্ছে এশিয়া কাপ ক্রিকেট। এশিয়ার ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সর্বশেষ ‘১২ এশিয়া কাপ ক্রিকেটের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। খেলায়ও বাংলাদেশের সাফল্য এবং প্রাপ্তি ছিল অনেক ও অশেষ। 

মাত্র ২ রানে পরাজিত হয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও প্রকৃত জয় ছিল বাংলাদেশেরই। শুরু থেকে ফাইনাল পর্যন্ত সবকটি ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নৈপুণ্য খেলার আমেজ এবং দর্শকদের আনন্দ ছিল অবিরাম। বর্তমান ও সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে পরপর দুটো ম্যাচে পরাজিত করে বাংলাদেশ দল যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

বি.পি.এল. আয়োজন ঃ শুধু আই.সি.সি. টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও এশিয়া কাপ আয়োজন ও নৈপুণ্য দেখিয়েই বাংলাদেশ থেমে নেই, ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বি.পি.এল. টি-টোয়েন্টি খেলা। বিভাগীয় পর্যায়ে ছয়টি দলের অংশগ্রহণে ২০১২ সালে প্রথম এ আয়োজন সম্পন্ন হয়।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১৫ রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

উপসংহার ঃ বস্তুত, বিশ্ব ক্রিকেটের নবীন শক্তি হিসেবে টাইগারদের দল ইতোমধ্যেই আত্মপ্রকাশ করেছে এবং উত্তরোত্তর সাফল্যের গৌরব ছিনিয়ে এনেছে। বাংলাদেশ লাভ করেছে বিশ্ব জনপ্রিয়তা। বিশ্বকে জয় করবে বাংলাদেশ দল সেদিন আর বেশি দূরে নয়।

সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

সবগুলো অনুচ্ছেদ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url