কিডনি ড্যামেজের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো কি কি জেনে নিন
আপনি কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি তা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি রেচন অঙ্গ হচ্ছে কিডনি যাকে বাংলায় বৃক্কও বলা হয়ে থাকে। তাই আজকে আমরা মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনির সমস্যা গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
তাহলে চলুন কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি, কিডনি রোগ কেন হয়, কিডনি রোগের কারণ, কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ, কিডনি রোগ হলে করণীয়, কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ, কিডনি রোগের প্রতিকার, কিডনি রোগের ঔষধের নাম, কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা, কিডনি রোগের চিকিৎসা, কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেই
পোস্ট সূচিপত্রঃ কিডনি রোগের চিকিৎসা - কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি জেনে নিন
কিডনি রোগ কেন হয়
মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেচন অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। কিডনিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বা বাংলায় বৃক্ক বলা হয়ে থাকে। মনুষ যে সকল প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার মধ্যে অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে কিডনি ড্যামেজ। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না। কিডনি শতকরা ৫০% ড্যামেজ না হওয়া পর্যন্ত এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। এটি একটি নীরব প্রাণঘাতী রোগ। তাহলে চলুন কিডনি রোগ কেন হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই
কিডনি রোগ কেন হয় সে বিষয়ে জানার আগে আমাদের জানতে হবে কিডনির কাজ সম্পর্কে। কিডনি মানব দেহে ছাঁকনির মতো করে কাজ করে। সারা শরীরের রক্ত পরিশোধন করে রক্তের মধ্যে থাকা দূষিত পদার্থ গুলো বের করে দেওয়ায় হচ্ছে কিডনির মূল কাজ। হৃদপিন্ড থেকে রক্ত পাম্প করে কিডনিতে প্রবেশ করে তারপর কিডনি সেসব রক্ত পরিশোধন করে পুরো শরীরে সাপ্লাই করে দেয়।
আরো পড়ুন ঃ চোখ চুলকানোর কারণ কি - চোখ চুলকানির ড্রপের নাম
এভাবে সার্বক্ষণিক দেহের মধ্যে পরিশোধন প্রক্রিয়া চলছে। এই পরিশোধন প্রক্রিয়ার ফলেই মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে। বৃক্ক বা কিডনি প্রধানত নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে নিষ্কাশন করে। আমিষ জাতীয় খাদ্য বিপাকের ফলে দেহে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য সৃষ্টি হয়। অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি মানুষের প্রধান নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য। এদের রেচন বর্জ্য বলে।
এই বর্জ্য পদার্থ গুলো রক্তের মাধ্যমে সারাদেহে প্রবাহিত হয়। এগুলো মানব দেহের জন্যে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। তাই এসব রেচন পদার্থ দেহ থেকে নিষ্কাশন করা অত্যাবশ্যক। আর এই বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ গুলো দেহ থেকে নিষ্কাশন করে দেহকে সুস্থ ও সবল রাখতে কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মানব দেহে বৃক্ক বা কিডনি যে সকল কাজ করে থাকে তা হলো ঃ i) রক্ত থেকে প্রোটিন বিপাকে সৃষ্ট নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্য অপসারণ করা। ii) দেহে এবং রক্তে পানির ভারসাম্য রক্ষা করা। iii) রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেট এবং ক্লোরাইডসহ বিভিন্ন আয়রণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা। iv) রক্ত অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা। v) যথাযথ আয়নিক ভারসাম্য রক্ষা করা। vi) হরমোন (যথা -- এরিথ্রোপয়েটিন; রেনিন; renin) ক্ষরণ করা। vii) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা। viii) দেহে প্রবিষ্ট প্রতিবিষ ও ভেষজ পদার্থসমূহকে দেহ থেকে অপসারণ করা।
এবার চলুন আমরা জেনে নেই কিডনি রোগ কেন হয় সে বিষয়ে। আজকাল কিডনি রোগ একটি কমন রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন ব্যাক্তি এই রোগে ভুগছেন। কিডনি রোগ হওয়ার পেছনে যে কারণ গুলো রয়েছে তা হলোঃ
১) বার বার মূত্র থলিতে সংক্রামনের কারণে এই রোগ হতে পারে। ২) কিডনিতে কোনো রকমের প্রাদহ হলে যেমন ঃ কিডনিতে পাথর,, । ৩) বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা নাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও এই রোগ হতে পারে। ৪) জন্মগত ভাবেও এই রোগ থাকতে পারে। ৫) অনিয়মিত জীবনযাপন করলে এবং ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার বেশি খেলেও এই রোগ হতে পারে। ৬) ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন করার ফলে এই রোগ হতে পারে। ৭) ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের সমস্যা থেকেও কিডনি রোগের আশঙ্কা থাকে।আশাকরি আপনারা সবাই কিডনি রোগ কেন হয় এবং কিডনির কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
কিডনি রোগের কারণ
কিডনি বা বৃক্ক হচ্ছে মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বৃক্ক মানবদেহের উদরগহ্বরের পিছনের অংশে, মেরুদন্ডের দুদিকে বক্ষপিঞ্জরের নিচে পিঠ সংলগ্ন অবস্থায় দুটি বৃক্ক অবস্থান করে। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিডনি রোগের করণ সম্পর্কে। তাই, কিডনি রোগের কারণ সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। বৃক্ক বিকল বা কিডনি ড্যামেজের আসল কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিন ইনফেকশন, নেফ্রাটাইটিস ও ব্যাথা নাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আমাদের দেশে এই বৃক্ক বিকলের সমস্যাটি দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন এই রোগে আক্রান্ত। তবে আমাদের দেশে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও বিভিন্ন ব্যাথা নাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এ ছাড়াও আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ যে কোনো ব্যাথায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ব্যাথা নাশক ওষুধ কিনে খেয়ে ব্যাথা প্রশমন করে এতে করে ব্যাথা নাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে কিডনি ধীরে ধীরে ড্যামেজ বা বিকল হতে শুরু করে।
কিডনি বা বৃক্কের তাৎক্ষণিক বিকলের কারণ গুলো নিচে আলোচনা করা হলো ঃ
- ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা)
- বড় কোনো ক্ষত থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে বৃক্কে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে।
- অতিমাত্রায় ডায়রিয়া ও বমির কারণে।
- শক (টিস্যুতে কম রক্ত সরবরাহ), হার্ট অ্যাটাক, অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ), ভুল রক্ত দেওয়ার জন্য, মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হওয়ায়, রক্ত প্রবাহ কমে গেলে।
- বৃক্কে পাথর, মূত্রনালিতে টিউমার বা জন্মগত ত্রুটি থাকলে, পুরুষে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে ।
- অতি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন - জেন্টামাইসিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন), ব্যাথানাশক ঔষধ ( যেমন - অ্যাসিপিরিন, আইবুপ্রোফেন), উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ( যেমন - এসিই ইনহিবিটর) সেবনের ফলে।
- বিষাক্ত পদার্থ, যেমন কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, আর্সেনিক, লেড, মার্কারি ইত্যাদি গ্রহণে।
- বৃক্কের টিস্যু ও পরিস্রাবক এককগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে।
উপরোক্ত সকল কারণ গুলোর জন্যে কিডনি বিকল বা ড্যামেজ হয়ে থাকে। আশা করি আপনি কিডনি রোগের কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
কিডনি রোগের লক্ষণ | কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি
মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেচন অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। কিডনিকে বাংলায় বৃক্ক বলা হয়ে থাকে। মনুষ যে সকল প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার মধ্যে অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে কিডনি বিকল বা কিডনি ড্যামেজ। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না। কিডনি শতকরা ৫০% ড্যামেজ না হওয়া পর্যন্ত এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। এটি একটি নীরব প্রাণঘাতী রোগ।
আরো পড়ুন ঃ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো কি কি - ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায়
সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় না তবে ধীরে ধীরে যখন কিডনি তার কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন তার লক্ষণ গুলোও প্রকাশ পেতে শুরু করে। তবে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ লোকের কিডনি বিকল বা ড্যামেজ হয়ে থাকে মূলত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাটাইটিস এই তিন রোগের কারণে। তা ছাড়া কিডনি রোগ একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা।
সবার ক্ষেত্রে এই রোগের চিকিৎসার ব্যয় পরিচালনা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। কিন্তু সচেতন থাকলে এই রোগের ঝুঁকি ৫০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই, কিডনি রোগের লক্ষণ বা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি সেই সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলের এই অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
তাহলে, চলুন জেনে নেই কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে ঃ
১) অতি অল্প, ঘন ও গাঢ় মূত্র ত্যাগ বা মূত্র একেবারেই না হওয়া।
২) রক্তে নাইট্রোজেনজাত বর্জ্য পদার্থ সঞ্চিত হওয়া।
৩) শরীর ফুলে যাওয়া (অতিরিক্ত পানি দেহে জমে যাওয়ায়)।
৪) পাঁজর ও কোমরের মাঝামাঝি দুপাশে ব্যাথা (flank pain)।
৫) ক্ষুধামন্দ্য, বমি - বমি ভাব ও বমি করা।
৬) উচ্চ রক্তচাপ।
৭) রক্ত পায়খানা।
৮) হাতে পায়ে সংবেদ কমে যাওয়া।
৯) অনেকক্ষণ ধরে হেঁচকি তোলা।
১০) ঘন ঘন শ্বাস প্রভৃতি।
১১) প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া করা।
১২) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব লাল হওয়া এবং প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া।
১৩) কোমরের দু-পাশে এবং তলপেটে প্রচন্ড ব্যাথা হওয়া।
১৪) শরীর ও মুখ ফুলে যাওয়া।
১৫) শরীরের ওজন কমতে থাকা।
১৬) শ্বাসকষ্ট হওয়া।
১৭) মাথা ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো যদি আপনার ক্ষেত্রে দেখা যায় তাহলে আপনি দ্রুত একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করুণ। লক্ষণ প্রকাশের পরও যদি আপনি চিকিৎসকের সরণাপন্ন না হন তাহলে আপনার কিডনি ড্যামেজ হয়ে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে। পাঠকগণ, আশাকরি আপনারা সবাই কিডনি রোগের লক্ষণ বা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি সেই বিষয়ে একটা সুষ্ঠু ধারণা পেয়েছেন।
কিডনি রোগের প্রতিকার | কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়
কিডনি বিকলের কারণ গুলো নিয়ে আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাও সংক্ষেপে কিছুটা বলে দি, কিডনি বা বৃক্ক বিকলের মূল কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্রাটাইটিস, কিডনিতে পাথর, ব্যাথানাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ক্যান্সার। এইসব রোগের কারণে কিডনি ড্যামেজ বা বিকল হয়ে থাকে। কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো জেনে আমরা একটু সচেতন থাকতে পারলেই এই দীর্ঘমেয়াদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষেরা কিডনি রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় জন্মগতভাবেও এই রোগ হয়ে থাকে। বৃক্ক বিকল অত্যন্ত জটিল রোগ। তাৎক্ষণিক বৃক্ক বিকল আরও জটিল বিষয়। তাই এ রোগের প্রতিকার করতে হলে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লক্ষণের দু-একটি বৈশিষ্ট্য দেখেই খাদ্য ও পথ্য বিষয়ে নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ জীবনের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে এ রোগের চিকিৎসার আরেক অর্থ হচ্ছে “অর্থ দিয়ে অনর্থ ” ডেকে আনা। তাই আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিডনি রোগের প্রতিকার | কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায় গুলো সম্পর্কে । তাহলে চলুন জেনে নেই কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায় সমূহ।
বৃক্ক বিকলের প্রতিকারে বিশেষজ্ঞরা নিচে বর্ণিত পন্থার কথা উল্লেখ করেছেন__
১) উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
২) যে পরিমাণ প্রস্রাব হয় সে পরিমাণ পানির সাথে অতিরিক্ত ৫০০ মি.লি. পানি থাকে খেতে হবে।
৩) প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি দেয়া যাবে না অর্থাৎ প্রতিদিন ৪০ গ্রাম এর বেশি নয়।
৪) দেহে দেহরস ও ইলেকট্রোলাইট এর ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৫) ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬) পঞ্চাশোর্ধ বয়সে নিজের বা পরিবারের অন্য কারো ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তাদের বৃক্ক বা কিডনি নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।
৭) ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যাথানাশক ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮) শিশুদের ক্ষেত্রে গলাব্যথা, জ্বর ও ত্বকে খোসপাঁচড়ার দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
৯) প্রস্রাবের ঘন ঘন ইনফেকশন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
১০) শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে , চর্বি জাতীয় খাবার ও বেশি লবণ যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। ফাস্ট ফুড খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে এবং বেশি করে পানি পান করতে হবে।
১১) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত হাঁটাচলা করতে হবে এবং ব্যয়াম করতে হবে।
১২) শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
১৩) খাবারের পাতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা পরিহার করতে হবে।
১৪) রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে ।
১৫) প্রতি ৬ মাস পর পর সম্পূর্ণ শরীর চেকআপ করাতে হবে।
উপরোক্ত সকল নিয়ম গুলো মেনে চলতে পারলে প্রাণঘাতী কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। আপনার যদি ইতিমধ্যে কিডনি রোগের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে আপনি আজকে থেকে এই নিয়ম গুলো মেনে চলতে শুরু করুন এবং সকল প্রকার বাজে অভ্যাস গুলো পরিহার করুন। তাহলে, পাঠকগণ আশাকরি আপনারা সবাই কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায় সমূহ জানতে পেরেছেন
কিডনি ভালো রাখতে করণীয়
এখন আমরা জানব কিডনি ভালো রাখতে করণীয় কি সেসব বিষয়ে। কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক রোগ। কিডনি রোগ নিয়ে কেবল কিডনি রোগীরাই সচেতন হলে চলবে না যে কোনো সুস্থ মানুষকেও জানতে হবে কিডনি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেই কিডনি ভালো রাখার উপায় সমূহ
১) কিডনি ভালো রাখতে নিয়মিত সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
২) শরীরের ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখুন। কারণ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কিডনি রোগের অন্যতম কারণ। ( দেহের BMI এর মান ১৮.৫ থেকে ২৪.৫ মধ্যে রাখা দরকার)
৩) প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম ও হাঁটাচলা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৪) ধূমপান, পান-জর্দা ও অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস থেকে থাকলে সেগুলো পরিহার করতে হবে।
৫) পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম যেতে হবে এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
এই সকল নিয়ম গুলো মেনে চলার মাধ্যমে আপনি আপনার কিডনি ভালো রাখতে পারবেন।
কিডনি রোগের ঔষধের নাম
কিডনি বা বৃক্ক হচ্ছে মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বৃক্ক মানবদেহের উদরগহ্বরের পিছনের অংশে, মেরুদন্ডের দুদিকে বক্ষপিঞ্জরের নিচে পিঠ সংলগ্ন অবস্থায় দুটি বৃক্ক অবস্থান করে। বৃক্ক বিকল বা কিডনি ড্যামেজের আসল কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিন ইনফেকশন, নেফ্রাটাইটিস ও ব্যাথা নাশক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কিডনি শতকরা ৫০% ড্যামেজ না হওয়া পর্যন্ত এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। এটি একটি নীরব প্রাণঘাতী রোগ।
বর্তমানে বাজারে ফার্মেসির দোকানে বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগের ঔষধ পাওয়া যায়। কিন্তু এই ঔষধ গুলো কিডনি রোগ প্রতিরোধে ১০০% কার্যকর কিনা তা আমাদের জানা নেয়। তবে স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েব সাইটে কিডনি রোগের কয়েকটি ওষুধের নাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাই, আজকে আমরা আপনাদের সাথে সেই ঔষধ গুলোর নাম শেয়ার করার চেষ্টা করব। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন যে কোনো রোগের ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তাহলে, চলুন জেনে নেই কিডনি রোগের ঔষধের নাম সমূহ
✓[বিঃদ্রঃ নিচে দেওয়া কিডনি রোগের সকল ঔষধ সমুহ সেবন করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করবেন।]
কিডনি রোগের ঔষধের নাম সমূহ হলো ঃ
- Losartan
- Amlodipine
- Ramipril
- Furosemide
- Spironolactone
- Calcium Acetate
- Sevelamer Hydrochloride
- Alfacalcidol
- Erythropoietin
- Iron
কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা
আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে আপনি কোন ধরনের খাবার গ্রহণ করছেন এবং কোন ধরনের পানীয় পান করছেন সেটা আপনার পর্যালোচনা করা দরকার। কারণ আপনার কিডনি আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য পদার্থকে অপসারণ করে থাকে কিন্তু আপনি যদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে আপনার কিডনি সেভাবে আপনার শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থকে অপসারণ করতে পারবে না যে ভাবে এটির বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করার কথা ছিল।
বৃক্ক বা কিডনি প্রধানত নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ দেহ থেকে নিষ্কাশন করে। আমিষ জাতীয় খাদ্য বিপাকের ফলে দেহে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য সৃষ্টি হয়। অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি মানুষের প্রধান নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য। কিন্তু, একজন অসুস্থ ব্যক্তির কিডনি এই সব বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে সম্পূর্ণ অপসারণ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা পর্যালোচনা করা খুবই জরুরী। তাহলে চলুন জেনে নেই কিডনি রোগের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে
কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা ঃ
কিডনি রোগী যেসব ফল খেতে পারবেন ঃ পেয়ারা, আপেল, নাসপাতি, পাকা পেঁপে, কমলা আনারস ও বেল ( প্রতিদিন যে কোনো এক প্রকারের ফল ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম খেতে পারবেন)
যে সকল সবজি খেতে পারবেন ঃ ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পটল, চালকুমড়া, ডাটা, লাউ এবং শসা।
যে সকল শাক খেতে পারবেন ঃ ডাটা শাক, লাউ শাক, কলমি শাক ও লাল শাক।
যে সকল সবজি সিদ্ধ করে রান্না করে খাওয়া যাবে ঃ মিষ্টি কুমড়া, আলু, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা কলা, করলা, গাজর, টমেটো ও মূলা।
সে সকল সবজি ও শাক খেতে পারবেন না ঃ সজনে ডাটা, ঢেড়শ, বরবটি, কচু, মিষ্টি আলু, পালং শাক, পুঁই শাক ও ধনে পাতা।
যে সকল ফল গুলো খেতে পারবেন না ঃ কলা, কামরাঙা, আনার, লেবু , আমড়া, বড়োই, পাকা আম ও কাঠাল।
এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ডাল, শুখনা ফল, বাদাম, কাজু বাদাম, গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, মহিষের মাংস, সামুদ্রিক মাছ, সামুদ্রিক মাছের ডিম, চিংড়ি ইত্যাদি সকল খাদ্য বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার এবং বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড খাবারও বাদ দিতে হবে (যেমনঃ চিপস, বার্গার, আচার, কোমল পানীয় ইত্যাদি)। যাদের ধুমপান, পান-জর্দা ও অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস আছে সেগুলোও পরিহার বা বর্জন করতে হবে।
কিডনি রোগের চিকিৎসা
কিডনি রোগ একটি নিরব ঘাতক রোগ। এ রোগের ঝুঁকি এড়াতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম করা ও সক্রিয় থাকা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকার ঔষধ সেবন না করা। তা ছাড়া আমাদের দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়।
অর্থাৎ কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা থেকে ব্যাহত হয়ে পড়ে। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। কিডনি ড্যামেজ হলে অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও পরিবর্তন করা জরুরি। কিডনি আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেচন অঙ্গ। যেটা আমাদের শরীর থেকে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সময়মতো কিডনি রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা না করা হলে এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। পাঁচটি ধাপের মাধ্যমে কিডনি বিকল বা ড্যামেজ হয়ে থাকে। প্রথম চারটি ধাপ পর্যন্ত চিকিৎসা এবং বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে এই রোগ অনেকটা নিরাময় করা সম্ভব হয়। তবে একবার যদি এই রোগটি পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত চলে যায় তাহলে এটি নিরাময় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। তখন বেঁচে থাকার মূল উপায় হলো ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন।
তা ছাড়া ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি। আমাদের দেশের শতকরা প্রায় ১০ ভাগ লোকের পক্ষে এই ধরনের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এমনকি এই রোগের শেষ পরিণতি হতে পারে মৃত্যু। তাই এই নীরব ঘাতক ব্যাধি থেকে একমাত্র বাঁচার উপায় হলো কিডনি বিকলতা প্রতিরোধ করা।
কিডনি রোগ নিয়ে প্রশ্ন?
অনেকেই কিডনি রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। আপনারা চাইলে কিডনি রোগ সম্পর্কিত যে কোনো প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আমাদের সার্ধ্য মতো আপনাদের সহযোগীতা করার চেষ্টা করব।
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি তা নিয়ে শেষ কথা
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি এই আর্টিকেলের মধ্যে আমরা কিডনি রোগ কেন হয়, কিডনি রোগের কারণ, কিডনি রোগের লক্ষণ, কিডনি ভালো রাখতে করণীয়, কিডনি রোগের প্রতিকার, কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়, কিডনি রোগের ঔষধের নাম, কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা, কিডনি রোগের চিকিৎসা এই সকল বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি এই পোস্টটি পড়ার মধ্য দিয়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও কিডনি ড্যামেজর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন ধন্যবাদ সবাইকে।
আরো বিস্তারিত জানতে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url