আসল মধু চেনার উপায় - 100% Real Honey
আমরা কম বেশি সবাই জানি মধু একটি উপকারী খাদ্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মধুর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এছাড়াও মধুতে রয়েছে নানান রকমের ঔষধি গুণ। ত্বকের যত্নে ও ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মধু অনেক ভালো কাজ করে। মধুতে রয়েছে প্রায় ৪৫ টি খাদ্য উপাদান। ফুলের পরাগরেণু থেকে যে মধু পাওয়া যায় সেই মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশ মল্টোজ। তবে মধুতে কোন প্রকার চর্বি বা প্রোটিন থাকে না। প্রতি ১০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮.৮ ক্যালরি তার মানে প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ আসুন জেনে নেই আসল মধু চেনার উপায়
পানি দিয়ে মধুর পরীক্ষা পদ্ধতি ঃ
প্রথমে এক গ্লাস পানি নিবেন। সেই এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ মধু দিবেন। তারপর আস্তে আস্তে গ্লাসটি নাড়া দিবেন। গ্লাস নাড়া দেওয়ার পর যদি দেখা যায় মধু পানির সাথে মিশে যাচ্ছে তাহলে বুঝে নিন মধুটি নকল। আর যদি দেখা যায় মধু গ্লাসের নিচে তলানি আকারে জমে আছে তাহলে বুঝবেন মধুটি আসল/খাঁটি।
সাদা কাপড় দিয়ে মধুর পরীক্ষা পদ্ধতি ঃ
প্রথমত এক টুকরো সাদা কাপড় নিন। তারপর সেই সাদা কাপড়ের উপর অল্প কিছু মধু লাগিয়ে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা রোদে রেখে শুকাতে দিন। কাপড়ের উপর মধুগুলো শুকিয়ে গেলে এবার কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন এবং দেখুন কাপড়ে কোন দাগ লেগে আছে কিনা। যদি দাগ লেগে থাকে তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি আর যদি দাগ না লেগে থাকে তাহলে বুঝবেন মধুটি নকল।
ভিনেগার দিয়ে মধুর পরীক্ষা পদ্ধতি ঃ
এই পদ্ধতিতে মধু পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে নিতে হবে এক টেবিল চামচ মধু, হাফ গ্লাস পানি এবং কয়েক ফোঁটা ভিনেগার। এবার এক টেবিল চামচ মধু হাফ গ্লাস পানিতে দিন এবং তাতে কয়েক ফোঁটা ভিনেগার মিশিয়ে দিন। এখন গ্লাসটিকে আস্তে আস্তে নাড়া দিন এবং লক্ষ্য করেন মিশ্রনে কোন ফেনা দেখা যাচ্ছে কিনা। যদি ফেনা দেখা যায় তাহলে বুঝবেন মধুটি নকল আর যদি ফেনা দেখা না যায় তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি।
ডিপ ফ্রিজে রেখে মধুর পরীক্ষা পদ্ধতি ঃ
আমরা সবাই জানি ডিপ ফ্রিজে যে কোন কিছু রাখলে তা একদিনের মধ্যে জমে বরফ হয়ে যায়। তাই আজকে আমরা মধু আসল নাকি নকল তা পরীক্ষা করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখব। মধু আসল নাকি নকল তা পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে একটি সাদা কোটার মধ্যে অল্প কিছু মধু নিতে হবে। তারপর সেই কোটা ডিপ ফ্রিজে একদিনের জন্য রেখে দিতে হবে এবং পরের দিন বের করে দেখতে হবে মধু জমে গেছে কিনা। যদি দেখা য়ায় মধু ডিপ ফ্রিজে রাখার পরও জমে নাই তাহলে বুঝবেন সেটি আসল মধু আর যদি দেখেন ডিপ ফ্রিজে রাখার পরেও মধু পুরোপুরি বা আংশিক অংশ জমে গেছে তাহলে বুঝবেন মধুটি নকল।
তাপমাত্রার মাধ্যমে মধুর পরীক্ষা পদ্ধতি ঃ
আপনি যদি মধুতে তাপ প্রয়োগ করেন আর তা যদি খাঁটি বা আসল মধু হয় তাহলে সেটি কেরামেলের মতো হয়ে যাবে। এটা ফোমের মতো ফেনিল হবে না। আর আপনি যদি নকল বা ভেজাল যুক্ত মধুতে তাপ প্রয়োগ করেন তাহলে দেখবেন সেটি কেরামেলর মতো ফেটে ফেটে যাবে না এতে শুধু বুদবুদ উঠবে। এতে করেই আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোনটি আসল/খাঁটি আর কোনটি নকল/ভেজাল যুক্ত মধু।
মধুর অগ্নিপরীক্ষা পদ্ধতি ঃ
মধুর অগ্নি পরীক্ষা করার জন্য আপনি একটা দেশলাইয়ের কাঠি নিন। তারপর সেই কাঠির ওপর কিছুটা মধু লাগিয়ে নিন। এখন কথা হচ্ছে মধুর অগ্নি পরীক্ষা করার মাধ্যমে আপনি তিন ধরনের ফলাফল পেতে পারেন। চলুন আমরা তিন ধরনের ফলাফল কি কি দেখে নিই।
প্রথম ফলাফল ঃ আপনি মধু লাগানো দেশলাইয়ের কাঠিতে যখন আগুন লাগাবেন তখন দেখবেন আগুন জ্বলছে কিন্তু কোন প্রকার পটপট শব্দ হচ্ছ না তাহলে বুঝবেন সেটি ১০০% খাঁটি মধু।
দ্বিতীয় ফলাফল ঃ মধু যুক্ত দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন লাগানোর পর দেখবেন আগুন জ্বলছে কিন্তু মাঝে মাঝে একটা পটপট শব্দ হচ্ছে তাহলে বুঝে নিবেন মধুতে সামান্য পরিমাণ পানি যুক্ত করা আছে। (মোটামুটি গ্রহণযোগ্য)
তৃতীয় ফলাফল ঃ মধু যুক্ত দেশলাইয়ের কাঠিতে আগুন লাগাতে গিয়ে দেখবেন কাঠিতে কিছুতেই আগুন লাগছে না বা কাঠিটা জ্বলছে না। তার মানে হল এটি একেবারেই নকল বা ১০০% ভেজালযুক্ত মধু।
(একটা কথা না বললেই নয়, মধু আসল নাকি নকল তা পরীক্ষা করার জন্য মধুর অগ্নি পরীক্ষা পদ্ধতিটাই ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম এবং এতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফলাফল ও নিশ্চিত করা যায়)
ব্লটিং পেপার দিয়ে মধুর পরীক্ষা পদ্ধতি ঃ
একটি ব্লটিং পেপার নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা মধু দিন এবং লক্ষ্য করুন যদি ব্লটিং পেপার মধুটি তার মধ্যে শুষে নেয় তাহলে বুঝবেন মধুটি নকল আর যদি ব্লটিং পেপার মধু শুষে নিতে না পারে তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি/আসল।
আসল মধু চেনার উপায় নিয়ে শেষ কথাঃ
উপরোক্ত সকল পরীক্ষা করার মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারবেন আপনি যে মধুটি কিনেছেন সেটি আসল নাকি নকল। আর, আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনার উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url