কু-সংস্কার কী? আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কারের তালিকা
বিস্তারিত জানতে এখানে চাপ দিন
আজকে আমরা এই পোস্টের মধ্যে যে সকল বিষয় বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল কুসংস্কার কি? এবং আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার যা আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে এখনও পর্যন্ত রীতিমতো পালন করে যাচ্ছি।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক ইনফরমেটিভ এবং আপনি যদি এই পোস্টটি ভালো ভাবে পড়েন তাহলে আপনি জানতে পারবেন কুসংস্কার কি? এবং আমাদের সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার গুলো সত্য নাকি মিথ্যা। তাছাড়া আপনি যদি আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে কুসংস্কার নিয়ে আপনার মনে আর কোন দ্বিধা থাকবে না বলে আমি মনে করি।
তাহলে আর দেরি কেন চলুন শুরু করা যাক আমাদের আজকের টপিক কুসংস্কার কী? এবং আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ
কুসংস্কার কী?
কুসংস্কার শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ হলো কু+সংস্কার=কুসংস্কার। "কু" এর অর্থ "খারাপ" আর "কুসংস্কার" এর অর্থ "রীতি"। সুতরাং, কুসংস্কার শব্দের অর্থ হলো খারাপ রীতি। আমাদের সমাজে সেই পূর্বপুরুষদের কাল থেকে মুখে মুখে প্রচলিত খারাপ বা মিথ্যা রীতি গুলোই হচ্ছে কুসংস্কার যা আজও অতি বিশ্বাসের সাথে পালন করা হয়।
কেন আমরা কুসংস্কার থেকে মুক্ত হবো?
কুসংস্কার মানে হলো মিথ্যা বা খারাপ রীতি।আর মিথ্যা রীতিনীতি কখনো মানুষের কাজে আসে না। মিথ্যা কোন কিছু লালন করাও ক্ষতিকর। কারণ এই মিথ্যা রীতিনীতি গুলো লালন করার মধ্যে দিয়ে আমাদের জীবনে নেমে আসতে পারে নানান রকমের অশান্তি। এইগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।এই ধরনের ভুল বিশ্বাস গুলো আমাদের সমাজ, পরিবার এবং ব্যাক্তি জীবনের জন্য ক্ষতিকর।তাই এই ধরনের খারাপ রীতি বা কুসংস্কার থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে এবং অন্যকে ও মুক্ত করতে হবে।
আদৌ কি কুসংস্কারের কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে?
আমাদের সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার গুলো নিয়ে আপনারা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? কেন আমরা যুগের পর যুগ এই প্রথা বা কুসংস্কার গুলো লালন করে যাচ্ছি? আদৌ কি এই কুসংস্কারের কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে? তাহলে চলুন, কুসংস্কারের আদৌ কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে কিনা আমরা তা জানার চেষ্টা করি। কুসংস্কার মানে হলো মিথ্যা রীতি বা খারাপ রীতি। কুসংস্কার হলো মানুষের অযৌক্তিক যেকোনো বিস্বাস বা অভ্যাস। আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার এর কারনে আমাদের অনেক সময় পিছিয়ে পড়তে হয়। আসলে সত্যি বলতে এই কুসংস্কারের আদৌ কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন বিধি তৈরি করেছেন, যা পরবর্তীতে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে।
এবার চলুন আমরা কয়েকটি কুসংস্কারের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেখি।
ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা : ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখলে নাকি বাড়ির অমঙ্গল হয়, অসুস্থ হতে পারে আপনার প্রিয়জন। এটি একটি রীতিমতো প্রচলিত একটা কুসংস্কার যা আপনি ইতোমধ্যে জানেন। কিন্তু কখনও কি জানার চেষ্টা করেছেন এই অলৌকিক বিষয়টা আমাদের লালন করা উচিত কিনা? তাহলে শুনুন, এই কথাটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল ভাঙ্গা আয়না বাড়িতে রাখা ভালো না কারণ ভাঙ্গা আয়না বাড়িতে রাখলে যে কোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে যার ফলে দূর্ঘটনার শ্বীকার হতে পারেন আপনি বা আপনার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু, এই বিষয়টা আমরা সহজ ভাবে না নিয়ে রূপ দিয়েছি কুসংস্কার নামক এক অলৌকিক ঘটনায়।
যাত্রা পথে বিড়াল রাস্তা কাটলে : আমাদের পূর্বপুরুষেরা কালো বিড়ালকে শয়তানের রুপ বলে মনে করতেন। তাই ভারতীয় মহাদেশে কেউ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিড়াল দেখলে থমকে দাঁড়ান। অনেক গাড়ি চালক ও রীতিমতো এই নিয়ম মেনে থাকেন তাঁরাও গাড়ি চালানোর সময় রাস্তায় কোন বিড়াল রাস্তা পাড় হতে দেখলে গাড়ি থমকে দেন এবং মনে করেন যাত্রা পথে বিড়াল রাস্তা কাটলে নাকি যাত্রা অশুভ হয়, ঘটতে পারে বিপদ। আসলে কি এই কথা সত্য? চলুন এই কথার আসল রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করি।
তাহলে শুনুন এই কথাটির আসল সত্য (বৈজ্ঞানিক প্রমাণে যা বলে) হল বিড়ালকে তাড়া করে বড় কোনও পশু যার কারণে বিড়াল হঠাৎ করে গাড়ি বা মানুষের সামনে এসে পড়ে ফলে যাত্রা পথে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা যার ফলে রাস্তায় কোন বিড়াল রাস্তা পাড় হতে দেখলে গাড়ি চালক গাড়ি হালকা স্লো করে বা থামিয়ে দেন যাতে করে দূর্ঘটনা এড়ানো যায়।
গভীর রাতে পেঁচার ডাক : গভীর রাতে পেঁচা ডাকলে নাকি গৃহস্থের অমঙ্গল হয়, পরিবারে নেমে আসতে পারে অশান্তি। কিন্তু আপনি একটা বিষয় চিন্তা করে দেখুন পেঁচা দিনের চেয়ে রাতে বেশি দেখা যায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে পেঁচা রাতের বেলায় ডাকে, কারণ রাতে ইঁদুর ধরার জন্য পেঁচা মাটিতে নেমে আসে এবং ডাকে। তাই গভীর রাতে পেঁচার ডাক অলৌকিক কোন বিষয় নয় এটি অতি সাধারণ এবং স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
টিকটিকি গায়ে পড়লে নাকি মৃত্যু হয় : এইরকম একটা কথা আমাদের সমাজে রীতিমতো প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এই কথার পিছনে যুক্তি দিয়ে বলতে গেলে টিকটিকি একটি বিষাক্ত প্রাণী।এটি যেকোন সময় আমাদের গাঁয়ের ওপর পড়ে কামড় দিতে পারে এবং ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
পিছন থেকে ডাকা মানেই অশুভ : যাত্রা করার সময় কেউ পিছন থেকে ডাকলে তাকে অশুভ বলে মনে করা হয়, এতে করে নাকি যাত্রা পথে বিপদ ঘটতে পারে। তবে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল যাত্রা পথে কেউ পেছন থেকে ডাকলে অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ফলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এই জন্যই যাত্রা পথে পিছন থেকে ডাকতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু এই কথাটি আমরা যুক্তি দিয়ে চিন্তা না করে মনে করি এটা একটা অলৌকিক ঘটনা।
রাতে ফুল না ছেঁড়া : আমরা সবাই এই কথা শুনেছি যে রাতে ফুল ছিঁড়লে নাকি বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে বা বাড়ির অমঙ্গল হয়। কিন্তু এই কথার পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল রাতে ফুল গাছে নানান রকেমর বিষাক্ত কীট পতঙ্গ থাকে।যার ফলে রাতে ফুল ছিড়তে গেলে বিষাক্ত কীট পতঙ্গের কামড়ের আশংকা থাকে। তাই রাতে গাছে হাত দিতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টি আমরা একটা কুসংস্কারে পরিণত করে রেখেছি।
আমাদের সমাজে প্রচলিত আরও কিছু কুসংস্কার যেগুলো আমরা আজও বিস্বাস করি।
- পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম/কলা খাওয়া যাবে না, তাহলে পরীক্ষায় ডিম/কলা পাবে (ফেল করবে)।
- নতুন বউকে কোলে করে ঘরে আনতে হবে, আর কোলে নিবেন দুলাভাই।
- দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নেই, এতে করে নাকি দোকানে সারাদিনের বেচা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।
- নতুন বউকে শশুর বাড়িতে নরম জায়গায় বসতে দিলে বউয়ের মেজাজ নরম থাকে।
- বিড়াল মারলে আড়াই কেজি লবণ দিতে হবে।
- ঔষধ খাওয়ার আগে "বিসমিল্লাহ"বললে রোগ বেড়ে যাবে।
- জোড়া কলা খেলে সন্তান জোড়া জন্ম নিবে।
- রাতে নক, চুল ইত্যাদি খাটতে নাই।
- ভাই-বোন মিলে মুরগী জবেহ করা যাবে না।
- ঘরের ময়লা রাতে বাইরে ফেলা যাবে না।
- ঘর থেকে কোন উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর পিছন থেকে ডাক দিলে নাকি যাত্রা অশুভ হয়।
- ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হবে।
- ছোট বাচ্চাদের দাঁত পড়লে তা ইঁদুরের গর্তে ফেলতে হয় এবং ফেলার সময় বলতে হয়,"ইঁদুর ভাই","ইঁদুর ভাই", তোমার চিকন দাঁতটা আমাকে দাও আর আমার মোটা দাঁতটা তুমি নাও।
- রাতে বাঁশ কাটা যাবে না।
- ঘর থেকে কোন উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় বিধবা নারী বা খোলা চুলে নারী দেখলে যাত্রা অশুভ হয়।
- ঘরের চৌকাঠে বসা যাবে না।এতে করে ঘরের অমঙ্গল হবে।
- ডান হাতের তালু চুলকালে নাকি টাকা আসবে, আর বাম হাতের তালু চুলকালে নাকি টাকা চলে যাবে।
- শনি, মঙ্গলবার নতুন কাপড় পরিধান করা যাবে না।
- বৃষ্টির সময় রোদ দেখা দিলে বলা হয় শিয়ালের বিয়ে।
- খাওয়ার সময় যদি গা মোচড় দেয়, তবে বলা হয় খাবার কুকুরের পেটে চলে যায়।
- গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতে নাই।
- পাতিলের মধ্যে খাবার থাকা অবস্থায় তা খেলে পেট বড় হয়ে যাবে।
- হলুদ পাখি ডাকলে বলা হয় ইষ্টি কুটুম (মেহমান আসবে)
- হাত থেকে প্লেট বা চিরুনি পড়ে গেলে আত্নীয় স্বজন আসবে না মেহমান আসবে।
- একজন অন্য জনের মাথায় টোকা খেলে দ্বিতীয় বার টোকা দিতে হবে, একবার টোকা খাওয়া যাবে না। নতুবা মাথায় শিং উঠবে।
- হঠাৎ বাম চোখ কাপলে দুঃখ আসে।
- মেয়েদের দাঁতে ফাঁক থাকলে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
- পায়ে তিল থাকলে বিদেশ ভ্রমন করে।
- মেয়েদের পিঠে তিল থাকলে স্বামীর হাতে মার খেতে হয়।
পরিশেষে ঃ
পরিশেষে আমি একটা কথাই বলব,যে বিষয় গুলো আমাদের জীবনে ভিত্তি হীন বা যে বিষয় গুলোর আজ পর্যন্ত ও কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় নাই সেসব বিষয় আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত।এর কারণ হচ্ছে আমরা বাস্তবতা থেকে অলৌকিক যে কোন কিছুকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা এমন একটা অলৌকিক ধারণা নিজের মনের মধ্যে গেঁথে রাখি যার কোন বাস্তব রুপ নেই। অনেক সময় দেখা যায় আমরা এই অলৌকিক বিষয় গুলোকে মানতে গিয়ে নিজের অনেক ক্ষতি করে বসি। সুতরাং, আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো ভাবে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে কুসংস্কার কি এবং এই বিষয়ে আপনি একটা সুষ্ঠ ধারনা পেয়েছেন বলে আমি মনে করি। আর হ্যাঁ, আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে আপনার কাছে আমার ছোট্ট একটা প্রশ্ন:(প্রশ্নটা হচ্ছে, এই আর্টিকেলটি পড়ার মধ্যে দিয়ে আপনি কি বুঝলেন আদৌ আমাদের জীবনে এই কুসংস্কার নামক অলৌকিক বিষয় বস্তুর কোন প্রয়োজন আছে কি? অবশ্যই আপনার ব্যাক্তিগত মতামতটি আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। আর এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনার বন্ধু বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন ধন্যবাদ।
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url